গ্রাফিকস: প্রথম আলো
গ্রাফিকস: প্রথম আলো

নাইজেরীয় কবি ও আখ্যান লেখক

চিমামান্দা এনগোজি আদিচির নারীবাদ

চিমামান্দা এনগোজি আদিচি একজন নাইজেরীয় কবি ও আখ্যান লেখক। আদিচির কবিতা, গল্প ও উপন্যাসগুলোতে সব সময় একটা নারীবাদী দৃষ্টিকোণ প্রয়োগ করতে দেখা যায়। বিশেষ করে আফ্রিকার সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য, পুরুষতান্ত্রিক ধ্যানধারণা, নারীর ওপর বলপ্রয়োগ ও নিপীড়ন এবং নারী-স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যুক্তি ও শক্তি প্রয়োগের বিষয়গুলো। ছোটবেলা থেকে আদিচি দেখেও এসেছেন ‘নারীবাদী’ শব্দটি এবং ‘নারীবাদ’ সম্পর্কে আফ্রিকার ধারণাগুলো নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ। তাই আদিচি স্বভাবগতভাবে নারীবাদ-সংক্রান্ত নিজের বক্তৃতায় ও রচনায় এসব বিষয়কে নারীবাদের অনুষঙ্গ করে গল্পাকারে আফ্রিকার বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় আদিচির নারীবাদবিষয়ক প্রথম বই ‘উই শুড অল বি ফ্যামিনিস্টস’ এবং দ্বিতীয় বই ‘ডিয়ার ইজাওয়েলে: আ ফ্যামিনিস্ট ম্যানিফেস্টো ইন ফিফটিন সাজেশনস’ প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে। বলতে গেলে নাইজেরিয়ার বাস্তবতা, ঐতিহ্য ও ইগবো সংস্কৃতির আলোকে আদিচির দুই রচনায়ই নারীবাদ ও নারীবাদী চিন্তার স্বতন্ত্র ধরন প্রকাশ পায়। একইভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর নারী-পরিপ্রেক্ষিতের সর্বজনীন বিষয়ও তাঁর ভাবনায় ফুটে উঠতে দেখা যায়।

আদিচির চৌদ্দ বছর বয়সে তর্কচ্ছলে তাঁর বড় ভাইয়ের বন্ধু ওকুলোমা তাঁকে নারীবাদী তকমা দেন। তখনো তিনি নারীবাদী শব্দটার সঙ্গে অপরিচিত ছিলেন এবং তার মানেও জানতেন না। আর ওকুলোমা শব্দটাকে এমনভাবে প্রয়োগ করেছিলেন যে আদিচির ধারণা হয়েছিল, বিষয়টার সঙ্গে সন্ত্রাসের সম্পর্ক বিদ্যমান। পরে অভিধান ঘেঁটে আদিচি শব্দটার অর্থ জেনে নিয়েছিলেন। তার অনেক পরে, ছাব্বিশ বছর বয়সে আদিচির প্রথম উপন্যাস ‘পার্পল হিবিসকাস’ (২০০৩) প্রকাশিত হয়। উপন্যাসের প্রোটাগোনিস্ট লোকটি আর সব নির্যাতনের সঙ্গে স্ত্রীকে শারীরিকভাবেও প্রহার করত, তাই গল্পের পরিণতিটা বেদনাদায়ক হয়। এমন গল্পের জন্য পাঠকেরা আদিচিকে ‘নারীবাদী লেখক’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। একজন সুহৃদ সাংবাদিক-পাঠক আদিচিকে প্রথম বিষয়টি অবগত করেন এবং উপদেশ দেন, তিনি যেন নিজেকে নারীবাদী হিসেবে প্রকাশ না করেন। একই সঙ্গে ওই সাংবাদিক নারীবাদীদের একটা সংজ্ঞার্থও ছুড়ে দেন আদিচির উদ্দেশে, ‘স্বামী না পেয়ে যেসব মেয়ে অসুখী হয়, তারাই নারীবাদী।’

নারীবাদীরা পুরুষকে ঘৃণা করে। তাই আদিচি ঠিক করলেন, তিনি এমন একজন নারীবাদী হবেন, যিনি পুরুষকে ঘৃণা করেন না। তাই হলেনও একজন সুখী আফ্রিকান নারীবাদী। আদিচি পুরুষকে ঘৃণা করেন না কিংবা তিনি পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য নয়, নিজের আনন্দের জন্য লিপগ্লস ও হাইহিল পরতে পছন্দ করেন।

