গল্প

তুতুর লাল চোখ

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

‘বাবা দেখো, আমার চোখে কী হয়েছে।’
দুপুর থেকে লম্বা একটা ঘুম দিয়ে সন্ধ্যার দিকে বাবার কাছে এসে কথাটা বলল তুতু।
বাবা তুতুর দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বললেন, ‘তোর ডান চোখটা তো লাল হয়ে ফুলে গেছে!’
‘শুধু তা-ই না বাবা, খুব চুলকাচ্ছে আর পানি পড়ছে।’
তুতুর বাবা উঠে এসে ভালো করে তুতুর চোখটা দেখে বললেন, ‘চোখ উঠল কি না, বুঝতে পারছি না।’
‘চোখ উঠলে তো স্কুলে যেতে পারব না। তাই না, বাবা?’
‘তা তো বটেই। কিন্তু তোর চোখ উঠেছে নাকি অন্য কিছু হয়েছে, সেটা তো আগে বুঝতে হবে।’
‘আমার মনে হয় চোখই উঠেছে। তাহলে কালকে আর স্কুলে যাচ্ছি না, ঠিক আছে, বাবা?’

তুতুর মনের ইচ্ছেটা কী তা বাবা বুঝতে পেরে মুচকি হাসলেন।

‘ঠিক আছে মানলাম। তোর চোখ উঠেছে। আর সে জন্য তোকে কাল স্কুলে যেতে হবে না। এখন এক কাজ কর। একটু পানি গরম করে দিচ্ছি, তুই একটা নরম কাপড় সেই পানিতে ভিজিয়ে চোখটা পরিষ্কার কর। দেখা যাক চুলকানি আর পানি পড়াটা বন্ধ হয় কি না।’

কথামতো তুতুর বাবা একটা বাটিতে খানিকটা পানি গরম করে তাতে দুই ফোঁটা লবণ মিশিয়ে দিলেন তুতুকে। আর তুতু একটা নরম কাপড় সেই পানিতে ভিজিয়ে ওর ডান চোখটা পরিষ্কার করতে লাগল।

ঘণ্টা খানেক পর বাবা যখন খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন, তখন তুতু আবার বাবার কাছে এল।

‘বাবা দেখো।’

হাতের কাজ থামিয়ে তুতুর দিকে ফিরলেন বাবা। ‘ফের কী হলো?’

‘দেখো, তোমার কথা শুনে আমার কী হয়েছে।’ বাবা খেয়াল করলেন তুতুর চোখের ফোলাটা চলে গেছে। লাল ভাবটাও নেই।

‘বাহ্‌, তোর চোখ তো ভালো হয়ে গেছে।’

‘আমি কি তোমাকে বলেছিলাম যে আমার চোখ ভালো করে দাও। তুমি কেন বললে গরম পানি দিয়ে চোখ পরিষ্কার করতে? এখন চোখটা সাদা হয়ে গেল। ফোলাও নেই। মা তো কাল ঠিকই আমাকে স্কুলে পাঠাবে।’

‘পাঠাবেই তো। কোনো সমস্যা যখন নেই। তুই স্কুলে যাবি না কেন?’

‘অত কিছু বুঝি না, বাবা। তুমি বলেছ কাল আমাকে স্কুলে যেতে হবে না। ব্যস, আমি যাব না। মাকে তুমি বোঝাবে।’

‘আরে আমি বললেই কি তোর মা তোকে স্কুল ফাঁকি দিতে দেবে? উল্টো দুজনকেই বকা খেতে হবে।’

‘আমি জানি না। আমি যাব না। তুমি আমার চোখ আগের মতো লাল করে দাও।’

‘ঠিক আছে। শোন, কিছুক্ষণের মধ্যেই মা ফিরবে। কলবেলের আওয়াজ পেলেই বাথরুমে গিয়ে চোখ দুটো বেশ করে চুলকে নিবি। তারপর লাল হয়ে গেলে বের হয়ে এসে মাকে দেখাস।’

তুতু বাবার কথা শুনে নিজের ঘরে গেল। খানিকক্ষণ বাদেই ফিরলেন মা। কলবেলের আওয়াজ পেয়েই দৌড়ে বাথরুমে ঢুকল তুতু।

মা ঘরে ঢুকে বাবার সঙ্গে কথা বলছিলেন। এমন সময়ে তুতু তার টকটকে লাল দুটো চোখ নিয়ে ঘরে ঢুকে বলল, ‘মা দেখো, আমার চোখের কী অবস্থা।’

মা তুতুর লাল চোখ দেখে আঁতকে উঠলেন। কিন্তু কিছু বলার আগেই বাবা বললেন, ‘ওর তো মনে হয় চোখ উঠেছে। তুতু, তুই গিয়ে শুয়ে থাক।’ তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এমন চোখ নিয়ে স্কুলে যাওয়া ঠিক হবে না। কী বলো?’

