Thank you for trying Sticky AMP!!

আমনের ভালো ফলন

বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করাতে যাঁরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন, তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে আছেন কৃষক। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার মতো বিপত্তিগুলো কাটিয়ে প্রতিবছর কৃষক আমাদের খাদ্যের জোগান দিচ্ছেন। একদা খাদ্যঘাটতির দেশকে খাদ্যে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। এর পেছনে সরকারের নীতিগত সমর্থন ও সহযোগিতা নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু সেটি সব ক্ষেত্রে কার্যকর ও ফলপ্রসূ হচ্ছে কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, দেশে এ বছর আমনের ফলন ভালো হয়েছে। খেতে ফলন ভালো হলে কৃষক খুশি হবেন এবং তাঁর মুখে হাসি ফুটবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কঠোর বাস্তবতা হলো, সব সময় ভালো ফলন কৃষকের মুখে হাসি ফোটায় না। লাভের গুড় প্রায় পুরোটাই পিঁপড়ায় খেয়ে নেয়। গত বোরো মৌসুমেও ধানের ফলন ভালো হয়েছিল। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কৃষককে লোকসান গুনতে হয়েছে। এক মণ ধান উৎপাদন করতে কৃষকের যে খরচ হয়েছে, ধান বিক্রি করে তা উশুল করতে পারেননি।

এবার আমনের মৌসুমেও কৃষককে প্রতি মণ ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ৫৯০-৬০০ টাকায়। অথচ উৎপাদন খরচ ছিল ৮৫০ টাকা। দেশের ১৬টি জেলায় আমন ধান বিক্রির চিত্র তুলে ধরে প্রথম আলোর প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, উৎপাদন খরচের চেয়ে গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা কমে তাঁরা ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। কৃষক যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পান, সে জন্য সরকার মৌসুমের শুরুতে নির্ধারিত দামে ধান সংগ্রহ করে থাকে। আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৬ লাখ টন। কিন্তু ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্য অধিদপ্তর মাত্র ৪১ হাজার ৫৩১ টন ধান সংগ্রহ করেছে।

এত কম সংগ্রহের কারণ কী? সংশ্লিষ্টদের অজুহাত হলো কৃষকের কাছ থেকে যথাসময়ে আবেদন পাওয়া যায়নি। আবেদন পাওয়ার পর লটারি করে তাঁদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করা হবে। আমরা মনে করি, ধান সংগ্রহের এই পদ্ধতিই ভুল। মৌসুমের শুরুতে প্রান্তিক ও গরিব কৃষকের কাছ থেকেই সরকারের ধান কেনা উচিত; ধনী কৃষকের কাছ থেকে নয়। কিন্তু লটারির মাধ্যমে কেনা হলে ধনী কৃষকেরাই বেশি সুবিধা পাবেন। এর পাশাপাশি সরকার পাইলট প্রকল্প হিসেবে ১৬টি উপজেলায় অনলাইনে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে নিঃসন্দেহে প্রান্তিক ও গরিব কৃষক লাভবান হবেন। অবিলম্বে এ পদ্ধতি সারা দেশেই চালু করা উচিত। সে ক্ষেত্রে কুয়াশা বা শীতের কারণে ধান সংগ্রহের ধীরগতির খোঁড়া যুক্তি ধোপে টিকবে না।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বিদেশে চাল রপ্তানি করতে পারলে ধানের দাম কিছুটা বাড়ত। তাঁর এ মন্তব্য অনেকটা গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল দেওয়ার মতো। কবে বিদেশে চাল রপ্তানি হবে, সে জন্য তো কৃষক অপেক্ষা করতে পারেন না। অবিলম্বে সব উপজেলায় তালিকা তৈরি করে প্রান্তিক ও গরিব কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হোক। এর পাশাপাশি পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও বেসরকারি সংস্থা বারসিক এলাকাভিত্তিক ক্রয়কেন্দ্র ও সংরক্ষণাগার প্রতিষ্ঠার যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটিও গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে মধ্যস্বত্বভোগী তথা দালালদের দৌরাত্ম্য কিছুটা হলেও কমবে।

ধানের ফলন ভালো হলেই কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে না। কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে হলে ধানের ন্যায্যমূল্যও নিশ্চিত করতে হবে।