পরে আদিচি নাইজেরিয়ার একজন নারী শিক্ষাবিদের কাছ থেকে জানতে পারেন, নারীবাদ নামক জিনিসটা আফ্রিকার সংস্কৃতি নয়। ওই শিক্ষাবিদের ধারণা, পশ্চিমা বিশ্বের বই পড়ে আদিচির মাথা বিগড়ে গেছে এবং তিনি নারীবাদী হয়ে উঠেছেন। অথচ আদিচির কাছে বিষয়টা এমন ছিল না। তবে নারীবাদ যেহেতু আফ্রিকার বিষয় নয়, তাহলে তাঁর আফ্রিকান নারীবাদী হতে আপত্তি নেই। বন্ধুরা বলাবলি করলেন, নারীবাদীরা পুরুষকে ঘৃণা করে। তাই আদিচি ঠিক করলেন, তিনি এমন একজন নারীবাদী হবেন, যিনি পুরুষকে ঘৃণা করেন না। তাই হলেনও একজন সুখী আফ্রিকান নারীবাদী। আদিচি পুরুষকে ঘৃণা করেন না কিংবা তিনি পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য নয়, নিজের আনন্দের জন্য লিপগ্লস ও হাইহিল পরতে পছন্দ করেন। আসলে এর বেশির ভাগই নিছক ব্যঙ্গাত্মক ব্যাপার ছিল।

আদিচির নারীবাদবিষয়ক প্রথম বই ‘উই শুড অল বি ফ্যামিনিস্টস’

তাহলেও আদিচি এসব ঘটনার ভেতরকার গূঢ় যে সত্য বিদ্যমান, তা আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন নারীবাদী শব্দটির সঙ্গে ভারী এক বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে আর তা নঞর্থক। মানে আফ্রিকায় নারীবাদী মানে হচ্ছে পুরুষকে ঘৃণা কারা, নিজস্ব সংস্কৃতিকে পরিত্যাগ করা, সাজগোজ না করা, সব সময় রেগে থাকা; এমনকি সর্বক্ষেত্রে নারী নেতৃত্ব বহাল রাখা বা প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি।

ছোটবেলা থেকে কিছু বিষয় আদিচির মনে প্রতিক্রিয়া তৈরি করত। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় ক্লাস মনিটর নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখেন ছেলেদের প্রাধান্য দিতে। মাত্র নয় বছর বয়সে ক্লাসে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার পরও তাঁকে মনিটর করা হয়নি। শ্রেণিশিক্ষক দ্বিতীয় নম্বরধারী ছাত্রটিকে মনিটর করেছিলেন। যেখানে মনিটর হওয়ার আকাঙ্ক্ষা আদিচির প্রবল ছিল আর সহপাঠী ছেলেটির ইচ্ছামাত্র ছিল না। এ ঘটনা থেকে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে মানুষ যখন বারবার কিছু করে বা দেখে, তখন সেটা স্বাভাবিক হয়ে যায়। শুধু ছেলেদের ক্লাস মনিটর বানানো হতো বলে সবাই অবচেতন মনে ভাবতে শুরু করে, ছেলেরাই মনিটর হবে কিংবা হওয়া উচিত। প্রতিষ্ঠানপ্রধান হওয়ার ক্ষেত্রেও তা–ই। এভাবেই সমাজে পুরুষের প্রাধান্য বেড়েছে আর নারীরা পেছনে পড়ে গেছে।

আফ্রিকার বাস্তবতায় আদিচি দেখেছেন শিক্ষিত ও উদারমনা পুরুষেরাও নারীর সংকটটা ধরতে পারেন না। নিজেদের ভাবনা অনুযায়ী তাঁরা ধরে নেন, পুরুষের মতো মেয়েদেরও সবকিছু ঠিকঠাক আছে। পুরুষের দেখার এই ব্যর্থতার কোনো কূলকিনারা আদিচি পাননি। যেখানে লাগোসের মতো কসমোপলিটন শহরে নারী সঙ্গী কাউকে বকশিশ দিলে ধন্যবাদটা পায় পুরুষটি। লোকের ধারণা, টাকাটা যে–ই দিক, তার মালিক পুরুষটা। আমেরিকার বাস্তবতায়ও আদিচি দেখেছেন, সমান যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও নারীর তুলনায় পুরুষকে বেশি বেতন দেওয়া হয়।

