সাক্ষাৎকার

তদন্তের আগে বলা যাবে না র্যাব জড়িত

জিয়াউল আহসান
জিয়াউল আহসান

প্রথম আলো: নারায়ণগঞ্জ কি সন্ত্রাসের দুর্গ হয়েই থাকবে?
জিয়াউল আহসান: নারায়ণগঞ্জকে অবশ্যই গুরুত্ব দিচ্ছি। সেখানে নতুন অধিনায়ক গেছেন। উত্তাল পরিস্থিতি। তাই একজন পুরোনো অধিনায়ককে বেছে নেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলো: সাত খুনের ঘটনায় আপনাদের শ্যাডো ইনভেস্টিগেশন হয়েছে। কী বলছে সেই তদন্ত?
জিয়া: যেহেতু দুটো তদন্ত হচ্ছে, তাই কিছু বলছি না। এটুকু বলতে পারি, তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে কাজ হবে। আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু কাজ করেছিলাম। সেখানে কিছু ব্যত্যয় পেয়েছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ ছিল। তাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। আর সরকারের নির্দেশেই আমরা অধিনায়ক ও কোম্পানি কমান্ডারকে তুলে এনেছি।
প্রথম আলো: লাশগুলো বাঁধার জন্য যেসব ইট ব্যবহার করা হয়েছে, একই রকম ইট দেখা গেছে র‌্যাবের দপ্তেরর পাশের নির্মাণাধীন ভবনে৷ এ রকম ঘটনা বিরল নয় কি?
জিয়া: র‌্যাবের পোশাক পরে মানুষ যে ছিনতাই করছে সেটা আপনি দেখছেন না? র‌্যাবের পোশাক পরে মানুষ বাসায় গিয়ে লোক এনে লাশ ফেলছে। ঝিনাইদহে রফিক হত্যা দেখুন। র‌্যাবের বদনাম হলো। আমরা পরে দেখলাম সেই খুনে শাশুড়ি ও নিহতের পরিবার জড়িত। তাই, এখনই মন্তব্য করা ঠিক নয় যে র‌্যাব এসব ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। আগে তদন্ত হোক। তারপর দেখুন র‌্যাব বা সরকার ছাড় দিচ্ছে কি না।
প্রথম আলো: মিডিয়ার কারণে অভিযুক্তরা পালাতে পেরেছে—এমন ধারণা র‌্যাবের কেন হলো?
জিয়া: র‌্যাব তা বলেনি। তবে নজরুলের শ্বশুর যখন বলছেন যে, অমুককে তিনি অত টাকা দিয়েছেন। ওই লোকটা কে? তার ইতিহাস জানা উচিত। নজরুলের শ্বশুর কিন্তু বিভিন্ন রকম কথা বলছেন। কার মাধ্যমে টাকা দিয়েছেন, প্রথম আলোর প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছু নাম বললেন। আপনারা দয়া করে এই নামগুলো যাচাই করুন। নারায়ণগঞ্জে ওই ধরনের লোক আছে কি না। তিনি প্রথম দিন বলেছেন এক কোটি, দুই দিন পরে তিন কোটি, তারপর বলছেন ছয় কোটি টাকা দিয়েছেন। কাকে কখন কীভাবে টাকাটা দিয়ে এ কাজটি করানো হলো, তা তিনি বলতে পারছেন না।

প্রথম আলো: আপনি বলছেন যে নজরুলের শ্বশুর প্রথমে এক কোটি পরে দুই কোটি ও ছয় কোটি টাকা নেওয়ার কথা বলেছেন। এর ভিত্তি কী?
জিয়া: ভিন্ন ভিন্ন দিনে তিনি এটা বলেছেন। আমার কাছে তাঁরবক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড রয়েছে।

প্রথম আলো: লক্ষীপুর ও লাকসামে র‌্যাব-১১ প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। কোনো তদন্ত হয়েছে কি?

