
ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনার অধীন গঠিত ইন্টারন্যাশনাল স্টেবেলাইজিং ফোর্সেস (আইএফএফ) সেনা পাঠানো নিয়ে পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত নিয়ে জনপরিসরে প্রশ্ন ও সংশয় ক্রমে বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা অনুযায়ী একজন মার্কিন জেনারেল এই বহুজাতিক বাহিনীর নেতৃত্ব দেবেন। এটা ট্রাকের পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু হামাস যদি সম্মতি না দেয়, তাহলে এতে যুক্ত দেশগুলো ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটির সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, তারা এই বাহিনীতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকেও এটা জানানো হয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। গত মাসে পাকিস্তানে উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার বলেন, আইএসএফে অবদান রাখতে পাকিস্তান ‘নিশ্চিতভাবেই প্রস্তুত’, তবে হামাসকে নিরস্ত্র করা ‘আমাদের কাজ নয়’।
কয়েক মাস ধরে আইএসএফের ম্যান্ডেট, কাঠামোসহ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আইএসএফের অংশ হওয়ার প্রস্তাবের জন্য পাকিস্তানকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেন, বাহিনীর ম্যান্ডেট, কমান্ড কাঠামো ও অর্থায়নসংক্রান্ত বিষয়গুলো এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে এর আগে আইএসএফে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখালেও পরে একাধিক মুসলিম রাষ্ট্র সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ে স্পষ্টতা না থাকায় এখনো কোনো দেশই সেনা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দেয়নি। ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড দোহায় একটি সম্মেলনের আয়োজন করে, যেখানে পাকিস্তানও অংশ নেয়। সেখানে আইএসএফ মোতায়েনসহ ট্রাম্পের পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপগুলো নিয়ে আলোচনা এবং বাহিনীর ম্যান্ডেট বিষয়ে ঐকমত্য গঠনের চেষ্টা করা হয়। তবে ওই বৈঠকে ম্যান্ডেট নিয়ে কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করার দাবিও বিশ্বাসযোগ্য হবে না। পাকিস্তানি সেনারা যদি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, তার পরিণতি নৈতিক এবং জনমত প্রতিক্রিয়া—দুই ক্ষেত্রেই ভয়াবহ হবে।
এর অর্থ হলো, গাজায় সেনা পাঠানোর ব্যাপারে মুসলিম দেশগুলোর সংশয় এখনো কাটেনি। বিশেষ করে আইএসএফের এখতিয়ারে যদি হামাসসহ অন্যান্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধী গোষ্ঠীকে জোরপূর্বক নিরস্ত্র করার বিষয়টি থাকে, তাহলে দেশগুলো বহুজাতিক এই বাহিনীতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
আইএসএফে পাকিস্তানের অংশগ্রহণ করা উচিত কি না, সেটি বিবেচনার জন্য সবার আগে গাজায় বর্তমানে কী পরিস্থিতি চলছে এবং ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার
দ্বিতীয় ধাপ কীভাবে অগ্রসর হচ্ছে, সেটি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা জরুরি। বাস্তবতা হলো, পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপটি বেশ কিছু কঠিন বাধার মুখে পড়েছে। বলা চলে
এর অগ্রগতি থমকে পড়েছে।
পরিকল্পনার দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে গাজার জন্য শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা, ইসরায়েলি বাহিনীর আরও প্রত্যাহার, হামাসকে নিরস্ত্র করা ও আইএসএফ মোতায়েন। তবে গাজার অন্তর্বর্তীকালীন শাসন তদারকির দায়িত্বে ট্রাম্পের নেতৃত্বে যে ‘বোর্ড অব পিস’ গঠনের কথা বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। একইভাবে গাজার দৈনন্দিন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের জন্য যে ফিলিস্তিনি টেকনোক্র্যাট কমিটি গঠনের কথা, সেই কমিটির সদস্যদের নামও প্রকাশ করা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, এসব শিগগিরই করা হবে; কিন্তু এটা এখন পরিষ্কার যে পরিকল্পনা নিয়ে অস্পষ্টতা ও ঐকমত্যের ঘাটতি রয়েছে।
গাজায় একটি দুর্বল অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়েছে। প্রতিদিনই ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করছে। সেই সঙ্গে পশ্চিম তীরে সামরিক কর্মকাণ্ডের মধে৵ নতুন বসতি
গড়ে তুলছে। অক্টোবরে অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৪০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। শীর্ষ ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বারবার বলছেন, শান্তি পরিকল্পনা মেনে তারা গাজা থেকে সম্পূর্ণ সেনা প্রত্যাহার করবে না। সে ক্ষেত্রে হামাস অস্ত্র ত্যাগ করবে না। সম্প্রতি এক হামাস কর্মকর্তা বলেন, আলোচনা অচলাবস্থায়, আইএসএফের দায়িত্ব ও ভূমিকা নিয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি। হামাসের সমর্থন ছাড়া গাজায় আইএসএফ মোতায়েন কার্যকর হবে না।
পাকিস্তানে আইএসএফের অংশ হওয়ার সিদ্ধান্ত এই বাস্তবতার বিরুদ্ধে যাবে। যদি আইএসএফের দায়িত্ব হয় হামাসকে নিয়ন্ত্রণ করা, তাহলে পাকিস্তানকে সিদ্ধান্ত
থেকে সরে আসা উচিত। তা না হলে পাকিস্তানি সেনারা সরাসরি হামাস বা অন্যান্য প্রতিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়বে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করার দাবিও বিশ্বাসযোগ্য হবে না। পাকিস্তানি সেনারা যদি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে, তার পরিণতি নৈতিক এবং জনমত প্রতিক্রিয়া—দুই ক্ষেত্রেই ভয়াবহ হবে।
মালিহা লোধি পাকিস্তানের একজন সাবেক কূটনীতিক
দ্য ডন থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত