Thank you for trying Sticky AMP!!

আর্নেস্ট হেমিংওয়ের অপ্রকাশিত গল্প 'আনন্দের সাধনা'

আর্নেস্ট হেমিংওয়ে

কলজয়ী কথাসাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের একটা অপ্রকাশিত গল্প পাওয়া গেছে সম্প্রতি। গল্পের নাম ‘দ্য পারস্যুট অব হ্যাপিনেস’ (বাংলায় ‘আনন্দের সাধনা’)। বোস্টনের জন এফ কেনেডি গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালায় থেকে পাওয়া এ গল্পটি ‘দ্য নিউইয়র্কার’ সাময়িকীর ১ জুন ২০২০ সংখ্যায় প্রকাশ পায়। একই সঙ্গে গল্পটি কীভাবে পাওয়া গেল এবং কোন প্রেক্ষিতে এটি লেখা হয়েছিল সে প্রসঙ্গে ‘নিউইয়ার্কার’ সাময়িকীর ফিকশন সম্পাদক দেবোরা ট্রিসম্যানের নেওয়া হেমিংওয়ের পৌত্র, বর্তমানে নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন জাদুঘরের গ্রিক ও রোমান আর্ট কিউরেটর শন হেমিংওয়ের (হেমিংওয়ে ও দ্বিতীয় স্ত্রী পলিন ফেইফারের পুত্র গ্রেগরির ছেলে) একটি সাক্ষাৎকারও সেখানে প্রকাশিত হয়। অন্য আলো ডটকমের পাঠকদের জন্য ওই গল্প ও সাক্ষাৎকারটির অনুবাদ এখানে পত্রস্থ হলো। অনুবাদ করেছেন ফারুক মঈনউদ্দীন। 

আনন্দের সাধনা
আর্নেস্ট হেমিংওয়ে

সে বছর আমরা এক মাস ধরে কিউবার উপকূলে মার্লিন মাছ ধরার পরিকল্পনা করি। মাসটা শুরু হয়েছিল এপ্রিলের দশ তারিখে এবং মে মাসের দশ তারিখের মধ্যে আমাদের বোট ভাড়ার মেয়াদ শেষ হতে আমরা পঁচিশটা মার্লিন পাই। সে সময় যা করার কথা, সেটা ছিল কী ওয়েস্টে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিছু উপহার কেনা, পাড়ি দেওয়ার জন্য যা দরকার, তার চেয়ে বেশি পরিমাণে কিছুটা দামি কিউবান জ্বালানি অ্যানিটায় ভর্তি করে নেওয়া, ক্লিয়ারেন্স নেওয়া এবং তারপর বাড়ি ফেরা। কিন্তু বড় মাছগুলো তখনো আসতে শুরু করেনি।

হোসি সাহেব জিজ্ঞেস করেন, ‘এটা নিয়ে আর এক মাস চেষ্টা করে দেখবেন নাকি, ক্যাপ?’ অ্যানিটা তাঁরই বোট, দৈনিক দশ ডলারে ভাড়া দিচ্ছিলেন ওটা। সে সময় চলতি হারে ভাড়া ছিল দৈনিক পঁয়ত্রিশ ডলার। ‘আপনি যদি থাকতে চান, তাহলে কমিয়ে নয় ডলার করে দিতে পারি।’

‘আমরা নয় ডলার কোথায় পাব?’

‘যখন পাবেন তখন দিলেই চলবে। খাঁড়ির ওপারে বেলটে স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কোম্পানির সঙ্গে আপনার ভালো বাকি পড়েছে, বিল পেলে গত মাসের ভাড়ার টাকা থেকে ওদের দিয়ে দেওয়া যাবে। যদি খারাপ আবহাওয়ায় পড়ি, আমরা লিখতেও পারি কিছু।’

‘ঠিক আছে,’ আমি বলি, তারপর আর এক মাস মাছ ধরি আমরা। তত দিনে আমাদের বিয়াল্লিশটা মার্লিন ধরা হয়েছে, তবে বড়গুলো তখনো আসেনি। মোরোর কাছে একটা গাঢ় ভারি স্রোত ছিল—কখনো ওখানে একরের পর একর থাকত টোপের মাছ, বোটের সামনের অংশের তলা থেকে লাফিয়ে উঠত ওগুলো, আর পাখিগুলো থাকত সারাক্ষণই ব্যস্ত। বড় মার্লিন একটাও ধরতে পরিনি আমরা, যদিও প্রতিদিন সাদা মার্লিন ধরছিলাম, কখনো হারাচ্ছিলামও, একদিন তো পাঁচটা ধরেছিলাম আমি।

