বাংলাদেশে শিশুবিবাহ পরিস্থিতি

>৯ ডিসেম্বর প্রথম আলোর আয়োজনে ও ইউএনএফপিএর সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশে শিশুবিবাহ পরিস্থিতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।

আলোচনায় সুপারিশ

* বিয়ের আগে ছেলে ও মেয়ের বয়স সঠিকভাবে যাচাই করতে হবে

* নকল জন্মনিবন্ধন প্রদান বন্ধ করা প্রয়োজন

* অল্প বয়সে বিবাহিতদের স্কুল–কলেজের শিক্ষা যেন বাধাগ্রস্ত না হয়

* দ্রুত বাল্যবিবাহ নিরোধআইন বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

* শিশুবিবাহপ্রবণ অঞ্চলে সচেতনতামূলক কর্মশালার ব্যবস্থা জরুরি

* দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য বৃত্তি প্রদান অব্যাহত রাখা জরুরি

* শিশুবিবাহ রোধে স্থানীয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন

* শিশুবিবাহ সম্পর্কিত মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে হবে

* শিশুবিবাহ নিয়ে কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের সমন্বয় করতে হবে

* স্থানীয় প্রশাসন, সুশীল সমাজ ও সমাজের সচেতন ব্যক্তিদের সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসতে হবে

 আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম
বাংলাদেশে কার্যত শিশুবিবাহ নিষিদ্ধ। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ জন্য আইন হয়েছে। আমাদের সমাজে আগের চেয়ে এখন কম শিশুবিবাহ হচ্ছে।

তবে পুরোপুরি বন্ধ করা এখনো সম্ভব হয়নি। শিশুবিবাহ কমিয়ে আনার জন্য সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। সমাজের মানুষের মধ্যে কীভাবে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়, শিশুবিবাহ কীভাবে আরও কমানো যায় এবং এর বর্তমান পরিস্থিতি কী, সে বিষয়ে আজকের আলোচনা। এখন এ বিষয়ে আলোচনা করবেন মো. বিল্‌লাল হোসেন।

মোহাম্মদ বিল্‌লাল হোসেন

মোহাম্মদ বিল্‌লাল হোসেন
প্রাপ্ত বয়সের আগে বিবাহ হলে তাকে শিশুবিবাহ বলা হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মেয়েদের ন্যূনতম বিয়ের বয়স ১৮ বছর। অন্যদিকে ছেলেদের বিয়ের বয়স ২১ বছর। এর আগে কেউ বিয়ে করলে সেটাকে শিশুবিবাহ বলা হয়।

কিন্তু সাধারণ মানুষের ধারণা হলো, ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে বা মেয়েশিশু। তারা অনেকেই মনে করে না যে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সের ছেলে–মেয়েরা শিশু। এ ধরনের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য আমাদের জরুরি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে শিশুবিবাহ রোধ করা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়বে।

শিশুবিবাহ মানবাধিকারে ব্যাঘাত ঘটায়। একটি কন্যাশিশুর ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হলে সে অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়। শিশুবিবাহ একপ্রকার জোরপূর্বকভাবে সম্পন্ন হয়। বিয়ের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মেয়ের সম্মতি থাকে না। কিন্তু পরিবারের সদস্যদের চাপে বাধ্য হয়ে তাদের বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়।

২০১৪ সালে প্রদত্ত বাংলাদেশ জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্যসেবার (বিডিএইচএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে শিশুবিবাহের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। এশিয়া মহাদেশের মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে বাংলাদেশ। এটা হতাশাজনক। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজন মেয়ের মধ্যে তিনজনের ১৮ বছরের আগে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তবে শিশুবিবাহের পরিমাণ কমছে।

১৯৯৫-৯৯, ২০০০-০৪, ২০০৫-০৯ এবং ২০১০-১৪ সালের চিত্র দেখলে লক্ষ করা যাবে যে শিশুবিবাহের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কমছে। ১৯৯৫-৯৯ সালে ১৫ বছর বয়সের নিচের শিশুবিবাহের হার ছিল ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০১০-১৪ সালে ১৫-১৭ বছর বয়সের শিশুবিবাহের পরিমাণ ৪০ থেকে ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে। পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায় যে শিশুবিবাহের পরিমাণ কমছে। তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী কমছে না।

