Thank you for trying Sticky AMP!!

ইউক্রেন সংকট কি ইউরোপকে রক্তাক্ত করবে

বিরোধপূর্ণ সীমান্ত পরিদর্শন করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কি

ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ বেধে যায় কি না, তা নিয়ে বিশ্ব মারাত্মক দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। বড় কোনো যুদ্ধের পরিস্থিতি সেখানে যাতে তৈরি না হয়, সে জন্য পশ্চিমা নেতারা চেষ্টা করছেন। কিন্তু রাশিয়া ও ইউক্রেনের সরকার পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারছে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যদিও এ বিষয়ে ভ্লাদিমির পুতিন ও জো বাইডেনের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সেই আলোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রাশিয়ান নেতাকে স্পষ্ট করে নিশ্চয়তা দেন যে ওই অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনে তিনি কাজ করবেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে পূর্ব ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়া সৈন্য সমাবেশ অব্যাহত রেখেছে। এর মধ্যে ইউক্রেন একটি প্ররোচনামূলক পদক্ষেপও নেয়। তারা কার্চ প্রণালিতে রাশিয়ান বাহিনীর কাছাকাছি তাদের একটি নৌজাহাজ মোতায়েন করে। এর প্রতিক্রিয়ায় মস্কো কার্চ প্রণালি বন্ধ করে দেয়।

কার্চ প্রণালিটি ছোট হলেও কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এই পানিপথ আজভ সাগরের সঙ্গে ইউক্রেনকে সংযুক্ত করেছে। রাশিয়া এই পানিপথ নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রণালিতে প্রবেশ করতে না দিয়ে রাশিয়া সমুদ্রপথে ইউক্রেনকে বাকি বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, রাশিয়ার যুদ্ধযন্ত্রের বিরুদ্ধে ইউক্রেন কী করতে পারে? আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যে যুদ্ধঝুঁকি, তাতে ন্যাটো কেন নিজেদের জড়াবে? কার্চ প্রণালিতে ইউক্রেনের প্ররোচনামূলক কাণ্ডটি ঘটেছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দীর্ঘ ফোনালাপের কিছুদিনের মধ্যেই।

ওই ফোনালাপ সম্পর্কে জানেন এমন ব্যক্তিরা বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। জনসমক্ষে দেওয়া বিবৃতির বক্তব্য যা-ই হোক না কেন, বাইডেন প্রশাসন একটা বিষয়ে পুতিন প্রশাসনের সঙ্গে একমত। রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে বিবাদে পূর্ব ইউক্রেন নিরপেক্ষ ইস্যু হিসেবে থাকবে। সেটা হলে কিয়েভের পশ্চিমাপন্থী সরকারকে পূর্ব ইউক্রেনের ওপর তাদের অধিকার ছেড়ে দিতে হবে। ২০১৪ সাল থেকে মস্কো পূর্ব ইউক্রেনকে অবৈধভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে আসছে। ওয়াশিংটন চায় না রাশিয়া পুরো ইউক্রেনকে নিজেদের কবজায় নিক। এ ক্ষেত্রে যুদ্ধ এড়ানোর একমাত্র পথ হচ্ছে পূর্ব ইউক্রেনের প্রশ্নটি কূটনৈতিক টেবিলে সমাধান করা।

ইউক্রেনের এ চরম সংকটে ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলস (ন্যাটোর সদর দপ্তর) যদি তাদের পাশে দাঁড়াতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বাকি বিশ্বের কাছে এ বার্তা পৌঁছে যাবে যে আমেরিকার নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি ভিত্তিহীন। অনেকের ধারণা, পুতিন ও বাইডেন ইউক্রেন সংকটের সমাধান হিসেবে যে প্রস্তাবই সামনে আনুন না কেন, সেটা কিয়েভ সরকারের জন্য ভয়ানক একটা বিষয় হবে। সে ক্ষেত্রে ইউক্রেন সরকার রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শেষ পদক্ষেপ নিতে মরিয়া হয়ে উঠবে। তাতে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে যাবে।