জিয়া: যেকোনো গুলিবিনিময়ের ঘটনায় ডিসি তদন্ত করেন। এর ওপর নির্ভর করতে হবে। তিনি যেভাবে রিপোর্ট দেবেন সেভাবে কাজ হবে। ওই ঘটনাগুলো এ ধরনের ছিল। লাকসামের ঘটনায় সম্ভবত আমরা মানবাধিকার কমিশনের চিঠি পেয়েছিলাম। যেখানে গুলি সেখানেই তদন্ত। এর বাইরে কাজ করার এখতিয়ার আমাদের নেই।
প্রথম আলো: বন্দুকযুদ্ধ এতটাই বেশি যে আপনার সাফল্যের দাবির সঙ্গে তা সংঘাত সৃষ্টি করে।
জিয়া: এ পর্যন্ত ৭৫৬ বা ৭৫৮টি বন্দুকযুদ্ধ ঘটেছে। ২০১৩ সালে বন্দুকযুদ্ধে সম্ভবত ৩২ জন মারা গিয়েছিল। বছরওয়ারি এটা হ্রাস পেয়েছে।
প্রথম আলো: ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টার যা–ই বলুন, র‌্যাবের কেউ হতাহত হন কি?
জিয়া: এটি বিশেষায়িত বাহিনী। তারা অত্যন্ত দক্ষ। এতে সন্দেহ নেই।
প্রথম আলো: ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের আগে লে. কর্নেল তারেককে নারায়ণগঞ্জে বদলি করা হয়। কী বিবেচনায়?
জিয়া: সামরিক কর্মকর্তাদের বদলি আমাদের সামরিক সচিবের (এমএস) শাখা করে। তারা করেছে।
প্রথম আলো: তাঁর নাম কে প্রস্তাব করল? প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নাকি এএফডি থেকে?

জিয়া: না। র‌্যাবে লে. কর্নেলদের জন্য ১৩টি পদ আছে। পদ শূন্য হলে তার পরিবর্তে আরেকজন আসে। সেভাবে তারেক সাহেব সিও হন।
প্রথম আলো: অবসরে পাঠানো আরিফ হোসেনের বাড়ি র‌্যাব-১১ এলাকাভুক্ত নরসিংদী। এটা কি এড়ানো অসম্ভব ছিল?
জিয়া: কিছু ক্ষেত্রে এ নিয়ম রক্ষা করা সম্ভব হয় না। তবে আপনি যেটা বলছেন সেটা সম্ভব ছিল।

প্রথম আলো: নজরুল পরিবারের অভিযোগ, সন্ত্রাসী নূর হোসেনের নেতৃত্বাধীন চক্রের সঙ্গে তারেক সাহেবের ঘনিষ্ঠতা ছিল। এটা সত্য হলে তা পেশাগত অসদাচরণ ছিল কি না?
জিয়া: এটা যদি থাকে তাহলে তার অনেকগুলো কারণে থাকতে পারে। আমিও অনেক সন্ত্রাসীর সঙ্গে কথা বলি। যেমন, শাহাদত ভারত থেকে আমাকে ফোন করেন। আপনি কাজ করতে গেলে অপরাধীর সঙ্গে মিশতে হবে। না মিশলে অপরাধের ধাঁচটা বুঝতে পারবেন না।

প্রথম আলো: আপনারা সাধারণত অভ্য¯ন্তরীণ তদ¯ন্ত কমিটির ওপরই নির্ভর করেন। এবারে ব্যতিক্রম হলো কেন?
জিয়া: এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক কমিটি করেছি।
প্রথম আলো: এবারের কমিটি বিশেষ উদ্যোগ কি না? প্রথাগত রেওয়াজ থেকে একটি বিচ্যুতি বলতেই হয়?
জিয়া: অবশ্যই। এখানে একজন লে. কর্নেল, একজন ডিআইজি, একজন অতিরিক্ত এসপি ও একজন মেজর। চারজনকে দিয়ে তদ¯ন্ত করাচ্ছি।
প্রথম আলো: তাদের রিপোর্ট পাওয়ার আগেই যে তিনজনকে সরানো হলো, সেটা করে জনমনে একটা ছাপ পড়ল, স্বীকার করা হলো যে র‌্যাবই জড়িত।
জিয়া: একজন আইনজীবী, একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং আরো পঁাচজন মারা গেলেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সেখানে গত বা দেড় মাসে কী রকম খুন বা অপরাধ ঘটেছে। নিশ্চয় এর পেছনে কারণ থাকতে পারে।
প্রথম আলো: আইনশৃঙ্খলা প্রাথমিকভাবে ডিসি–এসপির দেখার দায়িত্ব। সাধারণভাবে কাজটা র‌্যাবের নয়। এটাও প্রমাণ করে যে, র‌্যাব জড়িত বলেই এই ব্যবস্থা।
জিয়া: আমি অন্যদের নিয়ে কথা বলব না।
প্রথম আলো: র‌্যাবের কার্যক্রম নারায়ণগঞ্জে স্থগিত করা হয়েছিল কি?
জিয়া: না, স্থগিত করা হয়নি। একটা আন্দোলনের মতো সৃষ্টি হয়েছিল। তার মধ্যে কাজ করতে গিয়ে অনেকে জনরোষের মধ্যে পড়তে পারেন। সে জন্য আমরা কাজ বন্ধ রাখিনি। নিয়ন্ত্রণ ছিলই, ওখানে অল্প কয়েকজন অফিসার, সিওসহ কয়েকজনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অফিসার না থাকলে কাজে বিঘ্ন ঘটা স্বাভাবিক।
প্রথম আলো: নারায়ণগঞ্জবাসীর মধ্যে র‌্যাবের প্রতি যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে, তা দূর করবেন কীভাবে?
জিয়া: আবার যখন বড় সাফল্য আসবে, সব ঠিক হয়ে যাবে। র‌্যাবের ওপর মানুষের আস্থা আছে, থাকবে। দু-এক ব্যক্তি অন্যায় করতে পারে। সরকার তদন্তের আগেই সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তঁাদের চাকির থেকে অকালীন অবসর দিয়েছে৷ এটা তো আমি দেখি সরকারের জন্য ভালো উদ্যোগ।
প্রথম আলো: কীভাবে ভালো উদ্যোগ? র‌্যাব-১১-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ এবারেই ওঠেনি।লক্ষীপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে ফোন করে