তীরের মানুষের কাছে আমরা ছিলাম বেশ জনপ্রিয়; কারণ, সব মাছ কেটে ওদের দিয়ে দিতাম আমরা, মোরো দুর্গের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ই দেখতে পেতাম ডকের দিকে ছুটতে শুরু করেছে জনতা। সে বছর জেলেদের কাছ থেকে কিনলে মাছের দাম পড়ত প্রতি পাউন্ড আট থেকে বারো সেন্ট, আর বাজারে গেলে দ্বিগুণ। যেদিন আমরা পাঁচটা পতাকা নিয়ে এলাম, লোকজন ঠেকানোর জন্য পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়েছিল। ব্যাপারটা কুৎসিত ও বাজে। তবে উপকূলেও খারাপ একটা বছর ছিল সেটা।

হোসি সাহেব বলেন, ‘এই শালার পুলিশগুলো আমাদের নিয়মিত খদ্দেরদের ভাগিয়ে দিয়ে সব মাছ নিয়ে নিচ্ছে।’ মার্লিনের দশ পাউন্ডের একটা টুকরো নেওয়ার জন্য নেমে আসা এক পুলিশকে তিনি বলেন, ‘জাহান্নামে যাও। তোমার এই জঘন্য খোমাটা তো আগে কখনো দেখিনি। নাম কী তোমার?’

হোসি সাহেব বলেন, ‘এই শালার পুলিশগুলো আমাদের নিয়মিত খদ্দেরদের ভাগিয়ে দিয়ে সব মাছ নিয়ে নিচ্ছে।’ মার্লিনের দশ পাউন্ডের একটা টুকরো নেওয়ার জন্য নেমে আসা এক পুলিশকে তিনি বলেন, ‘জাহান্নামে যাও। তোমার এই জঘন্য খোমাটা তো আগে কখনো দেখিনি। নাম কী তোমার?’

পুলিশটা ওর নাম বলে।

‘ওর নাম আমাদের আগাম খাতায় আছে?’

‘নাহ্।’

আগাম খাতা হচ্ছে, যেখানে আমরা যাদের মাছ দেব বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তাদের নাম লিখে রাখি।

হোসি বলে, ‘পরের হপ্তায় ছোট এক টুকরোর জন্য ওর নামটা আগাম খাতায় লিখে রাখুন, ক্যাপ। পুলিশ ভাই, এখন এখান থেকে বিদায় হও, আর যারা আমাদের বন্ধু নয়, তাদের ওপর লাঠিচার্জ করো গিয়ে। জীবনে এই ছাতার পুলিশ অনেক দেখেছি। যাও, যদি তুমি ডক-পুলিশ না হও, লাঠি আর পিস্তলটা নিয়ে ডক থেকে নেমে যাও।’

অবশেষে সব মাছ কাটা হয়ে গেলে খাতার নাম ধরে ধরে ভাগ করে দেওয়া হয়, আর খাতাটা ভরে যায় পরের হপ্তার জন্য নাম দিয়ে।

‘আপনি এমবোস মুন্ডোসে গিয়ে সাফসুতরো হয়ে নিন, ক্যাপ। একটা গোসল নেন, ওখানে দেখা হবে আপনার সঙ্গে। তারপর ফ্লোরিদিতায় গিয়ে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করতে পারি আমরা। এই পুলিশটা আমার মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে।’

‘আপনিও চলে এসে গোসল সেরে নিন।’

‘না, আমি এখানেই পরিষ্কার হয়ে নিতে পারি। আমি আজ আপনার মতো ঘামিনি।’