মূলত পারিবারিক অসচেতনতা, দারিদ্র্য ও শিক্ষার অভাবে শিশুবিবাহ হয়ে থাকে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ছে এমন প্রতি চারজন মেয়ের মধ্যে একজনের বিয়ে হয়ে থাকে। যারা পড়ালেখা করে না, তাদের প্রতি চারজনের দুজন কিংবা তিনজনকেই অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কিছু সামাজিক ও ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণেও শিশুবিবাহ হয়ে থাকে।

দরিদ্র পরিবারে একটি সুশ্রী মেয়ে থাকলে মা–বাবা তার নিরাপত্তা দিতে পারেন না। মেয়েকে নিয়ে নানা আতঙ্ক কাজ করে। তাই মেয়ের অল্প বয়সেই বিয়ে দেন।

পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করেও শিশুবিবাহ হয়ে থাকে। অনেক সময় মেয়ে কাউকে পছন্দ করে নিজের ইচ্ছেয় ঘর বাঁধে। অনেকে এটাকে পরিবারের সম্মানহানি বলে মনে করেন। আবার স্কুলফেরত মেয়েরা বখাটে দ্বারা উত্ত্যক্তের শিকার হয়।

কিন্তু অভিভাবক মেয়েটিকেই দোষ দেয়। অনেক সময় এলাকার বখাটেরা মেয়েদের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য ফ্লেক্সিলোডের দোকান থেকে নম্বর জোগাড় করে বিরক্ত করে।

শিশুবিবাহ হওয়ার পেছনে সমাজের কিছু মানুষের সমর্থন থাকে। তাদের মাধ্যমে বিয়ের নকল কাগজপত্র তৈরি করা হয়। শিশুবিবাহের ক্ষেত্রে প্রশাসনও নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে। তবে স্থানীয় প্রশাসন এখন অনেক তৎপর হয়েছে।

শিশুবিবাহ নিয়ে আইন রয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত বাজেট পাওয়া যায় না বলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসন নীরব থাকে। সবকিছুর পর বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েটির কিছু করার থাকে না। তাকে পরিস্থিতি মেনে নিতে হয়।

কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে যায়। এটা হলো পরিকল্পনা ছাড়া গর্ভ। পরে মা ও শিশু দুজনের স্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হয়।

হুমায়রা ফারহানাজ

হুমায়রা ফারহানাজ
একটা মেয়ের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর। কিন্তু আমাদের সমাজে এত দিন অপেক্ষা করা হয় না। পূর্ণবয়স্ক হওয়ার আগেই মা–বাবা সন্তানদের বিয়ে দেন। এভাবে শিশুবিবাহ হয়। শিশুবিবাহ ঠেকাতে একত্রে কাজ করতে হবে। প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে শিশুবিবাহ রুখতে এগিয়ে আসতে হবে।

শিক্ষার মাধ্যমে মেয়েদের জীবনদক্ষতা বাড়ানো যেতে পারে। ছেলেদেরও বাদ দেওয়া যাবে না। আমাদের দেশের কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। তারা এ–জাতীয় বিষয়গুলোকে গোপন করতে চায়। প্রাপ্তবয়স্ক হলেও এসব বিষয়ে ধারণা থাকে না। তাই ছোটবেলা থেকেই তাদের যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। তাহলে গর্ভকালে কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। অন্যদিকে ছেলেদেরও এ বিষয়ে ধারণা থাকা প্রয়োজন।

 শিশুবিবাহ কমাতে মেয়ে–ছেলে উভয় পরিবার ভূমিকা রাখতে পারে। অনেকের ধারণা অল্প বয়সী মেয়েরা সংসারী হয়। নিজেকে ছেলের পরিবারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এসব ভ্রান্ত চিন্তাভাবনা দূর করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে তরুণদের কাজে লাগানো যেতে পারে। তাঁরা সচেতন হলে পরবর্তী সময়ে শিশুবিবাহ থেকে বিরত থাকবে।

