মুন্সিগঞ্জ জেলায় নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ৬০ জন চিকিৎসককে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়েছে, তা অবশ্যই উৎসাহব্যঞ্জক। তারা এই কর্মসূচির নাম দিয়েছে ‘আমরা আলোর পথযাত্রী’। আসলেই যেসব চিকিৎসক নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যান, তাঁরা আলোর পথযাত্রী।
নবীন চিকিৎসকদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন ধন্যবাদ পেতে পারে। কিন্তু সংবর্ধনা নিতে এসে নবীন চিকিৎসকেরা কর্মক্ষেত্রে তাঁদের যে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন, তাতে আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার করুণ চিত্রই প্রকাশিত হয়েছে। গজারিয়া উপজেলার একজন চিকিৎসক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিনে এক ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ না থাকার কথা বলেছেন। এই চিত্র কেবল গজারিয়ার নয়।
সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের যত ফিরিস্তিই দিক না কেন, দেশের অধিকাংশ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যে দিনের বেশির ভাগ সময় লোডশেডিং চলে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। একটি চিকিৎসালয় বিদ্যুৎ ছাড়া কীভাবে চলে? আর বিদ্যুৎ সমস্যার সঙ্গে পানি ও নিরাপত্তার বিষয়টিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই সরকারকে দেশের সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। আরেকজন চিকিৎসক তাঁর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র না থাকার যে অভিযোগ করেছেন, সেটিও উপেক্ষণীয় নয়। রোগ পরীক্ষার ন্যূনতম সরঞ্জামাদি না থাকলে চিকিৎসকেরা কীভাবে চিকিৎসাসেবা দেবেন?
গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকদের না থাকার অভিযোগটি গুরুতর। অনেক চিকিৎসকই গ্রামাঞ্চলে থাকতে অনাগ্রহী এবং নানা অজুহাতে তারা কর্মস্থলে থাকেন না। চিকিৎসকদের এই মানসিকতা নিন্দনীয়। একই সঙ্গে এ কথাও বলা প্রয়োজন যে কেবল গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসক নিয়োগ দিলেই হবে না, চিকিৎসাসেবা দেওয়ার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহের পাশাপাশি তাঁদের কাজের ও থাকার পরিবেশও উন্নত করার বিকল্প নেই। আশা করি, সরকার এবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসকদের কথা শুনবে এবং প্রতিকারে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।