আমি এমবোস মুন্ডোস হোটেলের দিকে নুড়িবিছানো সংক্ষিপ্ত রাস্তাটা ধরে হেঁটে যাই, তারপর কোনো চিঠিপত্র এসেছে কি না ডেস্কে খবর নিয়ে এলিভেটর নিয়ে টপ ফ্লোরে উঠে আসি। আমার রুমটা উত্তর–পূর্ব মাথায়, জানালা দিয়ে বাণিজ্য বায়ু বয়ে গিয়ে শীতল করে রেখেছে। জানালার বাইরে পুরোনো শহরের বাড়ির ছাদগুলো দেখি, বন্দরের দিকে তাকাই, সব কটি বাতি জ্বেলে ওরিসাবাকে ধীরে বন্দর ছেড়ে চলে যেতে দেখি। এতগুলো মাছ সামলিয়ে খুব ক্লান্ত ছিলাম বলে শুতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু জানি, একবার শুলে ঘুমিয়ে পড়তে পারি, তাই বিছানার ওপর বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বাদুরদের শিকার করা দেখি, তারপর কাপড়চোপড় খুলে স্নান সেরে নিয়ে ধোয়া কাপড় পরে নিচে নেমে আসি। হোটেলের গেটে অপেক্ষা করছিলেন হোসি সাহেব।

তিনি বলেন, ‘আপনি নিশ্চয়ই ক্লান্ত, আর্নেস্ট’

‘না,’ মিথ্যে বলি আমি।

তিনি বলেন, ‘আপনার মাছ টানাটানি করা দেখেই আমি ক্লান্ত। আমাদের এত দিনের মধ্যে মাত্র দুটোই ছিল রেকর্ড। সাত নম্বরটা এবং অষ্টমটির চোখ।’ আমি কিংবা হোসি সাহেবের কেউই অষ্টম মাছটির চোখ নিয়ে ভাবতে পছন্দ করতাম না, কিন্তু সব সময় এভাবেই রেকর্ড বলতাম আমরা।

ওবিসপো স্ট্রিটের সরু ফুটপাত ধরে হাঁটছিলাম আমরা, মিস্টার হোসি দোকানগুলোর আলোকিত শো উইন্ডোর সব কটিই দেখতে দেখতে যাচ্ছিলেন। বাড়ি ফেরার সময় হয়ে এলেও কখনোই কিছু কেনেন না তিনি। তবু বিক্রির জন্য রাখা সবকিছু দেখতে পছন্দ করেন। আমরা শেষ দুটো দোকান, লটারির টিকিট ঘরটা পেরিয়ে যাই, তারপর প্রাচীন ফ্লোরিদিতার সুইং ডোরটা ঠেলে ভেতরে ঢুকি।

হোসি সাহেব বলেন, ‘আপনি বরং বসুন, ক্যাপ।’

‘না, বারে দাঁড়াতেই আমার ভালো লাগে।’

হোসি সাহেব বলেন, ‘বিয়ার। জার্মান বিয়ার। আপনি কী নেবেন, ক্যাপ?’

‘চিনি ছাড়া ফ্রোজেন দাইকিরি।’

কনস্তান্তে দাইকিরি বানায়, শেকারের মধ্যে আরও দুটোর মতো যথেষ্ট পরিমাণ রেখে দেয় ও। প্রসঙ্গটা তোলার জন্য জোসি সাহেবের অপেক্ষা করি আমি। বিয়ার আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রসঙ্গটা তিনি ওঠান।

‘কার্লোস বলছে, আগামী মাসে আসবে ওরা।’ কার্লোস হচ্ছে আমাদের কিউবান মেট এবং দারুণ মার্লিন শিকারি। ‘তিনি বলছেন, এমন স্রোত কখনোই দেখেননি আগে, ওগুলো যখন আসবে, এমন জিনিস কখনোই দেখিনি আমরা। তিনি বলছেন, ওদের আসতেই হবে।’

‘আমাকেও বলেছেন তিনি।’

‘ক্যাপ, আপনি যদি আরেক মাস চেষ্টা করেন, আমি দৈনিক আট ডলার করে দেব, স্যান্ডউইচে পয়সা খরচ না করে আমি রাঁধতেও পারি। দুপুরে খাওয়ার জন্য কোনো খাঁড়ির মধ্যে ঢুকে পড়তে পারি আমরা, সেখানেই রান্না করব আমি। আঁকাবাঁকা ডোরাকাটা বনিটো সব সময়ই পাওয়া যায়। ওগুলো ছোট টিউনার মতোই। কার্লোস বলেছে টোপের জন্য গেলে বাজার থেকে আমাদের জন্য সস্তায় এনে দিতে পারবে ও। তারপর রাতের বেলায় সান ফ্রান্সিসকো রেস্তোরাঁয় খেতে পারি আমরা। গত রাতে ওখানে পঁয়ত্রিশ সেন্টে খেয়েছি আমি।’

‘গত রাতে আমি না খেয়ে পয়সা বাঁচিয়েছি।’

‘আপনাকে খেতে হবে, ক্যাপ। সে জন্যই মনে হয় আপনি একটু ক্লান্ত।’

‘আমি জানি। কিন্তু আপনি নিশ্চিত যে আরেক মাস চেষ্টা করতে চান আপনি?’

