গদ্য কার্টুন

গাধা নিয়ে যেসব কৌতুক আমি জানি

সার্কাস দলে ছিল এক গাধা।

তার সঙ্গে কথা হচ্ছে গৃহস্থের গাধার।

সার্কাসের গাধা বলল, খুব কষ্টে আছি। খেতে পাই না। আবার বকাঝকা খাই।

গৃহস্থের গাধা বলল, তাহলে এই দল ছেড়ে চলে যাও না কেন।

সার্কাসের গাধা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, এখানে কষ্ট থাকলেও একটা আশা আছে। আশায় আশায় আছি। সার্কাসের মালিকের সুন্দরী মেয়ে আছে। সে দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটে। মালিক তাকে বলেছে, ঠিকভাবে হাঁট। যদি পড়ে যাস, তাহলে তোকে গাধাটার সাথে বিয়ে দিয়ে দেব। আশায় আশায় আছি, যদি দড়িটা ছেঁড়ে...

আরেকটা গাধা একটা স্কুলের সামনে দিয়ে যাচ্ছে। শুনতে পেল, এক অভিভাবক বলছে, মাস্টারমশাই, আমার ছেলে তো বোকাসোকা, দেখেন ওকে মানুষ করতে পারেন কি না।

মাস্টার বললেন, রেখে দিয়ে যান। কোনো চিন্তা নাই। কত গাধাকে পিটিয়ে মানুষ করলাম। আর আপনারটা তো কেবলই বোকাসোকা। পারব।

গাধা স্কুলের আশপাশে ঘুরতে লাগল। মাস্টারের চোখে যদি সে পড়ে। তাকে যদি মাস্টারমশাই পিটিয়ে মানুষ করে দেন।

একদিন এক লোক ঘোড়ার পিঠে চড়ে যাচ্ছে। শুনতে পেল, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে টাকার বিনিময়ে ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়া যায়।
সে গেল। টাকা দিল। তাকে পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হলো।

সে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ফিরছে। তখন তার মনে হলো আমার ঘোড়াটার জন্যও তো একটা পিএইচডি ডিগ্রি দরকার। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে গেল।

বলল, এই নিন টাকা। আমার ঘোড়াটাকেও একটা ডিগ্রি দিন।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলল, আমরা শুধু গাধাকে পিএইচডি দিই। ঘোড়াকে দিই না।

একদিন নাসিরউদ্দীন হোজ্জার কাছে একজন এসেছে। মোল্লা সাহেব, আপনার গাধাটাকে ধার দিন।

হোজ্জা বললেন, আমার তো গাধা নাই।

কী হয়েছে?

মারা গেছে।

এই সময় তঁার উঠানে তঁার গাধা ডেকে উঠল।

পড়শি বলল, ওই যে গাধা ডেকে উঠল।

হোজ্জা বললেন, আমি নিজের মুখে বললাম, সেটা বিশ্বাস করলেন না, আর আপনি একটা গাধার মুখের কথা বিশ্বাস করলেন। যান, আপনাকে গাধা দেব না।

এই গল্পটা আগেও গদ্যকার্টুনে লিখেছিলাম। হুবহু কপি-পেস্ট করলাম:

এই গল্পটা বলেছিলেন আব্রাহাম লিংকন।

আব্রাহাম লিংকন সবে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। গৃহযুদ্ধের পরে।

দলে দলে লোকে তাঁর কাছে এসে বলতে লাগল, আমরা দেশের জন্য অনেক স্বার্থত্যাগ করেছি। পদ চাই। আমাদের মূল্যায়ন করুন।

তখন আব্রাহাম লিংকন এই গল্পটা করেন।

এক রাজা বেরোবেন শিকারে। তিনি মন্ত্রীকে জিগ্যেস করলেন, আজকের আবহাওয়া কেমন। পথে ঝড়-বৃষ্টি হবে না তো?

মন্ত্রী বললেন, না না, আজ ঝড়-বৃষ্টি হবে না। আবহাওয়া চমৎকার।

কিছুদূর যাওয়ার পরে এক ধোপার সঙ্গে দেখা। ধোপা বলল, রাজামশাই, বেশ তো চলেছেন, কিন্তু সামনে তো ঝড়-বৃষ্টি হবে।

রাজা এগোলেন। ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়লেন।

তখন তিনি ওই মন্ত্রীকে বরখাস্ত করে সেই পদে বসালেন ধোপাকে।

ধোপা বলল, রাজামশাই, যখন ঝড়-বৃষ্টি হয়, তখন আমার গাধার কান নড়ে। আমার গাধার কান নড়া দেখে আমি বুঝেছিলাম আজ
বৃষ্টি হবে।

রাজা তখন ধোপাকে বরখাস্ত করে গাধাটাকে মন্ত্রী বানালেন।

তখন হলো আসল বিপদ। রাজ্যের সব গাধা এসে রাজাকে ঘিরে ধরল, আমরাও তো গাধা। আমাদেরও মন্ত্রী বানান।

এক লোক বলল, আমি গাধা কিনব। প্রতিটি গাধা ১০ ডলার।

গ্রামবাসী সবাই খুঁজে খুঁজে গাধা আনল। সে ১০ ডলার দিয়ে গাধা কিনতে লাগল।

এরপর সে বলল, আমি প্রতিটি গাধা ২০ ডলারে কিনব। গ্রামবাসী অনেক খুঁজে আরও কিছু গাধা হাজির করল। লোকটা ২০ ডলার দিয়েই কিনে নিল।

এরপর সে বলল, আমি এবার গাধা কিনব ৫০ ডলার করে।

গ্রামে আর গাধা নাই। ক্রেতা বলল, আমি একটু পাশের গ্রাম থেকে ঘুরে আসছি।

এদিকে তার সঙ্গী বলল, আমি ৩৫ ডলার করে গাধা বেচব।

গ্রামবাসী ঘটিবাটি বিক্রি করে ৩৫ ডলারে গাধা কিনে নিল। ক্রেতার সঙ্গীও পালিয়ে গেল। তারা আর ফিরল না।

ইশপের গল্প না বলে এই লেখা শেষ করা উচিত হবে না।

একদিন এক গাধা বনের ভেতর দিয়ে হাঁটছিল। সামনে পড়ল এক নেকড়ে।

গাধা তখন আত্মরক্ষার বুদ্ধি বের করল। সে এক পা খুঁড়িয়ে হাঁটতে লাগল।

তারপর নেকড়েকে বলল, আমার পায়ে কাঁটা বিঁধেছে। তুমি যদি কাঁটাটা বের করে দাও তাহলে আমাকে খেয়ে মজা পাবে। তা না
হলে আমার বাঁকা পা তোমার ভোজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে।

নেকড়ে ভাবল, তাই তো। আচ্ছা দেখি তোমার কোন পায়ে কাঁটা বিঁধেছে।

নেকড়ে কাছে এসে মাথা নত করতেই গাধা তাকে আঘাত করল।

নেকড়ে ব্যথা পেয়ে চলে যেতে যেতে বলল, আসলে আমি তো ডাক্তার নই, আমার ডাক্তারি করতে যাওয়া উচিত হয় নাই।

আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।