শাসিয়েছিলেন তারেক সাঈদ। বিএনপির প্রার্থীর বাড়ি তছনছ করেছিল র‌্যাব।

জিয়া: মাঠপর‌্যায়ে যিনি কাজ করছেন, তার সঙ্গে কি আমি মারামারি করব? আমি আপনার বস, আপনি আমার কথা শুনলেন না, তখন আমি ওপরে প্রতিকার চাইব। আপনি আমার অফিসে আসেন, দেখেন, আমার কাছে গতকাল এক লোক এসেছে র‌্যাব নাকি তাঁকে মেরে ফেলবে। বলেছি, আমার মোবাইল নম্বর তোমার স্ত্রীকে দিবা, বাচ্চাকে দিবা, তোমার ভাইকে দিবা।
প্রথম আলো: ওই বিদ্রোহী প্রার্থীকে নির্যাতনের বিষয়টি আপনাদের জানা ছিল?

জিয়া: না, তবে যদি কোনো ব্যত্যয় থাকে, সে ব্যত্যয়টাকে কিন্তু আমাদের সদর দপ্তরকে জানানো উচিত।
প্রথম আলো: গত ১২ ডিসেম্বর লে. কর্নেল তারেকের নেতৃত্বে র‌্যাব লক্ষীপুর বিএনপির নেতার বাড়িতে গিয়ে তার পায়ে গুলি করে। গাড়ি ভাঙচুর করে। এমনকি প্রতিবাদ মিছিলে র‌্যাব গুলি চালিয়ে চারজনকে মারে। এখনো একটি লাশ নিখোঁজ।

জিয়া: এটি আমি পত্রিকায় দেখেছিলাম।
প্রথম আলো: কিন্তু সুষ্ঠু কোনো তদন্ত করেননি।
জিয়া: হ্যাঁ। এর অভ্যন্তরীণ তদন্ত করেছিলাম।

প্রথম আলো: যে তদন্ত কমিটি মার্কিন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয়ে থাকে?
জিয়া: হ্যাঁ। তারা (মার্কিনরা) তো আমাদের অফিসে আসে। আমরা ওদেরও বলে থাকি, আপনারাও সরেজমিনে পরিদর্শন করতে পারেন।

প্রথম আলো: কোনো তদন্তে মার্কিনরা কি অংশ নিয়েছিল?
জিয়া: না।
প্রথম আলো: কর্নেল তারেকের এলাকা লাকসামে বিএনপির সাবেক সাংসদ হুমায়ুন কবির পাঁচ মাস ধরে নিখোঁজ। গত বুধবার তাঁর স্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, র‌্যাব তাঁর স্বামীসহ সাইফুলকে অপহরণ করেছে।

জিয়া: এটা আমি শুনেছি। সাইফুলের আত্মীয় এটা আমাকে বলেছেন। কিন্তু এ রকম খবর পাইনি যে, র‌্যাব এটা করেছে।
প্রথম আলো: তারেক সাঈদের বিরুদ্ধে অনেক গুরুতর অভিযোগ ছিল।
জিয়া: ওনারা যে অভিযোগটি করেছিল, সম্ভবত নয়জনকে গ্রেফতার করেছিল, নয়জনকেই থানায় জমা দেয়। তারা বলছে, তাতে হুমায়ুন কবিরও ছিল, তার ড্রাইভার ও আরেকজন ছিল। তার ড্রাইভারকেও জমা দিয়েছে, কিন্তু হুমায়ুন কবিরসহ আরেকজনকে পাওয়া যায়নি। যখন আমরা তদন্তে যাই দেখি যে, না এ রকম কাউকে ওঠানো হয়নি। শুধু নয়জনকেই ওঠানো হয়েছিল।
প্রথম আলো: এতে এটা অন্তত স্পষ্ট যে, তারেক সাঈদ সম্পর্কিত নানা বিষয় আপনারা তদন্ত করছিলেন। কিন্তু এই ঘটনার আগ পর্যন্ত এমন কিছু তাঁর বিরুদ্ধে পাননি, যার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যেত।