আদিচির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, জৈবিকভাবে নারী ও পুরুষ আলাদা এবং তাদের ক্ষমতাও স্বতন্ত্র ধরনের। নারীদের তুলনায় পুরুষেরা শক্তিশালী; আবার নারী সন্তান জন্ম দিতে পারলেও পুরুষ তাতে অক্ষম। পৃথিবীতে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যাও অধিক। তা সত্ত্বেও ক্ষমতা ও সম্মানের জায়গাগুলো পুরুষের দখলে। তাই আদিচির কথা হচ্ছে, আগেকার যুগে হলে বিষয়টা মানা যেত; যে সময়ে শারীরিক শক্তির ভিত্তিতে পুরুষেরা ক্ষমতাবান ছিল। কিন্তু এখনকার পৃথিবী একেবারেই ভিন্ন; এখন মানুষের যোগ্যতা বা ক্ষমতা নির্ধারিত হয় জ্ঞান, মেধা, বুদ্ধি, সৃষ্টিশীলতা বা উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে। এসবের সঙ্গে জৈবিকতা বা লিঙ্গের সংশ্রব নেই। সময় ও সুযোগ পেলে নারী-পুরুষনির্বিশেষে এসব গুণের অধিকারী হতে পারে। অথচ বাস্তবে এসব ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের অধস্তন হিসেবে দেখা হয়। কারণ হিসেবে আদিচি দেখেছেন, অনেক ক্ষেত্রে মানুষের বিবর্তন হলেও লিঙ্গ নিয়ে ধারণাগুলোর বিবর্তন হয়নি।

আফ্রিকার বাস্তবতায় আদিচি দেখেছেন শিক্ষিত ও উদারমনা পুরুষেরাও নারীর সংকটটা ধরতে পারেন না। নিজেদের ভাবনা অনুযায়ী তাঁরা ধরে নেন, পুরুষের মতো মেয়েদেরও সবকিছু ঠিকঠাক আছে। পুরুষের দেখার এই ব্যর্থতার কোনো কূলকিনারা আদিচি পাননি।

নাইজেরিয়ার সমাজে লিঙ্গ নিয়ে ধারণাগুলোর প্রকট আকার দেখেছেন আদিচি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছেন, একজন নারীর একা হোটেলে অবস্থান সমাজের চোখে আলাদা মানে তৈরি করে। পেশাগত বা অন্য কোনো কারণে যে একজন নারী হোটেলে অবস্থান করতে পারে, এ ধারণাও অনেকে করতে পারে না। অন্যদিকে লাগোসের দামি ক্লাবগুলোতে নারীদের পুরুষ ছাড়া প্রবেশাধিকার নেই। যেকোনো রেস্তোরাঁয় ওয়েটারকে পুরুষ সঙ্গীকে সম্ভাষণ করতে দেখেছেন আদিচি আর নারীকে করা হয় উপেক্ষা। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সময়ে আদিচির নিজেকে অদৃশ্য সত্তা বলে মনে হতো, এতে সব সময় বিচলিত হতেন তিনি। কারণ, বিষয়গুলো হয়তো ছোট কিন্তু তা একটা সামগ্রিক পরিস্থিতিকেই নির্দেশ করে। আর তা হচ্ছে নারীকে হেয় করে দেখা ও অসম্মান করা।

নাইজেরিয়ার এমনরূপ লিঙ্গধারণাকে আদিচি চরম অন্যায় বলে মনে করেন। নিজের মেয়ে হওয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে একবার তিনি ক্রুদ্ধ একটি লেখাও প্রকাশ করেন। লেখার বিষয়গুলো ছিল সত্য, কিন্তু অনেকে প্রতিক্রিয়ায় জানান, এমন করে লেখাটা ঠিক হয়নি; নারী হয়ে তিনি কেন ক্রুদ্ধ জবানে লিখবেন! কথাগুলো এমন যে নারীর কোনো পরিস্থিতিতেই রাগ প্রকাশ করা উচিত নয়; এটা নিজ অস্তিত্বের প্রশ্নে ভালো নয়। নারীদের জন্যও ভালো নয়।

কর্মক্ষেত্রে আমেরিকায়ও আদিচির অভিজ্ঞতাটা তেমন ভালো নয়। যে একই কাজে পুরুষ প্রশংসা পায়, নারীকে সেখানে তিরস্কৃত হতে দেখেছেন তিনি। আদিচি অবাক হয়েছেন মানুষের খামখেয়ালি দেখে। এমন ঘটনার শিকার পদস্থ নারী-বন্ধুদের মানসিকতা দেখেও তিনি স্তম্ভিত হয়েছেন বারবার। এতে প্রতিবাদ করার চেয়ে বরং বাথরুমে গিয়ে ওঁদের কান্নাকাটি করে কিংবা অন্যের ওপর রাগ ঝাড়তে দেখেছেন তিনি। তাঁরা চান না তাঁদের কেউ রাগী ভাবুক, আক্রমণাত্মক ভাবুক। এর চেয়ে তাঁরা অন্যের নমনীয় ও পছন্দের পাত্র হতে বেশ উৎসাহী।

