Thank you for trying Sticky AMP!!

বেইজিং বিনিয়োগ কৌশল পাল্টে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে চীনের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের হাতিয়ার কি বিআরআই?

চীনের ‘শতাব্দীর প্রকল্পে’ বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটছে। এক দশকেরও কম সময় আগে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) ঘোষণা করেছিলেন। সমুদ্র ও সড়কপথে চীনের সঙ্গে ইউরোপ ও এশিয়াকে বাণিজ্যসূত্রে গাঁথার প্রকল্প বিআরআই। চীনের আনুষ্ঠানিক ভাষ্য হলো, বিআরআই বেইজিংয়ের সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির সরাসরি সংযোগ। কিন্তু এর সোজাসাপ্টা একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। বিআরআই হলো, চীনের বিনিয়োগ মঞ্চ। ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্যে উদীয়মান বাজারে অবকাঠামো প্রকল্পের মাধ্যমে পুঁজি বিনিয়োগ। প্রধানত রাশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের দেশগুলোয় চীন বিআরআইয়ের মাধ্যমে এ ধরনের পুঁজি বিনিয়োগ করে আসছিল। এখন বেইজিং বিনিয়োগ কৌশল পাল্টে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করেছে।

অনেক সমালোচকের যুক্তি হলো, বিআরআই হলো ভিন্ন নামে ‘ঋণফাঁদ’। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয় এই যুক্তির পক্ষে আরও শক্তি ভিত্তি জুগিয়েছে। তবে এ ধরনের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বিআরআইয়ের বৃহত্তর যে ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য, সেটা ধরতে ব্যর্থ হয়। বিশ্বের অন্যান্য ধনী দেশের মতো চীনও আগ্রাসী ঋণ দিতে আগ্রহী। বিশ্ব অর্থনীতি এভাবেই কাজ করে। আরও কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হলো, বিআরআই প্রকল্প কীভাবে চীনের ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের বাহন হিসেবে কাজ করে এবং কীভাবে সেটা মধ্যপ্রাচ্যের দিকে পথ বদল ঘটছে।

বৈশ্বিক তেলবাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলারের যে আধিপত্য, তাতে করে চীন তার সেই লক্ষ্য পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ কারণেই চীন সৌদি অ্যারামকোর বড় অংশের শেয়ার কিনতে আগ্রহী ছিল। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নোঙর গুটিয়ে নেওয়ার এই মূল্যবান সময়ে বিআরআই প্রকল্পে বিনিয়োগ করার অর্থ হলো—চীন তার লক্ষ্য অর্জনে এক ধাপ এগিয়ে গেল।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বিআরআইয়ের তালিকাভুক্ত হওয়ার সময় গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) গঠন করে। প্রথম ধাপে দেশগুলো বিআরআইয়ের দিকে খুব বেশি মনোযোগ দেয়নি। এর কারণ হলো, আফ্রিকা ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মতো তাদের চীনের সস্তা ঋণের প্রয়োজন ছিল না। উদীয়মান বাজারে বাণিজ্যের বিষয়টিকে একপাশে সরিয়ে রেখে বলা যায়, আঞ্চলিক অংশীদারত্ব, অবকাঠামোগত প্রকল্প ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে জিসিসি বিআরআইকে বেছে নিয়েছিল। উপসাগরীয় দেশগুলোর প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান ও মিসরের মতো মিত্রদেশগুলোর সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো বিআরআই।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীন মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রমালিকানাধীন তেল কোম্পানি সৌদি অ্যারামকো শেয়ার বিক্রির উদ্যোগ নিলে চীনের বিনিয়োগকারীরা (এগুলোর মধ্যে চীনের রাষ্ট্রমালিকানাধীন কোম্পানিও রয়েছে) বড় অংশের শেয়ার কিনতে উঠেপড়ে লেগেছিল। বিআরআই প্রকল্পের মাধ্যমে চীন সম্প্রতি সৌদি আরবে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। কেননা, অন্যান্য দেশের মতো রাশিয়ায় তাদের বিনিয়োগ কমেছে। দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, বিআরআই প্রকল্প থেকে গত মাসে রাশিয়ায় এক টাকাও বিনিয়োগ করা হয়নি। ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে রাশিয়ার সঙ্গে নতুন কোনো চুক্তিও হয়নি। একই সময়ে সৌদি আরবে ৫৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের চুক্তি করেছে বেইজিং। এই চুক্তিগুলোর পূর্ণাঙ্গ রূপ নিয়ে অস্পষ্টতা আছে। কেননা অনেক কিছুই জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর অনেকগুলোই জ্বালানি খাতে। এ থেকে স্পষ্ট হচ্ছে, চীন কীভাবে বিআরআইকে মধ্যপ্রাচ্যে তার দীর্ঘমেয়াদি উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের কাজে ব্যবহার করছে।

রাশিয়া থেকে দ্রুত সরে আসা এবং মধ্যপ্রাচ্যের দিকে মনোযোগ দেওয়ার এ ঘটনা বিআরআই প্রকল্পের নমনীয়তাকে সামনে নিয়ে আসে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিআরআই মৌলবাদী কোনো প্রকল্প নয়। বরং ভূরাজনৈতিক বিবেচনার ওপর ভিত্তি করে বিআরআইয়ের পুঁজি খুব সহজেই অন্য কোথাও বিনিয়োগ হতে পারে। এখন ইউক্রেন সংঘাতের কারণে রাশিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে। আবার সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উষ্ণ ও শীতল ধরনের। এ অবস্থায় নিজেদের অবস্থান সংহত করার জন্য বেইজিং বিআরআই তহবিলের অর্থ মধ্যপ্রাচ্যে নিয়ে যাচ্ছে। বিআরআইকে চীনের সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতির সংযোগ তৈরির প্রকল্প হিসেবে দেখার পরিবর্তে এটিকে বাকি বিশ্বে চীনের ভূরাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার বিনিয়োগ হিসেবে দেখা প্রয়োজন।

ইরাক ও আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিজেদের স্বার্থ অনেকটাই গুটিয়ে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাম্প্রতিক সৌদি আরব সফরে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ যে খুব প্রবল নয়, সেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈশ্বিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে মধ্যপ্রাচ্যে শক্ত করে পা রাখার চেষ্টা বহুদিন ধরেই করে আসছে চীন। বৈশ্বিক তেলবাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলারের যে আধিপত্য, তাতে করে চীন তার সেই লক্ষ্য পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ কারণেই চীন সৌদি অ্যারামকোর বড় অংশের শেয়ার কিনতে আগ্রহী ছিল। কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নোঙর গুটিয়ে নেওয়ার এই মূল্যবান সময়ে বিআরআই প্রকল্পে বিনিয়োগ করার অর্থ হলো—চীন তার লক্ষ্য অর্জনে এক ধাপ এগিয়ে গেল।

যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে বিশ্বে এক নম্বর শক্তি হতে চায় চীন—বেইজিংয়ের এই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এখন আর কোনো গোপন বিষয় নয়। বিআরআই প্রকল্পের অর্থায়ন কোথায় যাচ্ছে, সেটা চীন কী করতে যাচ্ছে সেটা বোঝার একটা সূত্র।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত

  • জোসেফ ডানা প্রযুক্তিবিষয়ক সাময়িকী এক্সপোনেনশিয়াল ভিউয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সম্পাদক