জার্মানি ও ইউরোপের বাকি দেশগুলো রাশিয়ার জ্বালানির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ইউক্রেনের জন্য তারা সাধ্যের মধ্যে থাকা ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানির এ ভরসাকে ঝুঁকিতে ফেলবে না। সুতরাং প্রকৃত পরিবর্তন ইউরোপের দুয়ারে এসে হাজির হয়েছে। ইউক্রেনের সংকট সে পরিবর্তনকে কেবল ত্বরান্বিত করবে। নতুন এ ইউরোপে গত পাঁচ দশকের তুলনায় রক্তপাত ও বিভাজন বাড়বে।

ইউরোপের এ সংঘাত দ্রুত বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হবে। কিন্তু ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে বিশ্ব এখনো বিশ্বযুদ্ধের পর্যায়ে পৌঁছায়নি। সম্ভবত ইউক্রেনের সাহসী জনগণের ভাগ্যে যতটা মন্দ লেখা থাকার কথা, তার থেকে ভালো অবস্থানে তাঁরা আছেন। ভূরাজনৈতিক অবস্থানই তাঁদের এ নিয়তির সামনে দাঁড় করিয়েছে। কেননা, ন্যাটোর খুব কম দেশই ইউক্রেনের পক্ষ হয়ে পারমাণবিক শক্তিধর রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে রাজি হবে কিংবা যুদ্ধ করার মতো সামর্থ্য তাদের আছে।

ইউক্রেন সংকট নিয়ে ভুল-বোঝাবুঝির শেষ নেই। রাশিয়া ও ইউক্রেনের এ সীমান্ত সংকটকে যুক্তরাষ্ট্র ‘গাধার মুখের সামনে গাজর ঝুলিয়ে’ সমাধানের চেষ্টা করছে। কিন্তু কিয়েভ ও মস্কোর কাছে এটা জাতীয় অস্তিত্ব ও সম্মান রক্ষার বিষয়। এটা আবার বৃহত্তর স্লাভিক সম্প্রদায়ের দুই পক্ষের মধ্যকার পারিবারিক ঝগড়ার বিষয়ও। যখন ভয়, সম্মান, স্বার্থ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার মতো মানুষের মৌলিক বিষয়গুলো সামনে এসে পড়ে, তখন যুক্তি জয়ী হবে এমনটা আশা করা ঠিক হবে না। আবার পশ্চিমাদের মধ্যে অনেক দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ‘সংকেত’ দিয়ে রেখেছে, আবার কিছু দেশ যেমন জার্মানি তাদের বড় বাণিজ্যসঙ্গী করতে উদ্‌গ্রীব।

প্রাকৃতিক গ্যাস ও তেলের ওপর রাশিয়া ভাসছে। মস্কো এটাকে খুব ভালোভাবেই কাজে লাগায়। রাশিয়ার গ্যাস ও জ্বালানি তেলে ইউরোপে সয়লাব হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে ইউরোপের অনেক দেশ ‘ওয়াশিংটন প্রথম’ নীতি থেকে সরে এসেছে। জার্মানি ও ইউরোপের বাকি দেশগুলো রাশিয়ার জ্বালানির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ইউক্রেনের জন্য তারা সাধ্যের মধ্যে থাকা ও নির্ভরযোগ্য জ্বালানির এ ভরসাকে ঝুঁকিতে ফেলবে না। সুতরাং প্রকৃত পরিবর্তন ইউরোপের দুয়ারে এসে হাজির হয়েছে। ইউক্রেনের সংকট সে পরিবর্তনকে কেবল ত্বরান্বিত করবে। নতুন এ ইউরোপে গত পাঁচ দশকের তুলনায় রক্তপাত ও বিভাজন বাড়বে। তবে ওয়াশিংটন যতই বুক চাপড়াক, আমেরিকার জন্য ভূরাজনৈতিক সুযোগ ইউরোপে আর আসবে না।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

ব্রান্ডন জে ওয়াইকার্ট ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক