Thank you for trying Sticky AMP!!

মাস্ক নিয়ে যৎকিঞ্চিৎ

করোনাকালে বিশ্বে সর্বাধিক আলোচিত শব্দের অন‍্যতম একটি হচ্ছে ফেস মাস্ক। এই মাস্ক নিয়ে বিশ্বে ঘটে চলেছে বিভিন্ন তেলেসমাতি। মাস্কের উচ্চারণ নিয়েও আছে নানা সমস‍্যা। অনেক শিক্ষিত বাঙালিও ‘মাক্স’ উচ্চারণ করে থাকেন। ফেসবুকে পেলাম, স্ত্রী তাঁর স্বামীকে বাজার থেকে মাস্ক নিয়ে আসতে বললে স্বামী নাকি মাছ নিয়ে আসেন। এ নিয়ে বাধে হুলুস্থুল কাণ্ড। আবার পাত্রের মুখের মাস্ক খোলার পর বিয়ে ভেঙে গেছে, এমন ঘটনাও তো আছে! বিয়ের জন‍্য পাত্র দেখা প্রায় শেষ পর্যায়ে; বিয়ের দিন–তারিখ নিয়ে কথা চলছে; এমন সময় পাত্রীপক্ষের একজনের মনে হলো মাস্ক খুলে পাত্রের বদনখানি দেখা দরকার। স্বাস্থ্যসচেতন পাত্রের সামনের পাটির দুটি দাঁত অতিরিক্ত বড় ও ফাঁকা থাকার কারণে পরে ওই বিয়েই ভেঙে যায়। ইদানীং তরুণেরা কিন্তু অনেক সচেতন। কারও ওপর ক্রাশ খাওয়ার আগে নাকি কৌশলে মাস্ক খুলে দেখে নেন।
প্রায় দেড় বছর যাবৎ আমরা মাস্ক পরছি। এরই মধ‍্যে আমার দুই বছরের ছেলে বুঝে গেছে, ঘরের বাইরে গেলে যেমন প‍্যান্ট-গেঞ্জি পরতে হয়, তেমনি মাস্কও পরিধান করতে হয়।

এই মাস্কের রয়েছে বহুবিধ ব‍্যবহার। বিশেষ করে ললনাদের অনেকেই ইতিমধ্যে মাস্ককে ফ‍্যাশনে পরিণত করে ফেলেছেন। পোশাকের সঙ্গে এমনকি গায়ের রঙের সঙ্গে ম‍্যাচিং করে তাঁরা মাস্ক ব‍্যবহার করছেন। মাস্ক কেউ শুধু মুখে পরেন, কেউ আবার পরেন নাকে। পকেটে রাখেন অনেকে। মাথার সামনে, পেছনে এমনকি বেশির ভাগের থুতনিতেই শোভা পায় মাস্ক।

মাস্ক এখন অনেকটা মোটরসাইকেলের হেলমেটের মতো। হেলমেট না পরলে যেমন আক্কেল সেলামি গুনতে হয়, একইভাবে মাস্ক না পরলে পুলিশের খপ্পরে পড়তে হয়। এ জন‍্য ঢাকা শহরের রাইড শেয়ারিং বাইকাররা নাকি সব সময় সঙ্গে কিছু মাস্ক রাখেন। ৪–৫টা মাস্ক হলে নাকি ৫০–৬০ জনকে নিয়ে রাইড শেয়ার করা যায়। এখন সিদ্ধান্ত আপনার, নিজের সঙ্গে রাখবেন নাকি বাইকারেরটাই পরবেন।

আবার মাস্ক না পরার জন‍্য কত যে বাহানা, তা–ও আমাদের জানা আছে। পান খেলে করোনা হয় না, তাই মাস্ক পরার দরকার কী! কিছু বকধার্মিকের যুক্তি শুনলে আরও অবাক হতে হয়। ধর্ম পালনের সঙ্গে মাস্ক না পরার যোগসূত্র দিয়ে কেউ কেউ যুক্তি দাঁড় করান। অর্থাৎ নিজেদের সুবিধামতো ধর্মও ব‍্যবহার করা আরকি!

এখানে ব‍্যবসায়ীরাও বাদ যাবেন কেন? এ সুযোগে করোনার শুরুতে মাস্কের দাম বাড়িয়ে ফায়দা লুটে নিতে একটুও ভুল করেননি তাঁরা।

অবশ‍্য বিভিন্ন সময় মাস্ক নিয়ে কর্তাব্যক্তিদের নানা রকম বাণীতেও আমরা বিভ্রান্ত হয়েছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুরুতে বলেছিল, সুস্থ মানুষের মাস্ক পরার প্রয়োজন আছে, এ সম্পর্কে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সংস্থাটির পরিচালক বলেন, ‘শুধু মাস্ক কখনো আপনাকে কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত রাখবে না।’ কিছুদিন পর সংস্থাটি আবার বলছে, মাস্ক পরলে জীবাণু বহণকারী ড্রপলেট থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে তাদের গবেষণায় পাওয়া গেছে।

এরপর বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এল যে করোনা বাতাসে ছড়ায়। ঘরে বসে থাকলেও করোনা হতে পারে! এসব নানাবিধ বাণী আমাদের মতো আমজনতাকে মাস্কের বিষয়ে আরও সন্ধিগ্ধ করে তুলেছে।

মাস্ক নিয়ে যেমন অনেক রসাল কথা শুনতে পাই, তেমনি এটাও সত‍্য যে মাস্ক মানুষের অনুভূতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করার এক দারুণ অস্ত্র, যা লুকিয়ে রেখেছে লাখো মানুষের দুঃসহ অনুভূতি।

অকিঞ্চিৎকর এই লেখা শেষ করছি কবি জসিমউদ্‌দীনের বিখ‍্যাত ‘আসমানী’ কবিতার প্রথম কয়েকটি লাইনের প‍্যারোডি দিয়ে:
করোনা থেকে বাঁচতে যদি তোমরা সবে চাও,
ঘরের বাইরে সব সময়ই মাস্ক পরে যাও।
হেলা নয় নিয়ম করে মাস্ক পরো জানি,
একটুখানি অসাবধানতায় করোনার হাতছানি।
স্বাস্থ্যবিধি মানলে পরে করোনা যাবে সরে,
ধরিত্রী হবে করোনামুক্ত শুধু তারই তরে।