‘আরেক মাস ওটার মেরামতি দরকার পড়বে না। তাহলে ওটাকে এখনই ছেড়ে দেব কেন, যখন বড়গুলো আসছে?’

‘আপনার কি অন্য কোনো কিছু করার আছে?’

‘না, আপনার?’

‘আপনার কি মনে হয়, ওগুলো সত্যিই আসবে?’

‘কার্লোস বলছে, ওগুলোকে আসতেই হবে।’

তাহলে ধরুন, আমরা একটা ধরলাম কিন্তু আমাদের যা যন্ত্রপাতি আছে, সেগুলো দিয়ে ওটাকে সামলাতে পারছি না।’

‘আমাদের সামলাতে পারতেই হবে। ভালো খাওয়াদাওয়া করলে ওটার সঙ্গে আপনি সারা জীবন থেকে যেতে পারবেন। আমরা ভালো করে খাব। তারপর অন্য কিছু ভাবছি আমি।’

‘কী?’

‘যদি আপনি তাড়াতাড়ি বিছানায় যান, যদি কোনো সামাজিক জীবন আপনার না থাকে, দিনের আলো ফোটার সঙ্গে আপনি জেগে উঠতে পারেন, তারপর লিখতে শুরু করলে সকাল আটটার মধ্যে আপনার এক দিনের লেখা হয়ে যাবে। আমি আর কার্লোস সবকিছু তৈরি করে রাখব, আপনি গিয়ে কেবল চড়ে বসবেন।’

আমি বলি, ‘ঠিক আছে, কোনো সামাজিকতা নয়।’

‘এই সামাজিক জীবন আপনাকে শেষ করে ফেলে, ক্যাপ। আমি একেবারেই না করতে বলিনি। কেবল শনিবার রাতেই করবেন।’

আমি বলি, ‘চমৎকার, শনিবার রাতেই কেবল সামাজিক জীবন। এখন, আমাকে কী লিখতে বলবেন?’

‘সেটা আপনার ওপর, ক্যাপ। সে ব্যাপারে নাক গলাতে চাই না আমি। আপনি যখনই লিখেছেন, সব সময়ই ভালো লিখেছেন।’

‘আপনার কী পড়তে পছন্দ?’

‘ইউরোপ কিংবা পশ্চিম অথবা আপনি যখন বেকার অথবা যুদ্ধ অথবা এ–জাতীয় বিষয় নিয়ে ভালো ছোটগল্প লেখেন না কেন? আপনি এবং আমি যেসব জানি, কেবল সেসব নিয়ে লেখেন না কেন? অ্যানিটা যা দেখেছে সেটা নিয়ে কিছু একটা লিখুন। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য বহু সামাজিক জীবন ঢুকিয়ে দিতে পারেন সেখানে।’

‘আমি সামাজিক জীবন বন্ধ করে দিচ্ছি।’

‘নিশ্চয়ই, ক্যাপ। কিন্তু আপনার অনেক কিছু মনে আছে। বন্ধ করলেও এখন আপনার কোনো ক্ষতি হবে না।’

‘না, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জনাব হোসি। আমি সকালে কাজ শুরু করব।’

‘আমার মনে হয়, আমাদের নতুন ব্যবস্থা শুরু করার আগে ঘুম থেকে উঠে লেখা আর মাছ ধরার জন্য ফিট থাকতে হলে আজ রাতে আপনার একটা বড় রেয়ার স্টেক খাওয়া উচিত। কার্লোস বলেছে, বড়গুলো এখন যেকোনো দিনই আসতে পারে। ওগুলোর জন্য আপনার সবচেয়ে ভালো থাকতে হবে।’

‘আপনার কি মনে হয়, এ রকম আরেকটা খেলে আমার কোনো ক্ষতি হবে?’