বিবাহিত মেয়েদের শিক্ষা অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কিন্তু বিয়ের পর অনেক ঘাত–প্রতিঘাত অতিক্রম করে মেয়েরা শিক্ষার দিকে অগ্রসর হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের গ্রহণ করতে চায় না। তারা স্কুলে থাকলে অন্য মেয়েরা বিয়ের প্রতি আসক্ত হবে—এমনটা ধারণা করা হয়। এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন।

রোকসানা সুলতানা

রোকসানা সুলতানা
বিভিন্ন সংস্থা মেয়েদের নিয়ে কাজ করলেও বাবা-মায়েরাই তাদের শেষ অবলম্বন। তাঁরা যেকোনো সময় মেয়ের বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এ ছাড়া আত্মীয়স্বজনের প্ররোচনায়ও শিশুবিবাহ হয়ে থাকে।

শিশুবিবাহ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের ধারণা, অল্প বয়সে বিয়ে দিলে সুপাত্র পাওয়া যায়। স্বামীর বাড়ি মেয়েদের শেষ আশ্রয়স্থল।

শিশুবিবাহ শুধু গ্রামাঞ্চলেই হয় না, শহরেও এর প্রভাব লক্ষ করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েরা অল্প বয়সে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। সম্পর্কটা কিছুটা গাঢ় হলে মা–বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলে। শুধু মা–বাবা, আত্মীয়স্বজন কিংবা সমাজের মানুষকে সচেতন করলে চলবে না, কিশোরীদের সচেতন করে তুলতে হবে।

বিভিন্ন সংস্থা কিংবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মেয়েদের মানসিকতার পরিবর্তনের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু কারও একার পক্ষে এই কাজ করা সম্ভব নয়। সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অন্যথায় শিশুবিবাহ বন্ধ হবে না।

দেশে দারিদ্র্য একটা বড় ইস্যু। এর কারণে মেয়েদের নানা ভোগান্তির শিকার হতে হয়। স্কুল পর্যায়ে লেখাপড়া শেষ হওয়ার আগেই মা–বাবা মেয়েদের বিয়ে দেন। তাই শিশুবিবাহ কমাতে হলে শিক্ষার হার বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষকেরা এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আমাদের দেশের শিক্ষকদের যথেষ্ট সম্মান করা হয়। অভিভাবকেরা তাঁদের কথা মানেন।

সৈয়দা কানিতা মাঈশা

সৈয়দা কানিতা মাঈশা
দেশে শিশুবিবাহের হার ৫২ শতাংশ। শিশুবিবাহ বন্ধ করতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করলেও প্রত্যাশা অনুযায়ী সুফল পাওয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রে বাধা হলো আমাদের হাজার বছরের পুরোনো মানসিকতা। এই মানসিকতাই মেয়েকে বোঝা হিসেবে দেখছে। এটা মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে। এ ধরনের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য তরুণদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তরুণদের ওপর সেই বিশ্বাস রেখে বলেছেন, ‘ওরে নবীন, ওরে আমার কাঁচা। ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ, আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।’

আজকাল খবর নিলে দেখা যাবে, বর্তমানে যত শিশুবিবাহ বন্ধ হচ্ছে, তার অধিকাংশই তরুণদের মাধ্যমে। তারা শিশুবিবাহের ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত রয়েছে বলেই এটা করতে সক্ষম হচ্ছে। শিশুবিবাহ শিশুদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্নকে বাধাগ্রস্ত করে।

শিশুবিবাহ সম্পর্কে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্ত সেটা মানা হয় না। শিশুবিবাহের জন্য যে শাস্তির বিধান রয়েছে, সেটা মা–বাবা কিংবা কাজিদের জানাতে হবে। আর শিশুবিবাহের কূফল সম্পর্কে কিশোরীদের জানাতে হবে। সেটা শিশুসুলভ পদ্ধতিতে করা যেতে পারে।

বিভিন্ন কার্টুন–সিনেমার মাধ্যমে শাস্তির বিধানগুলো প্রকাশ করা হলে শিশুরা সেটা বেশি আমলে নেবে। ফলে শিশুবিবাহের শিকার হলে নিজে থেকেই প্রতিবাদ করতে পারবে।

