ইসলামে হালাল ও হারামের গুরুত্ব

হালাল অর্থ বৈধ। হারাম অর্থ অবৈধ বা নিষিদ্ধ। সব চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা ও কার্যকলাপ হালাল ও হারামের আওতায় পড়ে।

বিশ্বাসী মুসলিমের পুরো জীবন হালাল-হারাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। হারাম ও হালাল ব্যক্তির দাম্পত্য জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন এবং অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক জীবনে করণীয় ও বর্জনীয় নির্ধারণের মাপকাঠি।

হারাম ও হালাল হলো চেতনা, মূল্যবোধ, আইন ও রাষ্ট্রকাঠামো নির্মাণের ভিত্তি। হালাল-হারামের সীমারেখা দ্বারাই ধর্মীয় জীবন নিয়ন্ত্রিত হয়। এতে রয়েছে দুনিয়ার শান্তি ও পরকালে মুক্তির নিশ্চয়তা।

প্রতিনিয়ত প্রতি পদে হালাল-হারামের সীমার সচেতনতা মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং নিরাপদ সমাজব্যবস্থার শ্রেষ্ঠ উপায়। ইসলামে হালাল-হারাম নির্ধারণের উৎস হলো ওয়াহি, অর্থাৎ কোরআন ও সুন্নাহ।

হালাল-হারাম বলতে প্রথমে আসে খাদ্য ও পানীয়র কথা। কোরআন মজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মানবজাতি! পৃথিবীতে যা কিছু হালাল ও পবিত্র খাদ্যবস্তু রয়েছে, তা থেকে তোমরা আহার করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না; নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৬৮)

‘আল্লাহ তোমাদের যে হালাল ও উৎকৃষ্ট জীবিকা দিয়েছেন, তা গ্রহণ করো এবং আল্লাহর ভয়ে অনুশোচনা করো, যার প্রতি তোমরা বিশ্বাসী।’ (সুরা-৫ মায়েদা, আয়াত: ৮৮)

‘তোমরা যুদ্ধে যা লাভ করেছ, তা হালাল ও উত্তম হিসেবে উপভোগ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো; আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ৬৯)

‘আল্লাহ তোমাদের হালাল ও পবিত্র যা দিয়েছেন, তা থেকে আহার করো এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করো।’ (সুরা-১৬, নাহল, আয়াত: ১১৪ ও ১১৬)

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘হারাম দ্বারা পুষ্ট দেহ জান্নাতে যেতে পারবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ) ‘পবিত্র বস্তুর বাইরে আল্লাহ কোনো কিছু গ্রহণ করেন না।’ (মুসলিম)

মানুষ জীবনে যা কিছু ভোগ বা উপভোগ করে, সবই তার রিজিক। রিজিক হালাল বা পবিত্র ও বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে। প্রথমত, বস্তু বা বিষয়টি হালাল, পবিত্র এবং অনুমোদিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত, তা প্রাপ্তি বা অর্জনের পথ ও মাধ্যম হালাল বা বৈধ হতে হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা হালাল ও উত্তম রিজিক আহার করো, যা আমি তোমাদের দিয়েছি।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৭২)

হারাম বস্তু হালাল পন্থায় অর্জিত হলেও তা হালাল হবে না। অনুরূপভাবে হালাল বস্তুও যদি হারাম পন্থায় লাভ করা হয়, তা বৈধ বা হালাল হবে না।

যদি মনিব তার শ্রমিক-কর্মচারীকে ঠকায়, জুলুম ও অবিচার করে, তাহলে তার সম্পদ হালাল হবে না। শ্রমিক-কর্মচারী যদি তার মনিবকে ফাঁকি দেয় বা প্রতারণা করে, তার উপার্জনও হালাল হবে না।

ব্যবসায়ী যদি পণ্যে ভেজাল দেয়, ওজনে বা পরিমাণে কম দেয়, নকল পণ্য বিক্রি করে বা মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়, তার উপার্জন হালাল হবে না। ক্রেতাও যদি কোনোভাবে বিক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করে, তার রিজিকও হালাল হবে না।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ওই সব লোকদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ, যারা মানুষ থেকে গ্রহণ করার সময় ঠিকমতো নেয় এবং মানুষকে দেওয়ার সময় কম দেয়।’ (সুরা-৮৩ মুতফ্ফিফিন, আয়াত: ১-২)

প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী কিয়ামতের দিন নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে থাকবে।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম। ই–মেইল: smusmangonee@gmail.com