‘আরে না, ক্যাপ। এটাতে আছে রাম, অল্প লেবুর রস এবং মারাশিনো। এটা কোনো মানুষের ক্ষতি করবে না।’

ঠিক তখনই আমাদের পরিচিত দুটো মেয়ে বারে এসে ঢোকে। মেয়ে দুটো দেখতে খুবই সুন্দরী আর সেই সন্ধ্যার জন্য বাসি হয়নি।

একজন বলে, ‘সেই জেলেগুলো।’

আরেকজন বলে, ‘সমুদ্রের বড়সড় স্বাস্থ্যবান দুই জেলে।’

হোসি সাহেব আমাকে বলেন, ‘এন এস এল।’

আমি নিশ্চিত করি, ‘নো সোশ্যাল লাইফ।’

একটি মেয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তোমাদের কি গোপন কোনো ব্যাপার আছে?’ চমৎকার সুন্দরী মেয়েটা, আগের কোনো বন্ধুর ডান হাত ওর চমৎকার নাকের নিখুঁত রেখাটা যে নষ্ট করে দিয়েছে, সেই সামান্য খুঁতটুকু চোখে পড়ে না।

হোসি সাহেব মেয়ে দুটোকে বলেন, ‘আমি আর ক্যাপ কাজের কথা আলাপ করছি।’ ওরা বারের অন্য প্রান্তে চলে যায়। তারপর আমাকে বলেন, ‘দেখেন কত সোজা কাজটা? আমি সামাজিক দিকটা সামলাব, আর আপনাকে ভোরবেলায় উঠতে হবে, লিখতে হবে, আর মাছ ধরার জন্য শক্ত থাকতে হবে। বড় মাছ। এক হাজার পাউন্ডের ওপর হয়, এমন মাছ।’

আমি বলি, ‘আমরা বদলাবদলি করি না কেন, আমি সামাজিক দিকটা সামলাব, আপনি ভোরবেলায় উঠবেন এবং লিখতে বসবেন, আর মাছ ধরার জন্য নিজেকে ঠিক রাখবেন, বড় মাছ, যা এক হাজার পাউন্ডের ওপর পর্যন্ত হতে পারে।’

হোসি সাহেব গম্ভীর গলায় বলেন, ‘পারলে আমি খুশি হতাম, ক্যাপ। কিন্তু আমাদের দুজনের মধ্যে আপনিই লিখতে পারেন। তা ছাড়া আপনি আমার চেয়ে কম বয়সী, তাই মাছ ধরার জন্য বেশি উপযুক্ত। আমি কেবল ইঞ্জিনের ক্ষয়ে যাওয়ার হিসাব করে যা পাই, তা বোটটাকে দিই এবং সেটাকে আমার মতো করে চালিয়ে নিতে পারি।’

আমি বলি, ‘আমি জানি সেটা। আমিও ভালো লিখতে চেষ্টা করব।’

হোসি সাহেব বলেন, ‘আপনার জন্য গর্বটা ধরে রাখতে চাই আমি। আর চাই সাগরে সাঁতার কাটা সবচেয়ে বড় মার্লিনটা ধরতে, ওটাকে ঠিকভাবে ওজন করে কেটে আমাদের চেনা গরিব লোকদের দিতে, দেশের এই শালার লাঠিমারা পুলিশগুলোকে এক টুকরোও নয়।

‘আমরা সেটাই করব।’

ঠিক তখন বারের অন্য মাথা থেকে মেয়ে দুটোর একজন আমাদের দিকে হাত নাড়ে। রাতটা মন্থর, ওখানে আমরা ছাড়া আর কেউ ছিল না।

হোসি সাহেব বলেন, ‘এন এস এল।’

আমি পবিত্রভাবে বলি, ‘এন এস এল।’

হোসি সাহেব ডাক দেন, ‘কনস্তান্তে। আর্নেস্টো এখানে একজন ওয়েটার চাইছেন। আমরা কয়েকটা বড় রেয়ার স্টেক অর্ডার দিতে চাই।’

কনস্তান্তে মৃদু হেসে আঙুল তুলে একজন ওয়েটারকে ডাকেন।

আমরা যখন ডাইনিং রুমে যাওয়ার জন্য মেয়েগুলোর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, ওদের একজন তার হাত বাড়িয়ে দেয়, আমি ওটা ধরে ঝাঁকিয়ে পবিত্রভাবে স্প্যানিশে বলি, ‘এন এস এল।’

অন্য মেয়েটি বলে, ‘হা ঈশ্বর, এরা রাজনীতি করে, তা-ও এ রকম একটা সময়ে।’ ওরা মুগ্ধ এবং কিছুটা ভীতও।