হুমায়রা আজিজ

হুমায়রা আজিজ
অল্প বয়সে বিয়ে হলে মেয়েরা কিছু অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এটা শিশুবিবাহের একটা বড় প্রভাব। নারী অধিকার নিশ্চিত করতে হলে আগে কিশোরী অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, মা–বাবার চিন্তাভাবনা আর কিশোরীদের চিন্তাভাবনার মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে।
কিশোরীরা মনে করছে, বিয়ে ছাড়াও তাদের অনেক কিছু করার আছে। এর উল্টোটা ভাবছেন অভিভাবকেরা।
তাঁরা মনে করেন, মেয়েদের অন্য কিছু করার সুযোগ নেই। তাদের বিয়ে দেওয়া দরকার। আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিলেই ঝামেলা শেষ।

সবাই শিশুবিবাহ বন্ধ করতে চায়। কিন্তু কিশোরীদের অধিকার নিয়ে সেভাবে চিন্তা করে না। তাদের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে অনেক বাল্যবিবাহ হয়। এসব কিশোরী ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার সুযোগ না পেলে সেটা দেশের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সম্প্রতি শিশুবিবাহের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। কিন্তু আশানুরূপভাবে কমেনি। শিশুবিবাহ সমাজ থেকে নির্মূল করতে হলে সামাজিক কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং তা সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রথমে একজন শিশুর চাহিদা বা আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে জানতে হবে। সেই সঙ্গে জানতে হবে ওই কিশোরীর কাছ থেকে রাষ্ট্র কী আশা করে।

কেবল মেয়েদের সচেতন করলেই শিশুবিবাহ বন্ধ হবে না। তাদের সাহায্য করার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ থাকতে হবে।

অনেক সময় আমাদের সামনে শিশুবিবাহ হয়। কিন্তু আমাদের কিছু করণীয় থাকে না। তাই এখন যুগোপযোগী আইন ও নীতিমালা প্রয়োজন।

তাসলীমা ইয়াসমিন

তাসলীমা ইয়াসমিন
২০১৭ সালের ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ’ আইনটি ‘বিশেষ বিধান’ রেখে পাস হয়েছে। এ বিধানটি যেন ন্যায়সংগত ও সীমিত ক্ষেত্রে শুধু প্রয়োগ হয় এ আইনের চূড়ান্ত বিধিমালায় এটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
খসড়া বিধিমালা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামতের মূল্যায়ন করা দরকার।

একই সঙ্গে জেলা পর্যায়ের আদালতে এই বিশেষ বিধানের অধীনে কতগুলো আবেদন জমা পড়ে ও এর নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তার একটি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া এই আইনটি পাসের আগে ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের অধীনে কয়টি মামলা হয়েছে, এসব মামলার কোনো নিষ্পত্তি হয়েছে কি না সে ক্ষেত্রেও অনুসন্ধান প্রয়োজন।

আমাদের দণ্ডবিধিতে ধর্ষণের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এর পরিবর্তন প্রয়োজন। কারণ, আন্তর্জাতিক আইনের পরিমণ্ডলে শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করা ও শিশুবিবাহ নিরোধ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, ধর্ষণের সংজ্ঞা এর অন্তরায়।

শিশুবিবাহ রোধে প্রয়োজন ২০১৮ সালের আইনটির শক্তিশালী বাস্তবায়ন। একই সঙ্গে প্রয়োজন সবার সচেতনতা।

ইকবাল হোসেন

ইকবাল হোসেন
প্রত্যন্ত অঞ্চলে যারা শিশুবিবাহের ঝুঁকিতে আছে, তাদের জন্য কার্যকর ও পরীক্ষিত ক্ষমতায়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া প্রয়োজন, যেন তারা নিজেরাই শিশুবিবাহমুক্ত থাকতে পারে। শিশুবিবাহ নিয়ে গত পাঁচ বছরে যত গবেষণা হয়েছে, তার ফলাফল ও সুপারিশসমূহ সে পরিমাণে কার্যক্রমে প্রতিফলিত হয়নি।

