জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ হত্যার তিন বছর পার হলেও বিচার না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু তার চেয়েও বেশি বেদনাদায়ক হলো সেই হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানোর ঘটনা। এই দুঃসাহস তারা কোথায় পায়? গত বুধবার সতীর্থরা জুবায়ের হত্যার বিচারের দাবিতে পোস্টার লাগাতে গেলে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেন। শুক্রবার ক্যাম্পাসে বিচারের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে এ নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
জুবায়ের আহমেদ ছিলেন ইংরেজি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী। সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ভিসি গ্রুপ ও ভিসিবিরোধী গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, যার জের ধরে জুবায়ের প্রতিপক্ষের হাতে খুন হন। এখানে খুনের শিকার ও খুনের দায়ে অভিযুক্ত উভয়ই ছাত্রলীগের নেতা–কর্মী। ফলে খুনের দায় অন্যদের ওপর চাপানোর সুযোগ নেই।
জুবায়ের হত্যা মামলার আসামিরা এতটাই দাপুটে যে তাঁরা আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে পুলিশের পাহারা থেকে পালিয়ে যান। আসামিদের কেউ কেউ ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ আছে। অন্যদিকে হত্যা মামলার এক আসামিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাকরি দিয়ে বিচারের বিপক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। জুবায়ের হত্যার পর দুজন উপাচার্য বদল হলেও হত্যা মামলার আসামি চাকরিতে যথারীতি বহাল আছেন।
কেবল জুবায়ের হত্যা নয়, গত ছয় বছরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে যে ৪০টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তার কোনোটির বিচার হয়নি। কেন হয়নি, সে প্রশ্নের উত্তর সরকারকেই দিতে হবে। আদালত থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামিদের খুঁজে না পাওয়াও রহস্যজনক। তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে ওই আসামিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেয়েও ক্ষমতাবান?
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাস ও খুনোখুনির জন্য সব হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে হবে। অবিলম্বে জুবায়ের হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচার–প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হোক।