Thank you for trying Sticky AMP!!

সৌদি আরবের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্কে ফিরে যাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ইরান

বাইডেনের সৌদি সফরের পেছনে ভারসাম্যের পররাষ্ট্রনীতি

ঘুরেফিরে কয়েকটি বিতর্ক দেশগুলোর পররাষ্ট্রনীতিকে জীবন্ত করে রাখে। এর মধ্যে সবচেয়ে মৌলিক বিতর্কটা হলো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় ও বৈদেশিক সমস্যাগুলোর মধ্যে সঠিক ভারসাম্য সৃষ্টি করা যায়—এমন পররাষ্ট্রনীতি আছে কি না? পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে এটাকে নিরপেক্ষতাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের মধ্যকার চূড়ান্ত পর্যায়ের বিতর্ক বলা যায়। এরপরের বিতর্ক হচ্ছে পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের অস্ত্র (কূটনীতি বনাম নিষেধাজ্ঞা ও সামরিক শক্তি) এবং উপায় (একপক্ষীয় বনাম বহুপক্ষীয়) কী হবে, তা নিয়ে। আবার পররাষ্ট্রনীতি কোন প্রক্রিয়ায় তৈরি হচ্ছে এবং সেটা কীভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে—তা নিয়েও কয়েকটি দেশে বিতর্ক চলে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আইনসভা এবং প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী শাখার মধ্যে কার কতটুকু ভূমিকা ও ক্ষমতা রয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক চলে।

গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে এর লক্ষ্য অর্জনে অতিরিক্ত আরেকটি বিতর্ক রয়েছে। সেটি হলো অন্য একটি দেশের অভ্যন্তরীণ চরিত্র বদলের ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রনীতির সীমা কতটা পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারে। এর অর্থ হলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিস্তারে উৎসাহ জোগানোর নামে কোনো দেশের নিরাপত্তা ও বাণিজ্যের মতো মৌলিক স্বার্থে কতটুকু প্রভাব বিস্তার করা যাবে। এটিকে আদর্শবাদ ও বাস্তববাদের মধ্যকার বিতর্ক বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নেতা ও নীতি প্রণয়নকারীদের জন্য এটা চিরকালীন একটি বিতর্ক। সৌদি আরবকে দৃষ্টান্ত হিসেবে নেওয়া যাক। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক প্রায় ৭৫ বছরের। এ সম্পর্ক সহযোগিতামূলক। এর মূলে রয়েছে জ্বালানি তেল সম্পর্কিত স্বার্থ। সৌদি আরব প্রচুর তেল উৎপাদন করে। এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তার জন্য সৌদি আরবকে সর্বাধুনিক অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্য দেয়। শীতল যুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে হাতে হাত মিলিয়েছিল। দুই দেশের মধ্যকার এই সাধারণ স্বার্থের কারণে, সৌদি আরবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাজে রেকর্ড উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্র।

আরেকটি বড় কারণ এখানে রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনসহ কয়েকটি আরব দেশ বিগত বছরগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করেছে। মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র ভূমি সৌদি আরবকে এই প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসার প্রতীকী ও রাজনৈতিক মূল্য অনেক বড়। তবে সৌদি আরবের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্কে ফিরে যাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ইরান।

দেড় বছর আগে প্রেসিডেন্টের কার্যভার নেওয়ার পর জো বাইডেন সৌদি আরবের সঙ্গে এ ধরনের সম্পর্ক পরিবর্তনের এবং দেশটিকে ‘অস্পৃশ্য’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছিল যে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জামাল খাসোগি হত্যার নির্দেশদাতা। বাইডেন প্রশাসন ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধে সৌদি আরবের অংশগ্রহণেরও প্রচণ্ড বিরোধিতা করেছিল। সে সময় জ্বালানি তেলের দাম ছিল নিম্নমুখী আর বিশ্ববাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহও ছিল। বাইডেন প্রশাসন তাই মধ্যপ্রাচ্য থেকে দৃষ্টি সরিয়ে এশিয়ার দিকে মনোযোগী হয়েছিল। এখন আবার সেই অবস্থানের বদল হতে চলেছে। এই গ্রীষ্মে সৌদি আরব সফরের পরিকল্পনা করেছেন বাইডেন। এ অবস্থান বদলের কারণ হচ্ছে, করোনা–পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং জ্বালানি উৎপাদনকারী রাশিয়া, ইরান ও ভেনেজুয়েলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে জ্বালানির দাম আকাশ ছুঁয়েছে।

Also Read: যে কারণে বাইডেনের কথা শুনছে না সৌদি আরব

জ্বালানির উচ্চ মূল্য যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতিতে জ্বালানি জোগাচ্ছে। বাইডেন প্রশাসন বিরাট এক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। জরুরি এই পরিস্থিতিতে একমাত্র সৌদি আরবই জ্বালানির উৎপাদন দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাড়াতে সক্ষম। আরেকটি বড় কারণ এখানে রয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনসহ কয়েকটি আরব দেশ বিগত বছরগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করেছে। মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে পবিত্র ভূমি সৌদি আরবকে এই প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসার প্রতীকী ও রাজনৈতিক মূল্য অনেক বড়। তবে সৌদি আরবের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্কে ফিরে যাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো ইরান। ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের যৌথ উদ্বেগ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মতো বড় শক্তির পররাষ্ট্রনীতি কেবল মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হতে পারে না। সৌদি আরব, চীন, রাশিয়া, ইরান কিংবা উত্তর কোরিয়ার জন্য একটা খাঁটি মূল্যবোধসম্পন্ন কূটনীতি কখনোই টেকসই হবে না। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে মূল বিষয়টি হচ্ছে নিজের দেশের নিরাপত্তার স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া। এটা সব সময় ভারসাম্যমূলক বিষয়। বাইডেনের সৌদি আরব সেই ভারসাম্যের কথা চিন্তা করেই নেওয়া।

ইংরেজি থেকে অনূদিত, স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট

রিচার্ড এন হ্যাস কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের প্রেসিডেন্ট