Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কীভাবে সামলানো যাবে

গত ফেব্রুয়ারি ২০২১-এ সংক্রমণ কমে যাওয়ায় মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল। করোনা বিদায় নিয়েছে ভেবে মানুষ বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিল। স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই ছিল না, ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে ব্যাপক জনসমাগম হচ্ছিল। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মানুষ উপচে পড়ছিল। ফলে যা হওয়ার, মার্চ ২০২১ থেকে করোনা ব্যাপক সংক্রমণ লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রতিদিন মৃত্যুর সারি দীর্ঘতর হচ্ছে। ফলে সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে পয়লা বৈশাখ থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে, এ সীমা হয়তো আরও বর্ধিত হতে পারে।

সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কারণে রোগটি আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এ রোগে আক্রান্ত হলে পরিবার, সমাজ সবার কাছে সে অবহেলার পাত্র আর অচ্ছুত হয়ে যায়। কেউ তাকে দেখতে আসে না, ছুতে চায় না সেবা ও চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করে। সে জন্য এ রোগে আক্রান্ত হলে একধরনের ভীতি রোগীকে কুঁরে কুঁরে খায়। রোগী সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে আরও অসুস্থ হয়ে যায়।

কিন্তু আসলে কি রোগটি ভীতিকর? না, করোনা রোগে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে শতকরা ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। শতকরা ১০ জনের আইসিইউ প্রয়োজন হয়। শতকরা ৫ জনের কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের প্রয়োজন হয়। করোনায় আক্রান্ত রোগীর সবার উপসর্গ থাকে না। রোগটি শনাক্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করাতে হবে। মনোবল অটুট রাখতে হবে। আতঙ্ক বা ভয় নয়, সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।

বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দরিদ্র দেশ। এখানে প্রয়োজনীয় শিক্ষা নেই, শৃঙ্খলা নেই, নিয়ম মানার প্রবণতা নেই। প্রয়োজনীয় পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই, সচেতনতা নেই, হাসপাতালের বিছানা নেই। মহামারি নিয়ন্ত্রণে যেভাবে আন্তরিকতা নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা দরকার, সেরূপ আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসার মতো চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নেই।

কোভিড-১৯ ভাইরাসটি বেশি বেশি পরীক্ষা করে শনাক্ত করতে হবে। আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত কোভিড-১৯ রোগীর চিকিৎসার সুযোগ সম্প্রসারিত করতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ রোগীও যেন করোনার অজুহাতে চিকিৎসা বঞ্চিত না হয়, সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ থাকতে হবে। জেলা হাসপাতালগুলোতে আইসিইউর ব্যবস্থা রাখতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালেও কোভিড রোগীর চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা রাখতে হবে, চিকিৎসা ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। হাসপাতাল ও রোগীর চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

কোভিড-১৯-এর নিয়ন্ত্রণ ত্বরান্বিত করতে হলে আমাদের সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিক দূরত্ব, মুখে মাস্ক আর হাত সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে বারবার পরিষ্কার করে রোগটি প্রতিরোধ করি। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে বাংলাদেশে করোনার ভ্যাকসিন চলে এসেছে এবং প্রায় ৬০ লাখ মানুষ করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন।

অনেকে দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিনও পেয়ে গেছেন। তবে শুধু ভ্যাকসিন নিলেই হবে না, স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যত দিন এই ভাইরাসের অস্তিত্ব বাংলাদেশে থাকবে, তত দিন সবাইকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তাহলেই করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।

করোনাভাইরাসটি যেভাবেই মানব শরীরে এসে থাকুক, এখন একমাত্র মানুষ থেকেই রোগটি সংক্রামিত হচ্ছে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি বা কফ থেকে অন্য মানুষের নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে সংক্রামিত হয়। সার্স কোভ-২ বাতাসে তিন ঘণ্টা ভেসে থাকতে পারে, এ ছাড়া প্লাস্টিকের ওপর ৭২ ঘণ্টা, স্টিলের ওপর ৪৮ ঘণ্টা, কার্ডবোর্ডের ওপর ২৪ ঘণ্টা, তামার ওপর মাত্র ৪ ঘণ্টা থাকতে পারে। যেখানেই থাকুক একমাত্র নাক, মুখ ও চোখ দিয়েই ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।

কাজেই বাইরে বেরোলেই মাস্ক, চশমা পরতে হবে। হাত না ধুয়ে মুখ, নাক বা চোখ স্পর্শ করা যাবে না। করোনাভাইরাস করোনা রোগীর হাঁচি, কাশি থেকে নির্গত হয়ে বাতাসে জলীয় কণা হিসেবে ভেসে বেড়ায়। ওই জলীয় কণা সুস্থ মানুষের নাক, মুখ দিয়ে প্রবেশ করে আক্রান্ত করতে পারে। এ জন্য মাস্ক অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে এবং হাত না ধুয়ে নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করা যাবে না।

শ্বাসকষ্ট বা কাশি মারাত্মক হলে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। অক্সিজেন দিতে হবে। শ্বাস নিতে কষ্ট হলে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা থাকতে হবে। উপজেলা পর্যন্ত আইসিইউ থাকতে হবে। সহজ চিকিৎসার নিয়ম থাকতে হবে। এজিথ্রোমাইসিন, ডক্সিসাইক্লিন, ইভারমেকটিন সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য কার্যকরী চিকিৎসা। সঙ্গে ইকোস্প্রিন বা এনক্সাপাইরিন, কোলেস্টেরলবিরোধী ওষুধ দিতে হবে। খুব অল্প ক্ষেত্রে স্টেরয়েড, অক্সিজেন, অ্যান্টিভাইরাল প্রয়োজন হয়। যত দ্রুত করোনা রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে, তত দ্রুত করোনা রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। একসময় করোনা দুর্বল হবে, মানুষকে সংক্রমণের ক্ষমতা কমে আসবে। ভাইরাসটি হয়তো নির্মূল হবে না। কিন্তু কার্যকারিতা লোপ পেলে মানুষ এত ভীত বা আতঙ্কিত হবে না। চিকিৎসকদের আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

সবাই ভ্যাকসিন নেবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন এবং সরকার ঘোষিত লকডাউন মেনে চললে আশা করি অচিরেই বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
ডা. মো. নাজমুল করিম মানিক: অতিরিক্ত পরিচালক (হাসপাতাল)
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়