Thank you for trying Sticky AMP!!

টাকাই মনোনয়নের বড় যোগ্যতা

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, এটি একটি শুভ উদ্যোগ। যাঁরা জনপ্রতিনিধি হবেন, তাঁদের সম্পর্কে জানার অধিকার জনগণ তথা ভোটারদের আছে। তাঁরা অপরাধী কি না, কোনো শাস্তি পেয়েছেন কি না, তাঁদের সম্পদের পরিমাণ কেমন-মানুষের এসব জানার কৌতূহল আছে। তাই সবাই জানতে চান, জনপ্রতিনিধি হতে ইচ্ছুকেরা নিজেদের হলফনামা কতটা স্বচ্ছভাবে দিয়েছেন।

কোন প্রার্থীর কত টাকা, তিনি কী পরিমাণ সম্পদের মালিক-ওই এলাকার ভোটাররা তার প্রকৃত তথ্য হয়তো জানতে পারেন না। কিন্তু প্রার্থী সম্পর্কে এলাকার ভোটারদের একটি ধারণা থাকে। প্রার্থী উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত নাকি নিম্নবিত্ত-সাধারণভাবে তাঁরা এটা জানেন। হলফনামা প্রকাশের পর ভোটারদের এ ধারণার সঙ্গে বাস্তবের কতটা মিল বা অমিল, তা নিয়ে একটি সমীক্ষা হতে পারে।

প্রার্থীদের হলফনামা জনগণের জন্য উন্মুক্ত বা প্রকাশ্য নথি। যে কেউ জানতে পারেন, প্রার্থীরা হলফনামায় কী লিখেছেন। হলফনামায় সব তথ্য স্বচ্ছভাবে লেখার বিধান রয়েছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো হলফনামা নিয়ে সমীক্ষা করতে পারে। সব প্রার্থীর না হলেও কিছু বাছাই করা প্রার্থীর হলফনামা নিয়ে এ সমীক্ষা হতে পারে। সমীক্ষার মূল বিষয় হতে পারে: কোন ধরনের মানুষকে আমরা জনপ্রতিনিধি বানাচ্ছি। কেউ অপরাধী ছিলেন কি না কিংবা অপরাধের খুব কাছ দিয়ে চলে গিয়েছিলেন কি না, তাঁর টাকা কত বেড়েছে, সম্পদ কতটা বেড়েছে-এসব নিয়ে আগে দেওয়া হলফনামার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এতে জনপ্রতিনিধিরা কেমন বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, সে বিষয়ে আমরা জানতে পারব। এ ছাড়া নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে প্রার্থীর চরিত্র, সম্পদ, পেশায় বিরাট কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা-ও জানা সম্ভব হবে।

হলফনামায় আরেকটি বিষয় দেখা খুবই জরুরি। সেটি হলো তাঁরা কতটা সত্য কথা বলছেন। প্রার্থীরা নিজের সম্পর্কে সত্য কথা বলবেন, এ জন্যই হলফনামা নেওয়া হয়। তাই কিছু হলফনামা বাছাই করে নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া যেতে পারে। প্রার্থীরা যা লিখেছেন, তার কতটা সত্য আর কতটা মিথ্যা, তার একটা অনুসন্ধান হওয়া উচিত। আর যা লেখা হয়নি, কিন্তু লেখা উচিত ছিল, তা-ও জানা থাকা উচিত। এ ছাড়া কোনো কোনো প্রার্থীর কালোটাকা যে কোথাও পড়ে থাকতে পারে, সেটা খুঁজে বের করতেও এসব হলফনামা কাজে লাগতে পারে।

এ দেশে বিপুল পরিমাণ টাকা না থাকলে কারও পক্ষে নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া কঠিন। মনোনয়নপ্রত্যাশী কত টাকার মালিক, যাঁরা মনোনয়ন দেন, তাঁদের কাছে সেটা তাঁর একটি বড় যোগ্যতা। তাই সাধারণভাবে টাকাওয়ালারাই নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে যান। টাকা না থাকার কারণে অনেক যোগ্য প্রার্থীও অনেক ক্ষেত্রে মনোনয়ন পান না।

আবার হলফনামার বাইরেও অনেক প্রার্থীর বিপুল পরিমাণ অর্থ-সম্পদ থাকতে পারে। যেমন কালোটাকা। কালোটাকা সব সময়ই একটি বড় সমস্যা। কালোটাকা দেখাতে পারেন না বলেই প্রার্থীরা দেখান যে তাঁরা ধারদেনায় নির্বাচন করছেন। প্রার্থী যদি হলফনামায় এমন ঘোষণা দেন যে তাঁর কাছে কিছু অপ্রদর্শিত অর্থ আছে, তাহলে জনমনে প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এতে প্রার্থীর বিপদ আছে। আবার না দিলেও বিপদ। ভবিষ্যতে সে কালোটাকার খোঁজ বেরিয়ে আসতে পারে। তাই হলফনামায় যা প্রকাশ করা হয়নি, তা বের করার একটা তাগিদ আমাদের সবার মধ্যে থাকতে হবে।
খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ
সাবেক ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক