Thank you for trying Sticky AMP!!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে চীনের অবস্থানকে আরও গ্রহণযোগ্য মনে করতে শুরু করেছে, তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ তৈরি হয়েছে

ইউক্রেন যুদ্ধ কি যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা কমাচ্ছে

ইউক্রেন যুদ্ধ চীনকে দায়িত্বের জালে জড়িয়ে ফেলেছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় দেশ যেহেতু চীনের বন্ধু, সে কারণে চীন কোনো পক্ষ বেছে নিতে চায় না। চীন যে কৌশলগত প্রজ্ঞা অনুসরণের রেওয়াজ অনুসরণ করে সেটি হলো, যখন দুই বন্ধু একে অপরের সঙ্গে লড়াই করে, তখন মধ্যস্থতা করে বিরোধের অবসান ঘটাতে হয়। যদিও চীনের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান একটু সন্দেহ জাগিয়েছে, তথাপি এটি যুদ্ধের সমাপ্তি ত্বরান্বিত করতে পারে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের উত্তেজনা কমিয়ে দিতে পারে।

যখন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন পশ্চিমা পর্যবেক্ষকেরা চীনের দৃশ্যত ক্রেমলিনপন্থী অবস্থান তুলে ধরতে থাকেন। যেমন প্রথম থেকেই ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে বর্ণনা করতে গিয়ে চীনা কর্মকর্তারা ‘আক্রমণ’ শব্দটি ব্যবহার করতে অস্বীকার করে আসছেন। এ বিষয়ে চীনের অভিযোগ, ন্যাটোর আক্রমণাত্মক পদক্ষেপই রাশিয়া-ইউক্রেন উত্তেজনাকে ‘ব্রেকিং পয়েন্টে’ ঠেলে দিয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের অবরোধ আরোপও বিশেষ লক্ষণীয় বিষয়। চীন সব দেশকেই একে অপরের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে সম্মান করতে বলে আসছে, যার দিকে পশ্চিমাদের শুরু থেকেই মনোযোগ কম। স্পষ্টভাবে রাশিয়ার প্রতি পরোক্ষ অথচ স্পষ্ট তিরস্কার হিসেবে পশ্চিমারা ইউক্রেনে মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিমারা এটিই অনুমান ও প্রমাণ করতে আগ্রহী ছিল যে ইউক্রেনে রাশিয়া হামলা চালানোর মাত্র তিন সপ্তাহ আগে রাশিয়ার সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তি করা চীন আদতেই রাশিয়ার পক্ষে ছিল।

বৈঠকের পর চীন নিরপেক্ষতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতির আরও প্রমাণ হিসেবে ইউক্রেনের জন্য মানবিক সহায়তার আরেকটি চালান পাঠানোর ঘোষণা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত কিন গ্যাং বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে চীনের বিদ্যমান ‘সীমাহীন’ বন্ধুত্বের প্রতি বেইজিং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; একই সঙ্গে জাতিসংঘের সনদের প্রতিও বেইজিংয়ের অতলস্পর্শী শ্রদ্ধা রয়েছে।

গত ১৩ মার্চ চীনা প্রতিপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাতের আগের দিন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান সতর্ক করেছিলেন, চীন যদি রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেয় বা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলোর হাত থেকে রাশিয়াকে বাঁচানোর চেষ্টা করে, তাহলে চীনকে ‘নির্ঘাত’ ভয়ংকর পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।

অবশ্য চীনের জ্যেষ্ঠ পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টা ইয়াং জিচির সঙ্গে সুলিভানের সাত ঘণ্টার বৈঠকটিতে ততটা দ্বিমত প্রকাশিত হয়নি, যতটা ধারণা করা হচ্ছিল।

সংঘাতের যাতে তাড়াতাড়ি সমাপ্তি টানা যায়, সে জন্য ইয়াং শান্তি আলোচনার অগ্রগতি অর্জনে চীনের উদ্যোগী অবস্থানের প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। পরের দিন, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান ইয়াংয়ের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করেছেন। তিনি বলেছেন, এ সংঘাতের অবসানে চীন ‘সম্পূর্ণভাবে ইতিবাচক, নিরপেক্ষ এবং গঠনমূলক’ অবস্থানে রয়েছে।

Also Read: যুদ্ধ থামাতে পুতিনকে যে চাপ দিতে পারেন সি চিন পিং

কয়েক দিন পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চীন পিংয়ের যে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয়, সেখানেও একই বার্তা প্রাধান্য পেয়েছে। সি চিন পিং বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন তাদের মতবিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সামরিক শক্তি অবলম্বন করছে—এটি চীনকে পীড়া দিচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শান্তি পুনরুদ্ধারের জন্য একসঙ্গে কাজ করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে চীনের অবস্থানকে আরও গ্রহণযোগ্য মনে করতে শুরু করেছে, তা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ তৈরি হয়েছে। বাইডেন-সি বৈঠকের পর হোয়াইট হাউস তার ভাষা নরম করেছে। হোয়াইট হাউস অপেক্ষাকৃত নমনীয় ভাষায় বলেছে, চীন যদি রাশিয়াকে ‘বস্তুগত সহায়তা’ দেয়, তাহলে তার কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে, সে বিষয়ে বাইডেন সি চিন পিংকে একটি ধারণা দিয়েছেন। ওই বৈঠকে বাইডেন ‘সংকট নিরসনে একটি কূটনৈতিক সমাধানের জন্য’ তাঁর (সি চিন পিংয়ের) সমর্থনের ওপর জোরাজুরি করেছেন।

Also Read: পুতিনের যুদ্ধে চীনের ‘সাধারণ সমৃদ্ধি’ কি টিকে থাকবে

বৈঠকের পর চীন নিরপেক্ষতার প্রতি তার প্রতিশ্রুতির আরও প্রমাণ হিসেবে ইউক্রেনের জন্য মানবিক সহায়তার আরেকটি চালান পাঠানোর ঘোষণা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত কিন গ্যাং বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে চীনের বিদ্যমান ‘সীমাহীন’ বন্ধুত্বের প্রতি বেইজিং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; একই সঙ্গে জাতিসংঘের সনদের প্রতিও বেইজিংয়ের অতলস্পর্শী শ্রদ্ধা রয়েছে।

ওদিকে আমেরিকার পক্ষ থেকে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি চীনের ৩৫২টি পণ্যের ওপর থাকা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ইউক্রেন সংকট চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

ইয়াং ইয়াও পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়না সেন্টার ফর ইকোনমিক রিসার্চ এবং ন্যাশনাল স্কুল অব ডেভেলপমেন্ট বিষয়ের অধ্যাপক