Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনাভাইরাস শনাক্ত করা

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শনাক্ত করা এই মুহূর্তের সবচেয়ে বড় ও জরুরি কাজ। কারণ, রোগটি তাদের কাছ থেকেই অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যেসব ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন, তাঁরা হয় সম্প্রতি বিদেশ থেকে এসেছেন, অথবা সম্প্রতি বিদেশফেরত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে ছিলেন। তাই, এখনকার সবচেয়ে জরুরি কর্তব্য বিদেশফেরত ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, তাঁদের দেহে করোনাভাইরাস প্রবেশ করেছে কি না, তা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নেওয়া। শুধু তা-ই নয়, তাঁদের মধ্যে যাঁরা আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন এবং হবেন, তাঁরা দেশে ফেরার পর যেসব ব্যক্তির সংস্পর্শে গেছেন, তাঁদেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, বা অন্ততপক্ষে তাঁদের ওপর নজর রাখা প্রয়োজন।

কাজটি স্পষ্টতই ব্যাপক ও জটিল। কারণ, বিদেশফেরত মানুষের সংখ্যা প্রচুর। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুযায়ী ৯ থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত মাত্র এক সপ্তাহেই ১ লাখ ৪ হাজার মানুষ এমন ৬০টি দেশ থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন, যেগুলোতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। তার আগের এক সপ্তাহে বিদেশফেরতদের সংখ্যা হিসাবে নিলে গত দুই সপ্তাহে মোট বিদেশফেরত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়ায় বিরাট। কিন্তু আমাদের করোনাভাইরাস শনাক্ত করার প্রাতিষ্ঠানিক সামর্থ্য এখন পর্যন্ত খুবই অপর্যাপ্ত। আইইডিসিআর এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করেছে মাত্র ২৬৮ জনের। তাদের কাছে আর যে পরিমাণ কিট (রিএজেন্ট, রাসায়নিক, প্রাইমার ও প্রোব) আছে, তা দিয়ে মাত্র ১ হাজার ৭৩২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব। বাংলাদেশকে এই কিট সরবরাহ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা; আবার কবে তাদের কাছ থেকে কিট আসবে, আইইডিসিআর তা জানে না।

আরও একটি সমস্যা হলো, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষা চলছে মাত্র একটি ল্যাবরেটরিতে। সেটা ঢাকায় আইইডিসিআরের ল্যাবরেটরি। সম্ভাব্য মহামারি ঠেকানোর জন্য এটা যে একেবারেই অপ্রতুল ব্যবস্থা, তা না বোঝার কোনো কারণ থাকতে পারে না। এই মানের ল্যাবরেটরি এ দেশের একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আছে। কিন্তু সরকার তাদের করোনাভাইরাস শনাক্ত করার অনুমতি দেয়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর বলছে, তারা প্রয়োজনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সহায়তা নেবে, কিন্তু শনাক্তকরণের অনুমতি দেবে না। যখন এটা পরিষ্কার যে এত বিপুলসংখ্যক মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা আইইডিসিআরের একার পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয়, তখন কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর জন্য দ্রুত রোগী শনাক্ত করার ওপর বারবার তাগিদ দিয়ে চলেছে; আক্রান্ত অন্যান্য দেশের দিকে তাকালে তাদের তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ২ লাখ ২২ হাজার ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে; ভারতে ৬২টি শনাক্তকরণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে; পাকিস্তানে ১৩টি স্থানীয় কেন্দ্রের পাশাপাশি একটি ভ্রাম্যমাণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।

আমাদের করোনাভাইরাস মোকাবিলার ভাবনা ও উদ্যোগগুলো স্পষ্টতই ঢাকায় সীমাবদ্ধ। কিন্তু এই সংকটের ঝুঁকিতে রয়েছে সারা দেশ। উপরন্তু বিদেশফেরত অধিকাংশ মানুষই ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় নিজ নিজ বাড়ি চলে গেছেন, যাচ্ছেন এবং যাবেন। তাঁদের কেউ আক্রান্ত হলে কীভাবে সেটা শনাক্ত হবে, তাঁর চিকিৎসার কী হবে? তাঁর কাছ থেকে অন্যদের মধ্যে রোগটি ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর ব্যবস্থা কী হবে?

এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা প্রয়োজন। দ্রুত করোনা শনাক্তকরণ ব্যবস্থার ঘাটতি দূর করতে হবে; এর বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। বিদেশফেরত প্রত্যেক ব্যক্তি যেন অন্তত দুই সপ্তাহ কোয়ারেন্টিনে থাকেন, তা নিশ্চিত করতে হবে, তঁাদের ওপর নজর রাখতে হবে।