Thank you for trying Sticky AMP!!

আগাম সতর্কতা দিন

সম্পাদকীয়

আচমকা বজ্রপাত, সঙ্গে সঙ্গে জীবনের যবনিকা। দেশে ফি বছর এভাবে বহু মানুষ মারা যাচ্ছে। এটি কি কেবল দুর্ভাগ্য? এটি ঠেকাতে যদি কোনো ব্যবস্থা থেকে থাকে, তাহলে সে সম্পর্কে কি যথেষ্ট প্রচার হয়েছে? এই প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক কারণের তুলনায় বেশি মৃত্যু ঘটে বজ্রপাতে।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বজ্রপাত এবং এতে মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমলেও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির অবসান হয়নি। কারণ, দেশে বাজ পড়ে এখনো বছরে প্রায় দেড় শ মানুষের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের প্রায় ৭০ শতাংশই কৃষক।

ফিনল্যান্ডের বজ্রপাতবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ভাইসালার হিসাবে, বজ্রপাতে গত বছর বাংলাদেশে ১৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা আগের দুই বছরের চেয়ে কিছুটা কম। বজ্রপাতের ক্ষেত্রে একটি অস্বাভাবিক বছর ছিল ২০১৬ সাল। সে বছর মারা যান ২৬৩ জন।

বাস্তবতা হলো, বজ্রপাতে মৃত্যু এড়ানো সম্ভব—এই ধারণাই অনেকের নেই। অথচ বজ্রপাতের আশঙ্কা আগাম অনুমান করা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বাতাসে জলকণার উপস্থিতিসহ নানা দিক বিশ্লেষণ করে বজ্রপাতের পূর্বাভাস দিচ্ছেন এবং সে পূর্বাভাস অনেকটাই মিলে যাচ্ছে। প্রশ্ন হলো, বজ্রপাত হতে পারে এমন এলাকাকে আগেভাগেই ‘বিপৎসংকুল এলাকা’ ঘোষণা করে এসব পূর্বাভাস জানিয়ে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে না কেন?

একটি মার্কিন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে একটি যন্ত্র বসানো হয়েছে। বজ্র নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও সেই যন্ত্র ৪৫ মিনিট আগেই বাজ পড়ার খবর দেয়। সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে সতর্ক করা যায়। সে দেশেরই অন্ধ্র প্রদেশ সরকার আধুনিক সেন্সর বসিয়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা কমিয়ে এনেছে। তারা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে সেটটপ বক্সের মাধ্যমে এসএমএস করে টেলিভিশনে সম্ভাব্য বজ্রপাতের খবর পাঠিয়ে থাকে। আমাদের দেশেও এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বলছে, তারা হাওর এলাকায় বজ্রপাত প্রতিরোধক দণ্ড স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে সে উদ্যোগ কবে কার্যকর হবে, তা এক প্রশ্ন। কারণ, এর আগে বজ্রপাত ঠেকাতে সারা দেশে প্রায় ১৩ লাখ তালগাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা থমকে আছে।

বন্যা বা ঝড়ের মতো বিপর্যয়ে একসঙ্গে বহু মানুষ বিপন্ন হয় বলে প্রতিকারের জন্য রাজনৈতিক চাপ অধিক অনুভূত হয়। সে তুলনায় বজ্রপাতে এক-দুজন মানুষ মারা যায়। তাই সেটি যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না। কিন্তু এ দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো দরকার।