ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

ইসলামে ঐক্য ও সংহতির গুরুত্ব ও তাৎপর্য

সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য ও সংহতি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ অনুষঙ্গ। মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভেদ ও অনৈক্য হারাম। ইসলাম তাওহিদের দ্বীন ও ঐক্যের ধর্ম। ইসলামে ঐক্যের ভিত্তি হলো তাওহিদ। তাওহিদে বিশ্বাসীরা একতাবদ্ধ থাকবেন—ঐক্য, সংহতি, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রক্ষা করা তাদের জন্য অপরিহার্য। ইসলামের দৃষ্টিতে পরস্পরের কলহ-বিবাদে লিপ্ত হওয়া হারাম এবং এটি একটি কবিরা গুনাহ।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসে ইমানের পর মুমিনদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ঐক্যবদ্ধ থাকার বিষয়ে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর রজ্জু (কোরআন) দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১০৩) আবার তিনি বলেন, ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যাদের কাছে স্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও তারা বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল এবং নানা মতানৈক্য সৃষ্টি করেছিল। তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান, আয়াত: ১০৫)

ইমান ও ইসলামের সঙ্গে মর্যাদার মাপকাঠি হলো তাকওয়া ও এখলাস। ঐক্যের জন্য প্রয়োজন ত্যাগের মানসিকতা, সহনশীলতা, সদাচার ও উদারতা

বিশ্বাসী মুমিনগণ সবাই একই জাতি। ইসলামে মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বের। এ সম্পর্কের ভিত্তি ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ তাওহিদ (একত্ববাদ)। যে কেউ তাওহিদের স্বীকৃতি দেবে, সে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।’ (সুরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১০) আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘এই যে তোমাদের জাতি, এটি একই জাতি আর আমি তোমাদের পালনকর্তা। অতএব তোমরা (ঐক্যবদ্ধভাবে) আমারই ইবাদত করো।’ (সুরা-৯ তওবা, আয়াত: ৯২) বিশ্বাসী মুমিনদের পরিচয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘যারা বিশ্বাস করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, পরম দয়াময় তাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্প্রীতি সৃষ্টি করবেন।’ (সুরা-১৯ মারইয়াম, আয়াত: ৯৬)

বিবাদ-বিসংবাদ ও অনৈক্যের বিষয়ে সতর্ক করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই, এই তোমাদের উম্মাহ এক উম্মাহ, আর আমি তোমাদের রব। সুতরাং আমার ইবাদত করো; কিন্তু তারা নিজেদের দ্বীনকে নিজেদের মধ্যে বিভক্ত করে ফেলেছে।’ (সুরা-২১ আম্বিয়া, আয়াত: ৯২-৯৩)

আল্লাহ আরও বলেন, ‘নিশ্চয়ই, এই তোমাদের উম্মাহ এক উম্মাহ আর আমি তোমাদের রব। সুতরাং আমাকে ভয় করো। এরপর তারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গেল। প্রতিটি দলই নিজের পথ নিয়ে সন্তুষ্ট রইল।’ (সুরা-২৩ মুমিনুন, আয়াত: ৫২-৫৩) আরও বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে উম্মত একটিই।’ (সুরা-১০ ইউনুস, আয়াত: ১৯)

সফলতার জন্য তাওহিদ, রিসালত ও আখিরাতে বিশ্বাসের ভিত্তিতে ঐক্য ও সংহতি অত্যন্ত জরুরি। কোরআন মাজিদের ঘোষণা, ‘আল্লাহ ভালোবাসেন তাদের, যারা তাঁর পথে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে—যেন তারা সিসাঢালা প্রাচীর।’ (সুরা-৬১ সফ, আয়াত: ৪)

কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইমান ও ইসলামের সূত্রে একতাবদ্ধ থাকাই হলো প্রকৃত ঐক্য। আল কোরআনের বাণী, ‘আর তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো; পরস্পর বিবাদে জড়িয়ো না, তাহলে তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের শক্তি ও প্রভাব লোপ পাবে। ধৈর্য ধারণ করো—নিশ্চিতভাবে আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ৪৬) ‘মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও।’ (সুরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১০)

ইমান ও ইসলামের সঙ্গে মর্যাদার মাপকাঠি হলো তাকওয়া ও এখলাস। ঐক্যের জন্য প্রয়োজন ত্যাগের মানসিকতা, সহনশীলতা, সদাচার ও উদারতা। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা মন্দ ধারণা থেকে বিরত থাকো। কারণ, ধারণা হচ্ছে নিকৃষ্টতম মিথ্যাচার। তোমরা গোপনে অনুসন্ধান কোরো না, অন্যের দোষ অনুসন্ধান কোরো না, পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ো না, হিংসা কোরো না, বিদ্বেষ পোষণ কোরো না, সম্পর্কচ্ছেদ কোরো না, পরস্পরের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ কোরো না, একে অপরের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না…’ (সহিহ্ বুখারি: ৫১৪৩; সহিহ্ মুসলিম: ২৫৬৩)।

  • মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

    যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

    smusmangonee@gmail.com