জিয়া: হ্যাঁ।

প্রথম আলো: নারায়ণগঞ্জের ঘাটে র‌্যাবের নৌকা ও ট্রলার বাঁধা ছিল। সেটা হঠাৎ উধাও হয়। জনমনে সন্দেহ আরও বাড়ে। অথচ আপনি প্রমাণ করতে চাইছেন যে এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। বিপথগামীরা করে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংস্থা প্রশ্রয় দিচ্ছে নাকি?
জিয়া: নৌকা–ট্রলার শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, দেশের সব স্থানে র‌্যাবের

কাছে আছে।
প্রথম আলো: জনমনে সন্দেহ ওই নৌকায় করে সাতজনের লাশ নদীবেক্ষ নেওয়া হয়েছিল। সে কারণেই এগুলো সরিয়ে ফেলা হয়। রেশনের বস্তার আলামতও সংস্থার জড়িত থাকার ইঙ্গিতবহ।
জিয়া: এখন তো অনেক লোকের মধ্যে অনেক সন্দেহ থাকতেই পারে।
প্রথম আলো: বলুন, নৌকা সরানো হয়েছিল কি না?
জিয়া: আমি এটা দেখিনি। জিজ্ঞেস করব। পরে বলতে পারব। হয়তো টহল বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অন্যত্র নিয়ে গেছে। আবার হয়তো নিয়ে আসবে।
প্রথম আলো: ছয় কোটি টাকা না হোক, টাকা লেনদেনের দাবি তো নজরুলের শ্বশুর নির্দিষ্টভাবে বলেছেন। খতিয়েও দেখতে বলেছেন। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে আপনারা কিছু আঁচ করেছেন কি না। ব্যাংকের হিসাব যাচাই তো সময়ের ব্যাপার নয়।
জিয়া: আমি জানি না, তদন্ত টিম দেখবে। তিনি কি অ্যাকাউন্ট নম্বর বা কার নামে হিসাব, তা উল্লেখ করেছেন? আমাকে কেউ এসে বলল, একজন ঘুষ খেয়েছেন, আমি তখনই জিজ্ঞেস করব, কার কাছ থেকে খেয়েছেন।
প্রথম আলো: ডাচ্-বাংলা ও যমুনা ব্যাংকের লেনদেন আপনারা সহজেই দেখতে পারেন।
জিয়া: আপনি কোথায় পেলেন এই তথ্য?
প্রথম আলো: একজন বিশিষ্ট আইনজীবী বলেছেন, নজরুলের শ্বশুর তো বলেছেনই। দ্বিতীয়ত, র‌্যাবের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের’ হয়ে কাজ করার অভিযোগ তো নতুন নয়।
জিয়া: সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি অনেক কিছুই বলতে পারেন। ঝিনাইদহের রফিক হত্যা, পাঁচ–সাত দিন ধরে ফলাও করে লেখালেখি হয়েছে র‌্যাব এটা করেছে। পরে দেখা গেল নিহত ব্যক্তির শাশুড়ি ও পরিবার জড়িত।
প্রথম আলো: আপনি সন্দেহের যে সুবিধা নিতে চাইছেন, ঝিনাইদহের মতো নারায়ণগঞ্জেও, তেমন সম্ভাবনা আমরা আপাতত দেখি না।
জিয়া: আমি বলেছি হতেও পারে। আবার এটাও নিশ্চিত, তাও বলছি না।
প্রথম আলো: লক্ষ্মীপুরে যখন হেলিকপ্টার ব্যবহারের মতো ঘটনা ঘটল। তখনো যদি র‌্যাব-১১–এর জবাবদিহি কঠোরভাবে নিশ্চিত হতো, তাহলে হয়তো নারায়ণগঞ্জ ট্র্যার‌্যাজেডি এড়ানো যেত। কিন্তু এত সব অভিযোগ সত্ত্বেও সন্দেহের বশে তারেককে সরানো হয়নি। মন্ত্রীর জামাতা বলেই কি?
জিয়া: মন্ত্রীর জামাতা বা অন্য কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির আত্মীয় হোক, সংস্থাটা এমনভাবে কাজ করে যে, অন্য কারও হাত নেই। যার মাধ্যমে কোনো কাজ করে পার পেয়ে যাবে। র‌্যাবে এটা সম্ভব নয়।
প্রথম আলো: সাংসদ শামীম ওসমান এবার যে র‌্যাবকে জড়িয়ে যুক্তিগুলো দিচ্ছেন, সেগুলো মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে নাকি?
জিয়া: আমাদের তদন্ত কমিটি যদি মনে করে, তাহলে তাঁর কাছ থেকে বক্তব্য নিতেই পারে। তিনি তো আর বলেননি আমাদের সাক্ষাৎকার দেবেন না, বা সত্য বলবেন না। সেটা তিনি বলেননি।
প্রথম আলো: তারেক সাঈদ ও র‌্যাব-১১-এর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে যেসব তদন্ত হয়েছে, তাতে তারা পরিচ্ছন্নতার ছাড়পত্র লাভ করেছেন। সুতরাং এখন যেটা আপনি তড়িঘড়ি করেছেন, তার গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়বে কি না?
জিয়া: যে জিনিসটা তদন্ত হবে, সে তদন্তের বাইরে আমি যদি কোনো বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করি, সেটা যুক্তিযুক্ত হবে কি না, সেটা আসলে ভাববার বিষয়। প্রতিটি গুলিবিনিময়ের ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। যখন যে বিষয়ে কথা উঠছে, তখনই তা তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের পরে যদি আমি কোনো মন্তব্য করি, সেটা যুক্তিযুক্ত হবে কি না, তা আমার জানা নেই। নারায়ণগঞ্জের ঘটনারও তদন্ত হচ্ছে। আমি কি এর সঙ্গে দ্বিমত করতে পারব? সেই এখতিয়ার আমার আছে কি না?
প্রথম আলো: অর্থাৎ আপনি আমাকে নিশ্চিত করছেন যে, র‌্যাব-১১ এবং তার অধিনায়কের বিরুদ্ধে সার্বিকভাবে যেসব অভিযোগ উঠেছিল, তা আপনারা জেনেছিলেন, তদন্ত করেছিলেন। তাতে র‌্যাব-১১ ও তার সিও নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন।
জিয়া: লক্ষীপুরের তদন্তে কী এসেছে, সেটা আমাকে জেনে বলতে হবে। সম্ভবত মানবাধিকার কমিশনকে একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছিলাম।