সার্বিকভাবে শিশুবিবাহ বন্ধে উদ্যোগ বৃদ্ধি পেয়েছে কিন্তু অধিকাংশই গতানুগতিক। ফলে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। ইউনিসেফের সহায়তায় সম্প্রতি পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিগত এক বছরে সংঘটিত শিশুবিবাহের শিকার মেয়েদের মধ্যে ৭২ শতাংশ স্কুলে পড়ালেখা করত।

মেয়েদের স্কুলে রাখতে পারলেই শিশুবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব, এই ধারণা এখন আর কাজ করছে না। স্কুলে থাকা অবস্থায়ই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আবার দেখা যাচ্ছে শিশুবিবাহ রোধে আইন কিংবা এর ক্ষতিসংক্রান্ত বিষয়ে সচেতনতা ৯৭ শতাংশ মানুষের থাকা সত্ত্বেও শিশুবিবাহ আশানুরূপ কমছে না।

একই ধরনের কার্যক্রম যেমন সর্বক্ষেত্রে কাজ করবে না, তেমনি কার্যক্রমের গভীরতার ওপর নির্ভর করে তা কতটা ফলপ্রসূ হবে।

 বাংলাদেশে এমন পরীক্ষিত কার্যক্রম আছে, যা দিয়ে মাত্র ছয় মাসে একজন ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষাবঞ্চিত কিশোরীকে প্রশিক্ষিত করে উপার্জনক্ষম করা যায় এবং কারিগরি শিক্ষার ধারায় ফিরিয়ে আনা যায়। আর তাতে দেখা গেছে শিশুবিবাহ ৬২ শতাংশ কমেও যায়। শুধু সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে শিশুবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব নয়।

সানজীদা আখতার

সানজীদা আখতার
আমাদের দেশে একটা প্রচলিত রীতি আছে, মেয়ে দেখতে ফরসা হলে তাদের বিয়েতে কোনো সমস্যা হয় না। অল্প বয়সেই বিয়ে হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর যারা দেখতে কালো কিংবা শ্যামবর্ণের, তাদের সহজে বিয়ে হয় না।

এসব মেয়ের বয়স একটু বেশি হলে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। সুপাত্র পাওয়া কষ্টকর হয়। সুপাত্র পাওয়ার আশায় তাদের বিয়েও অল্প বয়সেই দেওয়া হয়। অতএব, মেয়ে ফরসাই হোক আর কালোই হোক, প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিশুবিবাহ তার কাম্য।

অনেক মেয়ে শহরের বস্তিতে বাস করে। তাদের অধিকাংশই অন্যের বাড়িতে বুয়া হিসেবে কাজ করে। অনেকে আবার শিল্পকারখানায় কাজ করে।

মা–বাবা চান বিয়ের পর কাজ করতে দেবেন না, এমন সুপাত্রের কাছে মেয়ের বিয়ে দেবেন। এর জন্য মেয়েদের কোনো বিশেষত্বের প্রয়োজন নেই। অভিভাবকেরা যে সুপাত্র চান, তাদের পেতে হলে মেয়ের ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে দিতে হবে। তা না হলে সুপাত্র পাওয়া সম্ভব হবে না।

শহরে অভিভাবকের অবর্তমানে সন্তানেরা নানা খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ বাড়িতেই এখন ইন্টারনেট সেবা রয়েছে। অনেকে
পর্নোগ্রাফির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। কেউ আবার মাদকাসক্তও হয়ে পড়ে।

বয়ঃসন্ধিকাল আসার পর অনেক ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েরা অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এ জন্য অভিভাবকেরা অল্প বয়সে বিয়ে দিতে বাধ্য হন। দারিদ্র্যের কারণে এসব পরিবারের সন্তানেরা স্কুলে যেতে চায় না। কিশোর বয়সেই নানা কাজে যুক্ত হয়। মোবাইলের অপব্যবহার করে। মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে বিয়ের প্রতি আসক্ত হতে বাধ্য করে।

মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম

মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম
আগে শিশুবিবাহের হার বেশি ছিল। সেই তুলনায় এখন কমলেও আশানুরূপভাবে কমেনি। গবেষণায় দেখা যায়, শিশুবিবাহের কারণে যেমন বেশি সন্তান হয়, তেমনি গর্ভাবস্থায় অ্যাবরশনের ঝুঁকিও বেশি ।

শিশুবিবাহ রোধে সরকারি ও বৈশ্বিক নীতিমালায় সমন্বয় ঘটাতে হবে। তা না হলে শিশুবিবাহ বন্ধ করা যাবে না। বৈশ্বিক নীতিমালায় অর্থাৎ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সালের মধ্যে শিশুবিবাহসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধানের কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু বাংলাদেশের জাতীয় পরিকল্পনা কার্যক্রম ২০১৮ থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে শিশুবিবাহ পুরোপুরি নির্মূলের কথা বলা হয়েছে। সে হিসাবে বহির্বিশ্বের চেয়ে আমরা ১১ বছর পিছিয়ে রয়েছি।

দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে নারীদের অংশগ্রহণ সন্তোষজনক নয়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদন ২০১৬ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৫-২৪ বছর বয়সী যুবগোষ্ঠীর ৪০ দশমিক ৩ শতাংশই শিক্ষা, চাকরি অথবা প্রশিক্ষণের কোনোটিতেই নেই। এদের ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ নারী।

এদের অনেকেই শিশুবিবাহের শিকার হয় বিধায় দেশের উন্নতিতে তারা যথাযথ অবদান রাখতে পারছে না। এমনকি নিজেদেরও ক্ষমতায়ন করতে পারছে না।

ওবায়দুর রব
১০ বছর আগে যে বিষয় নিয়ে কথা বলা হয়েছিল, এখনো সেই বিষয়ে আমাদের আলোচনা করতে হচ্ছে। শিশুবিবাহ রোধে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

কিন্তু কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এখনো পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। হিসাব করলে দেখা যাবে, গত ১০০ বছরে শিশুবিবাহের পরিমাণ ৯৫ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে নেমে এসেছে। আশা করা হচ্ছে আগামী ৩০ বছরে এটা শূন্যে নেমে আসবে।

 দেশে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ লাখ শিশুবিবাহ সম্পন্ন হয়। আর উপজেলাপ্রতি শিশুবিবাহের সংখ্যা প্রায় এক শ।

সমাজের নেতারা দু-একটা বিয়ে বন্ধ করে তাঁদের এলাকাকে শিশুবিবাহমুক্ত বলে দাবি করেন। তাহলে প্রশংসা পাওয়াটাই কি মূল বিষয়? নিশ্চয় না। নিজ স্বার্থ ছাড়াই শিশুবিবাহ প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রতিবছর গড়ে ৩০ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু তাদের মধ্যে এসএসসি পাস করে মাত্র ১৬-১৮ লাখ। অর্থাৎ বাকি ১২ লাখ শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারাই শিশুবিবাহে লিপ্ত হয়। এদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে খুব কমই অল্প বয়সে বিয়ে হয়। তবে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেই হবে না, সন্তানদের কমপক্ষে এইচএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা নিশ্চিত করতে হবে। এইচএসসি শেষ হলে প্রায় ১৮ বছর পূর্ণ হয়।

ফরিদা ইয়াসমিন

ফরিদা ইয়াসমিন
সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে শিশুবিবাহ। তবে সব সমস্যার মধ্যে খুব শিগগির সমাধান হতে পারে, এমন সম্ভাবনাতেও সবার আগে রয়েছে শিশুবিবাহ। তাই সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করলে শিশুবিবাহ রোধ করা সম্ভব হবে। এর জন্য প্রয়োজন সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। উত্ত্যক্তকরণ, যৌতুকসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে পুলিশের কাছে মামলা করা হয়। কিন্তু শিশুবিবাহের বিরুদ্ধে খুব কমই মামলা লক্ষ করা যায়। এটা সত্যিই হতাশাজনক।

সামাজিকভাবে বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের পরিবারকে ছোট করে দেখা হয়। মেয়েসন্তান জন্ম দিলে অবহেলার চোখে দেখা হয়। আবার মেয়েশিশু জন্ম দিলে মাকে দোষ দেওয়া হয়। কিন্তু সমাজের অধিকাংশ অপরাধে ছেলেরাই জড়িত থাকে।