পুরুষের চোখে ভালো হওয়ার জন্য যার যা করার, নারীদের তা-ই করতে দেখেছেন আদিচি। অথচ নারীদের পছন্দের পাত্র হওয়ার জন্য পুরুষের অতিরিক্ত কসরত করতে দেখেননি কোথাও। তাই পুরুষদের আকৃষ্ট করতে কিংবা পুরুষের জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা নিয়ে পৃথিবীজুড়ে প্রচার-প্রোপাগান্ডামূলক রচনার অভাব হয় না। লেখালেখির কর্মশালায় আদিচি এমন সব অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিষয় উপস্থাপন করলে তাঁকে প্রায়ই নারীবাদী তকমা শুনতে হতো। প্রশিক্ষণার্থী অনেকে মনে করত, তাঁর কথা শুনলে নিজেদের সংসার পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। আদিচি দেখেছেন, সংসার ভাঙার ক্ষেত্রে নাইজেয়ীয় সমাজ পুরুষের চেয়ে নারীর বিপক্ষে বেশি দায় আরোপ করে।

আদিচির নারীবাদবিষয়ক দ্বিতীয় বই ‘ডিয়ার ইজাওয়েলে: আ ফ্যামিনিস্ট ম্যানিফেস্টো ইন ফিফটিন সাজেশনস’

অথচ আদিচি জানতেন, এসব নারীবাদের বিষয় নয়; এমনকি নারীর একারও বিষয় নয়। এটা একটা জটিল সমাজিক ব্যাধি, মানবিক বিপর্যয়। কারণ, লিঙ্গ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর এর সহাবস্থান ও সমতা মানবজাতির সামগ্রিক কল্যাণের ব্যাপার। পুরুষের যেমন সুখী হওয়া দরকার, নারীরও প্রয়োজন কোনো অংশে কম নয়। আর তা যদি হয়, তবেই নারী-পুরুষের আন্তসম্পর্ক স্বাভাবিক হবে বলে আদিচি মনে করেছেন। কিন্তু চলমান বাস্তবতায় তা কীভাবে সম্ভব হতে পারে? আদিচি মনে করেন, এটা খুবই সম্ভব হতে পারে যদি প্রচলিত মনোভাবের বাইরে গিয়ে ছেলেমেয়েদের ভিন্নভাবে বাড়তে দেওয়া হয়।

ছেলেসন্তানদের বড় করার ব্যাপারে আদিচির কিছু অনুযোগ আছে। তাঁর ধারণা, নাইজেরিয়ায় শৈশব থেকেই ছেলেশিশুদের মানবিক বিষয়গুলোকে অবদমিত করে দেওয়া হয়। বিশেষ করে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি এবং পুরুষত্বের ধারণাগুলোর দিক থেকে। ফলে শুরু থেকে পুরুষত্বকে ‘কঠোর’ আর ‘দানবাকার’ কিছু বলে শিশুরা মনে করতে থাকে। আর একটা খাঁচার ভেতর তাদের পুরে দেওয়া হয়, যা থেকে তারা কোনো দিন বের হতে পারে না। এ সবই ঘটে নানা আচরণের মাধ্যমে, যেমন হাইস্কুলের কোনো ছেলে ও মেয়ে বেড়াতে গেলে পৌরুষের প্রমাণস্বরূপ ছেলেটাকেই হাতখরচটা বহন করতে হয়। এখানে পুরুষত্বের সঙ্গে টাকাকে যুক্ত করে সমাজমানসটা এভাবেই নির্মাণ করা হয়। অবশ্য এর পেছনেও আদিচি ঐতিহাসিক আরেক সত্য অবলোকন করেন যে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের হাতে টাকা বেশি থাকে। কারণ, সম্পত্তি ভাগাভাগি কিংবা সুযোগ-সুবিধার বদৌলতেই এমন হয়। তাহলে সম্পত্তি বা সুযোগ–সুবিধার বিষয়ে মেয়েদের ছেলেদের সমানুপাতিক বিবেচনা করলে বস্তুগত দিক থেকে ওই ফারাকটা আর থাকে না। অর্থাৎ টাকা আর পুরুষত্ব পরস্পরের পরিপূরক হওয়ার সুযোগ থাকে না। ব্যক্তিত্ব গঠনের দিক থেকেও ওই একই কথা খাটে। নাইজেরিয়ায় শক্ত পুরুষ হওয়াটা সমাজের জন্য জরুরি বিষয় হতে দেখা যায়। এর ফলাফল আদিচি দেখেছেন ঠিক উল্টো—শক্ত পুরুষ হওয়ার সাধনা ছেলেদের মনে অভিঘাত হানে, ফলে তাদের অহংবোধটা ততটাই ঠুনকো হয়ে পড়ে।

শেখানো হয় নারীর উচ্চাভিলাষ কোনোক্রমে পুরুষকে অতিক্রম করে হতে পারে না। সফলতার ক্ষেত্রেও তা-ই; এমনকি স্ত্রী বেশি বেতন পেলেও কিংবা একা রোজগেরে হলে জনসমক্ষে তা প্রকাশ করা সমাজবিরুদ্ধ। কেননা এতে পৌরুষধর্মকে অস্বীকার করা হয়।

অন্যদিকে মেয়েসন্তানদের তালিম দেওয়া হয় পুরুষের ওই ঠুনকো অহমিকাকে মান্যতা দিতে। এটাকে মেয়েদের বিরুদ্ধে ঘোরতর অন্যায় বলে দাবি করেন আদিচি। নাইজেরিয়ায় মেয়েদের পুরুষের তুলনায় খাটো করে রাখা বা তৈরি করা সামাজিক প্রথার মতো। শেখানো হয় নারীর উচ্চাভিলাষ কোনোক্রমে পুরুষকে অতিক্রম করে হতে পারে না। সফলতার ক্ষেত্রেও তা-ই; এমনকি স্ত্রী বেশি বেতন পেলেও কিংবা একা রোজগেরে হলে জনসমক্ষে তা প্রকাশ করা সমাজবিরুদ্ধ। কেননা এতে পৌরুষধর্মকে অস্বীকার করা হয়। এর বিপরীতে আদিচির প্রশ্ন হচ্ছে, নারীর সফলতায় পুরুষকে কেন ভয় পেতে হবে?

আদিচি নাইজেরিয়ার সমাজে এমন নারীর সাক্ষাৎও পেয়েছেন, পুরুষ যাতে ভয় না পায় এ জন্য ধনসম্পত্তির কথা গোপন রাখেন; এমনকি বাড়ি পর্যন্ত বিক্রি করে দেন। অবিবাহিত নারীর অনেককে সম্মানের আশায় হাতে আংটি পরতেও দেখেছেন তিনি। শুধু সামাজিক চাপে অনেককে বিয়ের পিঁড়িতেও বসতে হয়। এসব সামাজিক অবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ নয় বলেও আদিচি মনে করেন, যেহেতু তা সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় অঙ্গীভূত হয়ে আছে। আবার নাইজেরিয়ায় মেয়েদেরকে মেয়েদের প্রতিযোগী করে গড়ে তোলার ব্যাপারে আদিচির মত ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাটা পুরুষের সঙ্গে হলে সমাজের উপকার হতো বলে তাঁর ধারণা।

আদিচির কাছে তাই লৈঙ্গিক সমস্যা নাইজেরিয়ার বড় সমস্যা। আর এ সমস্যা নির্দেশ করে মানুষের কেমন হওয়া উচিত। আবার এটাও ঠিক, এ সমস্যা মানুষের আত্মপরিচয়কেও ঢেকে রাখে। লিঙ্গ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিগুলোই মূলত মানুষের স্বাধীনতা, সুখ আর সমৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে আদিচির দৃঢ় বিশ্বাস।

নারী ও পুরুষের জৈবিক পার্থক্য নিয়ে আদিচির কথা হলো, এটা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন সমাজব্যবস্থায় এই পার্থক্যকে বড় আকার দিয়ে কেউ ‘অধিপতি’ আর কেউ-বা ‘অধস্তনে’ পরিণত হয়েছে। আদিচি উদাহরণ দিয়েছেন ঘরকন্নার—বহু বছরের সামাজিক নিয়মে নারীদের এ কাজে এমনভাবে ব্যাপৃত রাখা হয়েছে, যেন নারীরা রান্না করার জিন নিয়েই জন্মগ্রহণ করে থাকে। বাস্তবে তা কিন্তু সত্য নয়। এখন পৃথিবীর বড় বড় শেফরা লিঙ্গগত দিক থেকে পুরুষ। আদিচি দেখিয়েছেন, আসলে প্রথা, সামাজিক বিধি, মনোভাব ইত্যাদি এমন স্বতঃসিদ্ধ ধারণা তৈরি করেছে। অন্যদিকে লিঙ্গগত সামর্থ্য তৈরি হওয়ার পেছনে আদিচি সুযোগ-সুবিধাকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখেছেন। অর্থাৎ ছেলেদের মতো মেয়েরাও সমান সুযোগ-সুবিধা পেলে তাদের কখনো পিছিয়ে পড়ার কারণ ছিল না। এ ছাড়া সন্তান বড় করার সময় লিঙ্গের চেয়ে সামর্থ্য ও আগ্রহকে গুরুত্ব দিলে নারী ও পুরুষের মধ্যে এই বৈষম্য সৃষ্টি হতো না।