প্রথম আলো: পত্রিকায় এমন ইঙ্গিত ছাপা হয়েছে যে, রিজওয়ানা হাসানের স্বামী অপহরণের ঘটনায়ও র‌্যাব-১১-এর হাত ছিল। রিজওয়ানার পরিবার কি সেই সন্দেহ ব্যক্ত করেছে?
জিয়া: না। রিজওয়ানা হাসানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তাঁরা কেউ র‌্যাব জড়িত বলে আশঙ্কা করেননি। বরং পত্রিকায় নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় জড়িত র‌্যাব—এ রকম একটা শিরোনাম এসেছিল। আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। ওই অপহরণের সঙ্গে র‌্যাব মোটেই জড়িত নয়।
প্রথম আলো: আপনি বলছেন র‌্যাবের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি প্রভাবশালী মহল র‌্যাবের দিকে সন্দেহের তির ছুড়ছে। এরা কারা?
জিয়া: শৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশে অনেক রকম বাহিনী আছে। আপনি বলেন, কার সাফল্য রয়েছে? যে কাজ করে তার সাফল্য আসে। র‌্যাব যে কাজগুলো করেছে, সমগ্র জাতি তাকে স্বাগত জানিয়েছে। জঙ্গিবাদ দমন ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থী দমন অনেককে ঈর্ষান্বিত করেছে। ঢাকার রাস্তায় আগে দিনদুপুরে তিন-চারজন মেরে ফেলত। এখন হয় না। এই সাফল্যের কারণে যাদের হিংসা হচ্ছে, আমি সেই সব মহলের প্রতি ইঙ্গিত করছি। জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব রোধে র‌্যাব প্রচুর কাজ করেছে। এখন র‌্যাবকে যদি বিরত রাখা যায়, তাহলে সন্ত্রাসীরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। জঙ্গিত্বে দেশ উত্তাল হবে। এ জন্যই বলছি, যারা সন্ত্রাসীদের মদদ দেয়, তারাই র‌্যাববিরোধী প্রচারণা উসকে দিতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি।
প্রথম আলো: সাম্প্রতিক কালে আরও অনেক অপহরণ ও গুম ঘটেছে। এখন 

পরের অংশ পড়তে ক্লিক করুন