মাও বাবার সঙ্গে একমত হয়ে বললেন, ‘তুই তোর ঘরে যা। আমি একটু পরে এসে দেখছি কী করা যায়।’

তুতু যদিও মায়ের কথা শুনে খুশি হয়ে ঘরে গেল। কিন্তু তারপর থেকেই শুরু হলো আরেক যন্ত্রণা। মা কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে তুতুর ঘরের দিকে রওনা দিলেন। মায়ের পায়ের আওয়াজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তুতু দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে চোখ চুলকে নিল। তারপর যখন বের হলো তখন মা ওর চোখ দেখে বললেন, ‘তোর চোখের অবস্থা তো সাংঘাতিক। আমি তোর ডাক্তার চাচির সঙ্গে কথা বলে দেখি কী করা যায়।’

মায়ের কথা শুনে তুতু বিছানায় কষ্ট করে ঘাপটি মেরে পড়ে রইল।

আর মা ডাক্তার চাচির সঙ্গে কথা বলে কিছুক্ষণ পরপর তুতুর ঘরে আসতে লাগলেন ওকে দেখার জন্য। মায়ের পায়ের শব্দ পেয়েই তুতু ওর চোখ চুলকে লাল করে রাখে। আর তা দেখে মা প্রতিবারই আগের চেয়ে বেশি আঁতকে ওঠেন।

কিন্তু এভাবে অকারণে চোখ চুলকাতে চুলকাতে তুতুর চোখটাই ব্যথা হয়ে গেল। চোখের চারপাশের চামড়া জ্বলতে শুরু করল। সেই ব্যথা আর জ্বালা সহ্য না করতে পেরে তুতু বাবার কাছে গিয়ে কানে কানে বলল ব্যথা আর জ্বালার কথা। মা আশপাশে নেই দেখে বাবা বললেন, ‘কিন্তু না চুলকালে তো আবার সাদা হয়ে যাবে। আর চোখ সাদা হয়ে গেলে তো মা তোকে স্কুলে পাঠাবে। কী করবি?’

‘স্কুলেই যাব, বাবা। তাও আর চোখ চুলকাতে পারব না। জ্বালা করে।’

‘আর তোর মাকে কী বলব?’

‘মাকে সত্যি কথাটা বলব।’

‘ঠিক আছে, চল।’

কিন্তু মার কাছে তাদের আর যাওয়া হলো না। মা যে কখন ওদের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছেন ওরা টেরই পায়নি। মা কোমরে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে, বাবার দিকে গরম-গরম চোখে তাকিয়ে বললেন, ‘এতক্ষণ ধরে এই যে মিথ্যেবাজি করলে আমার সঙ্গে তার জন্য তোমাদের দুজনেরই পানিশমেন্ট হবে। তুতু, তোকে আজ এক গ্লাসের বদলে দুই গ্লাস দুধ খেতে হবে। আর তুমি...’ বাবাকে বললেন মা, ‘ফ্রিজ থেকে সব খাবার বের করে গরম করবে। আর খাওয়া শেষে সব প্লেট ধোবে। অবশ্য তুতু সত্যি কথা বলতে চেয়েছে দেখে ওর একটা পুরস্কারও পাওনা হয়েছে। আর সেটা হলো, কাল তুতুকে স্কুলে যেতে হবে না। আমিও অফিস ছুটি নিয়ে মা-মেয়ে দুজনে মিলে বেড়াতে যাব। বুঝেছ?’ আরেকবার বাবার দিকে গরম চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন মা।

বাবা অসহায় দৃষ্টিতে একবার মায়ের দিকে আরেকবার তুতুর দিকে তাকিয়ে লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলে রান্নাঘরের দিকে রওনা হলেন।

>

রহস্যের সমাধান

*মিজানের কথায় গোলমাল আছে। ঘটনা ঘটেছে শুক্রবারে। অথচ সে ঘরে বসে ‘সানডে নাইট’ দেখছিল। কীভাবে? ফ্রাইডেতে বুঝি টিভিতে ‘সানডে নাইট’ দেখায়?

*ছোট মামার কথায় বোঝা গেল, কোথাও একটা ‘ঘোড়া’ আছে। ঘোড়াটাই ধরতে বলা হয়েছে। একটা ছড়ায় লেখা আছে, ‘ছুটল কয়েক শ অশ্ব’। অশ্ব মানে কী? ঘোড়া! অতএব ওই শব্দটার ওপরেই হাত রাখতে হবে।