লিঙ্গ বিষয়ে আদিচি শৈশব থেকে যা শিখে আসছিলেন, বড় হওয়ার পর তা পরিত্যাগ করতে থাকেন। যদিও কিছু ব্যাপার তাঁকে মাঝেমধ্যে বেশ ভোগায়। প্রথমবার প্রশিক্ষক হিসেবে স্নাতকোত্তর ক্লাসে যোগ দেওয়ার সময় তিনি পুরুষোচিত স্যুট পরেছিলেন। আদিচির ধারণা ছিল, নারীসুলভ পোশাকে ক্লাসে তিনি কম গুরুত্ব পাবেন। কারণ, নাইজেরিয়ার সমাজে সাজগোজে পুরুষকে আদর্শ হিসেবে দেখার রীতি রয়েছে। নারীসুলভতার মাত্রা যত কম, এখানে গ্রহণযোগ্যতা তত বেশি। আদিচির পরে মনে হয়েছে, এতে তাঁর নারীসত্তার অপমান করেছেন তিনি নিজেই। পোশাকটাও তাঁর আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি তৈরি করেছিল। স্যুটের ঘটনাটি আদিচিকে বেশ নাড়াও দিয়েছিল। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, নিজের সমগ্র নারীত্বই তাঁর সত্যিকার সত্তা আর এ নিয়েই সম্মানিত হওয়া উচিত। নারী হিসেবে এটাই তাঁর প্রাপ্য। পৃথিবীর যাবতীয় জ্ঞান, রাজনীতি, দর্শন প্রভৃতি আদিচির পছন্দের বিষয়; তাতেই তিনি আনন্দ পান। মেয়েলিপনাও তাঁর আনন্দের সামগ্রী। তাই পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ একসময় আদিচির কাছে তুচ্ছ হতে থাকে।

তাহলেও আদিচি প্রতিনিয়ত খেয়াল করেছেন, নাইজেরিয়াতে লিঙ্গগত ফাঁকফোকর নিয়ে কথাবার্তা বলা বেশ কঠিন বিষয়। এতে লোকজন একদিকে যেমন বিরক্ত হয়, অন্যদিকে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকতে তারা পছন্দও করে। কারণ, লিঙ্গগত সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বললে তার সমাধানের প্রসঙ্গও চলে আসে; যা চলমান বাস্তবতার জন্য পীড়াদায়ক। তারপরও কথা যে হয় না, তা নয়। কথাটা আসে খোদ নারীবাদ নিয়ে। অনেকের জিজ্ঞাসা, তাই শব্দটা ‘মানবাধিকার’ হলেও তো হতো। তার উত্তরে আদিচির বক্তব্য ভিন্ন। তাঁর মতে, নারীবাদ মানবাধিকারের বিষয় হলেও, লিঙ্গগত সমস্যাকে মানবাধিকার দিয়ে মোকাবিলা করতে চাইলে তাতে মূল সমস্যাটাকে ঢেকে রাখা হয়। অস্বীকার করা হয় নারীর লিঙ্গগত বৈষম্যকে। তা ছাড়া সমস্যাটি তো আর মানুষ হওয়া নিয়ে নয়, বরং তা নারী হওয়ার প্রশ্নে। অর্থাৎ সারা পৃথিবীতে ‘নারী’ ও ‘পুরুষ’ দুটি বর্গে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আর শতকের পর শতক ধরে নারীরা পুরুষ কর্তৃক শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে। তাই পুরুষের উচিত সমস্যা মোকাবিলায় প্রথমেই বিষয়টা স্বীকার করে নেওয়া। অথচ অনেক পুরুষ এটা স্বীকার করতে চায় না কিংবা অন্য বাস্তবতা দিয়ে ব্যাখ্যা করতে চায়। অনেকে আবার নারীবাদকে একটা আক্রমণাত্মক বিষয় ও হুমকি হিসেবে দেখে। আদিচি মনে করেন, এর কারণ ছেলেদের বড় করার প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি। ছোটবেলা থেকেই ধারণা দেওয়া হয় যে পুরুষেরা প্রকৃতিপদত্তভাবে ক্ষমতাশালী আর এটাই পুরুষত্বের একার সম্ভ্রম। সুতরাং নারীবাদ এতে প্রবলভাবে আঘাত হানতে পারে।

নারীবৈষম্যের ক্ষেত্রে যারা দরিদ্রতাকে কারণ হিসেবে দেখে তাদের জবাবে আদিচির বক্তব্য হচ্ছে—এটা সঠিক নয়। কেননা ‘লিঙ্গ’ আর ‘শ্রেণি’ এক জিনিস নয়। আর দরিদ্র হলেও ওই শ্রেণির পুরুষেরা নিজেদের সুযোগ-সুবিধা ঠিকই আদায় করে নেয়। সুতরাং নারীর সমস্যা শ্রেণিগত নয়, লিঙ্গগতই।

আদিচি আরও দেখেছেন, অনেক পুরুষ লিঙ্গগত বিষয় নিয়ে চিন্তা করতেও নারাজ কিংবা এ নিয়ে একবারেই ভাবিত হয় না। নাইজেরিয়ার নারী সমস্যার ক্ষেত্রে এটাকেও একটা কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন আদিচি। কারণ, প্রাত্যহিক জীবনে নারীকে ছোট করে দেখার যে প্রবণতা সর্বত্র বিদ্যমান, পুরুষেরা ব্যক্তিগতভাবে তাতে প্রতিবাদ করলে হয়তো ধীরে ধীরে এসব অস্বস্তিকর বিষয়ের উত্তরণ হতে পারত। কিন্তু বিষয়গুলো পুরুষের ধর্তব্যের মধ্যে থাকে না আর এ নিয়ে আলোচনাটাকে অনেকে অস্বস্তিকর বিষয় হিসেবেও দেখে।

অন্যদিকে নারীবৈষম্যের ক্ষেত্রে যারা দরিদ্রতাকে কারণ হিসেবে দেখে তাদের জবাবে আদিচির বক্তব্য হচ্ছে—এটা সঠিক নয়। কেননা ‘লিঙ্গ’ আর ‘শ্রেণি’ এক জিনিস নয়। আর দরিদ্র হলেও ওই শ্রেণির পুরুষেরা নিজেদের সুযোগ-সুবিধা ঠিকই আদায় করে নেয়। সুতরাং সমস্যাটা পদ্ধতিগত। আর সব শ্রেণির ক্ষেত্রেই নারীদের ব্যাপারে পুরুষের সমান দৃষ্টিভঙ্গি। বর্ণগত দিক থেকেও ওই একই জিনিস দেখেছেন আদিচি। অভিজ্ঞতা থেকে উপলব্ধি করেছেন, একজন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ নারীদের সমস্যাকে মানুষের সমস্যা হিসেবে দেখার পরামর্শ দিলেও, কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষের সমস্যাকে নিজে পুরুষের সমস্যা হিসেবে দেখতে নারাজ। সুতরাং নারীর সমস্যা শ্রেণিগত নয়, লিঙ্গগতই।

নাইজেরিয়াতে নারীকে দমিত করে রাখার একটা বড় দোহাই হচ্ছে সংস্কৃতি। বলা হয়ে থাকে, নারীর অধস্তনতা আফ্রিকার সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। সে ব্যাপারেও আদিচির দ্বিমত আছে। তাঁর কথা হচ্ছে, সংস্কৃতি জিনিসটা তো পরিবর্তনশীল। উদাহরণ দিয়ে আদিচি দেখিয়েছেন, ইগবো সংস্কৃতিতে যমজ সন্তানের জন্ম একসময় ‘অমঙ্গল’ হিসেবে দেখা হতো। তাই জন্মের পর যমজদের হত্যা করাই ছিল সামাজিক প্রথা। এখন সে প্রথার বিলুপ্তি ঘটেছে আর যমজেরা দিব্যি সমাজে সাধারণ জন্মের মতো গৃহীত হচ্ছে। অর্থাৎ এখন এটি একটি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। সুতরাং আদিচির কাছে সংস্কৃতি হচ্ছে ইতিবাচক একটি বিষয়। সম্প্রদায়কে সুরক্ষা ছাড়াও সংস্কৃতি–পরম্পরা সৃষ্টিতে বড় ভূমিকা পালন করে থকে।