শিশুবিবাহ রোধে প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অল্প বয়সে বিয়ের খবর পেলেই তারা বিয়ে বন্ধ করার অধিকার রাখে। যদিও বাংলাদেশের পুলিশ এখনো সেভাবে ভূমিকা রাখতে পরছে না। তবে অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের কিছুই করার থাকে না। কেননা, তাদের পক্ষে সব সময় তদারক করা সম্ভব হয় না। কোথায়, কখন, কোন মেয়ের বিয়ে হচ্ছে, এর খোঁজখবর রাখা বেশ কঠিন।

শিশুবিবাহ রোধে একটি অভিনব পদ্ধতি হলো ট্রিপল নাইন (৯৯৯)। এই নম্বরে কল করলে পুলিশ খবর পায়। পরবর্তী সময়ে বিয়ে বন্ধ করার সুযোগ পায়। তাই শিশুবিবাহের খবর পেলেই আমাদের উচিত ট্রিপল নাইনে ফোন করা। তবে শিশুবিবাহ রোধে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে জনসচেতনতা।

নেহাল করিম

নেহাল করিম
বাংলাদেশের আর্থসামাজিক কাঠামোর আলোকে কাজ করতে হবে। বিশ্বের অন্য দেশের দিকে তাকিয়ে কাজ করা হলে ফলপ্রসূ হবে না। আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে শিশুবিবাহের পরিমাণ অনেক বেশি। সে তুলনায় শহরাঞ্চলে কম শিশুবিবাহ হয়। নিম্নবিত্ত পরিবারে শিশুবিবাহের পরিমাণ বেশি।

শিশুবিবাহের কারণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অজ্ঞতা, দারিদ্র্য, মা–বাবার বিচ্ছেদ, শিক্ষার অভাব প্রভৃতি। এর মধ্যে আরও অনেক কারণ রয়েছে। এখান থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়, সে বিষয়ে ভাবতে হবে। শিশুবিবাহ নির্মূল করা অনেক কঠিন, তবে সামর্থ্য অনুযায়ী কমানোর দায়িত্ব আমাদেরই। শুধু শিশুবিবাহ নয়, এ–সংক্রান্ত আরও আইন রয়েছে। কিন্তু কিছু রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা অন্যান্য কারণে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

শিশুবিবাহ রোধের আগে দেশের প্রান্তিক জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা কেউ চিন্তা করে না।

 আব্দুল কাইয়ুম

শিশুবিবাহ সমাজ ও দেশের জন্য অভিশাপ। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শিশুবিবাহ রোধের বিষয়টি আরও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। আজ আলোচনায় যেসব সুপারিশ এসেছে, তা শিশুবিবাহ রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

যাঁরা অংশ নিলেন
নেহাল করিম: চেয়ারম্যান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম: চেয়ারম্যান, পপুলেশন সায়েন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ফরিদা ইয়াসমিন: ডেপুটি পুলিশ কমিশনার, উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন

সানজীদা আখতার: সহযোগী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

তাসলিমা ইয়াসমীন: সহযোগী অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ওবায়দুর রব: কান্ট্রি ডিরেক্টর, পপুলেশন কাউন্সিল

মোহাম্মদ বিল্‌লাল হোসেন: সহযোগী অধ্যাপক, পপুলেশন সায়েন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ইকবাল হোসেন: শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, ইউনিসেফ

হুমায়রা আজিজ: পরিচালক, উইমেন

এমপাওয়ারমেন্ট প্রোগ্রাম, কেয়ার বাংলাদেশ

রোকসানা সুলতানা: ম্যানেজার, গার্লস এডুকেশন কর্মসূচি, রুম টু রিড

হুমায়রা ফারহানাজ: ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার, জেন্ডার অ্যাডোলেসেন্ট অ্যান্ড ইয়ুথ, ইউএনএফপিএ

সৈয়দা কানিতা মাঈশা: সদস্য, গ্লোবাল ইয়ুথ অ্যাডভাইজরি প্যানেল, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ

সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো