Thank you for trying Sticky AMP!!

মন্ত্রী হবেন, মন্ত্রী!

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এখন নতুন মন্ত্রিসভায় কে থাকবেন, কে থাকবেন না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহল আলোচনায় সরগরম। শুধু রাজনৈতিক মহল নয়, ঘরে-বাইরে, অফিসে-রেস্তোরাঁয় এই আলোচনা। 

কোনো কোনো পত্রিকায় এলাকাভিত্তিক মন্ত্রী করার দাবি-দাওয়া, আশা আকাঙ্ক্ষার কথা ফলাও করে ছাপা হচ্ছে। সেই সঙ্গে পুরোনো ও সম্ভাব্য মন্ত্রীদের ছবিও ছাপা। এতে এলাকাবাসী কতটা আনন্দিত হয়েছেন জানি না, তবে সম্ভাব্য মন্ত্রীরা নিশ্চয়ই আহ্লাদিত। মন্ত্রিসভার আকার-প্রকার নিয়েও কথা বলেছেন কেউ কেউ।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় দল সর্বসম্মতিক্রমে এবারও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে সংসদীয় দলের প্রধান নির্বাচিত করেছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ইতিমধ্যে তাঁকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার বিকেলে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেওয়ার কথা।

নতুন মন্ত্রিসভায় কারা আসবেন, কারা থাকবেন? আমরা যদি ধরে নিই যে নতুন মন্ত্রিসভার আকার খুব বড় হবে না; বর্তমান মন্ত্রিসভার কাছাকাছি হবে। মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই সতর্ক। তিনি ছোট মন্ত্রিসভা দিয়েই যাত্রা শুরু করেছিলেন।
আমাদের দেশে বড় আকারের মন্ত্রিসভা করেছেন দুই সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ও হোসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর খালেদা জিয়াও ঢাউস সাইজের এক মন্ত্রিসভা করেছিলেন। প্রায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ে উপমন্ত্রীও ছিলেন। তখন একটা কথা চালু ছিল প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে তারেক রহমানের লোক ছিলেন। মন্ত্রীর চেয়ে প্রতিমন্ত্রীর দাপট বেশি ছিল। খালেদা জিয়া একবার বলেছিলেন, আমাদের মন্ত্রিসভায় যত লোক আছেন আওয়ামী লীগের সাংসদের সংখ্যা তার চেয়ে কম।
আশির দশকে এরশাদের মন্ত্রিসভা সম্পর্কে একটি গল্প বেশ চালু ছিল। কেউ যেন দিনের বেলায় বঙ্গভবনের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় চোখ-কান খোলা রাখেন (তখন পায়ে হেঁটে বঙ্গভবনের সামনের সড়ক দিয়ে যেতে কোনো বাধা ছিল না)। কেননা যেকোনো সময় বঙ্গভবন থেকে মন্ত্রী হওয়ার ডাক আসতে পারে। এ রকম ডাক পেয়ে কেউ মন্ত্রী হয়েছেন কি না জানি না। তবে বিকেল বেলা স্বৈর শাসকের উৎখাতের উদাত্ত আহ্বান জানানোর পরদিন দুপুরে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার অনেক উদাহরণ আছে। রাজনীতি তথা মন্ত্রী কেনা বেচার কাজটি শুরু করেন দুই সামরিক শাসকই।

গত কয়েক দিন পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে অমুক জেলা থেকে মন্ত্রী চাই, অমুক উপজেলা থেকে মন্ত্রী চাই। অমুক অঞ্চল গত ১০ বছর মন্ত্রিত্ব থেকে বঞ্চিত আছে, এবারে বঞ্চনার অবসান চাই। শুধু অঞ্চল ভিত্তিক নয়, পেশাভিত্তিক মন্ত্রী করারও দাবি উঠেছে। কেউ চান ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে আরও বেশি মন্ত্রী নেওয়া হোক। কেননা বর্তমান সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব অনেক বেশি। আবার কেউ চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে, প্রকৌশলীদের পক্ষ থেকে, সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকেও মন্ত্রী করার আওয়াজ তুলেছেন কেউ কেউ।
প্রথম আলো আজ লিখেছে, বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে ১০-১২ জন বাদ পড়তে পারেন। সে ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার আকার না বাড়লেও নতুন ১০-১২ জনের কপাল খুলে যাবে। ইতিমধ্যে কোনো কোনো সুপরিচিত সাংসদের কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের বস কোন মন্ত্রণালয় পাচ্ছেন, সেটিও প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রধান এইচ এম এরশাদ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা বিরোধী দলে থাকবেন। তাঁর দল থেকে কেউ মন্ত্রী হচ্ছেন না। এরশাদ হবেন বিরোধী দলের নেতা এবং গোলাম মোহাম্মদ কাদের হবেন উপনেতা। তবে জাতীয় পার্টির একাংশ গাছেরটাও খেতে চায়। তলারটাও কুড়াতে চায়। তাঁরা দশম সংসদের মতো বিরোধী দলে থেকে মন্ত্রিত্ব করতে চান। বর্তমান সরকারে জাতীয় পার্টি থেকে তিনজন মন্ত্রী-উপমন্ত্রী আছেন, যাদের একজন আবার জাতীয় পার্টির মহাসচিবও।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এবারের নির্বাচনে যেহেতু আমরা বড় বিজয় পেয়েছি, সে হিসেবে মন্ত্রিপরিষদেও বড় চমক থাকবে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, সব মন্ত্রিসভায় চমক থাকে।
তবে সেই চমকের মাজেজা একেকজনের জন্য একেক রকম। যিনি মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান, তাঁর জন্য এক রকম চমক। আর যিনি বাদ পড়েন তাঁর জন্য আরেক ধরনের চমক। তখন তাঁর সন্তানের পরিচয় হয় সাবেক মন্ত্রীর পুত্র বা কন্যা।
সংসদীয় গণতন্ত্রে মন্ত্রিসভা গঠনের একমাত্র এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। তিনিই ঠিক করবেন, তাঁর নতুন টিমে কাকে কাকে বেছে নেবেন। কাকে কাকে বাদ দেবেন।
আর সেই খবরটি জানতে সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

সোহরাব হাসান: প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি
sohrabhassan55@gmail.com