ইগবো সংস্কৃতির কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তনের হাওয়া লাগলেও নারীসংক্রান্ত বিষয়ে পুরোনো ধ্যানধারণা ও ঐতিহ্যই চলমান রয়েছে। এসব ধ্যানধারণা ও প্রথার অনেক কিছুই নেতিবাচক। আদিচি উদাহরণ দিয়েছেন আরও অন্য কিছুর মতো পারিবারিক জীবনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে পুরুষের প্রাধান্যকে। আদিচি নিজে শিক্ষিত ও সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও ভূমি বা অর্থনৈতিক বিষয় কিংবা পারিবারিক বৈঠকে দেখেছেন তাঁর মতের মূল্য নেই। এমনকি আগ্রহী থাকা সত্ত্বেও বৈঠকে তাঁর স্থান হয় না। লিঙ্গের দিক থেকে তিনি নারী বলেই এমন হয়। অথচ আদিচি জানেন বৈঠকে অংশগ্রহণ কিংবা মতামত দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর পূর্ণ অধিকার রয়েছে। তাই আদিচির সিদ্ধান্ত নারীর অধিকার সুরক্ষা ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠায় এমন সংস্কৃতির অচলায়তন ভেঙে নতুন ধারা সৃষ্টি করা উচিত। কারণ, মানুষই প্রয়োজনে সংস্কৃতি তৈরি করে আর আফ্রিকাতে এটা অসম্ভব কিছু নয়।

নাইজেরিয়া তথা আফ্রিকার লিঙ্গগত অবস্থান বিচারে আদিচির উপলব্ধি, চিন্তাভাবনা ও কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যে আসলেই তিনি একজন নারীবাদী। চৌদ্দ বছর বয়সে বড় ভাইয়ের বন্ধু ওকুলোমা তাঁকে নারীবাদী বলে যে তকমা দিয়েছিলেন আর আদিচি অভিধানে নারীবাদের যে অর্থ দেখেছিলেন, অন্তত সেই বিচারেও। অভিধানে কিশোরী আদিচি নারীবাদী শব্দটার মানে দেখেছিলেন ‘সব লিঙ্গের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমতায় বিশ্বাসী’ অর্থে। অবশ্যই এমন বিশ্বাস তাঁর রয়েছে আর সে অর্থে আদিচি মনে করেন তাঁর প্রমাতামহীও তাহলে একজন নারীবাদী ছিলেন। কারণ, তিনিও জমিজমায় নিজের মালিকানা নিয়ে সোচ্চার ছিলেন, নিজের মতকে প্রাধান্য দিতেন, নিজের অধিকারের ব্যাপারে বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবাদ করতেন। নারীবাদ শব্দটার প্রচলন তখন না থাকলেও তাঁকে একজন যথার্থ নারীবাদী বলে আখ্যা দেন আদিচি। এমনকি নিজের ভাই ক্যানে সম্পর্কেও আদিচিরি মত হচ্ছে, লিঙ্গগত সমতায় বিশ্বাসী বলে তিনিও একজন প্রকৃত নারীবাদী। অর্থাৎ নারীবাদী হওয়ার জন্য নারী বা পুরুষ, এমন লিঙ্গ-পরিচয়ের দরকার নেই বলে তাঁর দাবি। বরং আদিচি মনে করেন, নারীবাদ শব্দটাকেও পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন। নারীবাদকে এই অর্থে প্রতিষ্ঠিত করা দরকার যে চলমান পৃথিবীতে নারীর প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি বিদ্যমান, তা সমস্যা হিসেবে স্বীকার করা এবং একই সঙ্গে তার সমাধানে কাজ করে যাওয়া।

নাইজেরিয়ার লিঙ্গগত সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে এবং পরবর্তীকালে আমেরিকায় বসবাসকালে আদিচি উন্নত বিশ্বের যে লিঙ্গগত সমস্যা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন তাতেই স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধির গুণে তাঁর ভেতরে নারীবাদী চিন্তার উদ্ভব হয়। ফলে তাঁর কাছে মনে হয়েছে, শুধু নারীর একার অধিকার বা সমৃদ্ধির প্রশ্নে নয়, মানবাধিকার ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ গঠনে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও পুরুষের সমান সম্মান প্রতিষ্ঠা খুব জরুরি। এ ক্ষেত্রে তিনি সমাজের সবাইকে নারীবাদী হয়ে ওঠার পরামর্শ দেন। কেননা তাঁর পর্যবেক্ষণে ‘নারীত্ব’ ও ‘নারীবাদ’ পাস্পরিকভাবে একচেটিয়া বিষয় নয়। বরং এর সঙ্গে নারী-পুরুষ উভয়ে, এমনকি পুরো সমাজকাঠামো এবং বিশ্বব্যবস্থাও সম্পৃক্ত। তাই প্রতিটি সমাজে বিদ্যমান লিঙ্গগত বৈষম্যগুলো চিহ্নিত করে তা দূরীকরণে নারী ও পুরুষকে যৌথভাবেই ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান আদিচির।