Thank you for trying Sticky AMP!!

দুর্বৃত্তদের আইনের আওতায় আনুন

সম্পাদকীয়

শারদীয় দুর্গোৎসবে কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর যে সন্ত্রাসী হামলা, মন্দির-পূজামণ্ডপ, বাড়িঘর-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও বেদনাদায়ক। আমরা এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। ধিক্কার দিই সেই দুর্বৃত্তদের, যারা এ ঘৃণ্য হামলা চালিয়েছে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী কুমিল্লার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ত্বরিত ব্যবস্থা নিলে ঘটনা এত দূর গড়াত না। অভিযোগ আছে, হিন্দু সম্প্রদায় পূজামণ্ডপের নিরাপত্তার অনুরোধ জানালেও সেখানে যথাসময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যাননি। গেছেন হামলার ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর।

কুমিল্লার ঘটনার পর সারা দেশে পূজামণ্ডপ ও মন্দিরের নিরাপত্তায় সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা ছিল অপ্রতুল ও অপরিকল্পিত। ফলে বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলা, ভাঙচুর ও নোয়াখালীতে একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর আগে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে একদল লোক মন্দিরে হামলা চালালে পুলিশ গুলি করে এবং চারজন নিহত হন। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা ২২টি জেলায় বিজিবি মোতায়েন ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে ভেবেছেন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে। তাঁদের এ চিন্তা যে ভুল ছিল, সহিংসতার ভয়াবহতাই তার প্রমাণ।

আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর এ হামলার ঘটনার পর দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতারা নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকে সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করার চেয়ে দুঃখজনকভাবে পরস্পরকে দোষারোপে নেমে পড়েছেন। অন্যদিকে সরকার ঘটনাটি আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যার মতো করে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি মোতায়েনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়, তা উপেক্ষিতই থেকে গেছে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের, তা তিনি যে ধর্মেরই হোন না কেন, তাঁর জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দেওয়া সরকারের দায়িত্ব।

সন্ত্রাসী ও হামলাকারীরা ছাড় পাবে না, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে, সরকারপ্রধানের এ আশ্বাস সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করা না যায়। আওয়ামী লীগ ১২ বছরের বেশি সময় ধরে দেশ শাসন করছে এবং এ সরকারের আমলেই রামু, নাসিরনগর, সাঁথিয়া ও শাল্লায়ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। তাঁদের ঘরবাড়ি ও উপাসনালয় ভাঙচুর করা কিংবা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অপরাধীরা শাস্তি পায়নি। বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতেই কেটেছে। সরকার এর দায় এড়াবে কীভাবে?

সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে এতটাই ক্ষুব্ধ, মর্মাহত ও বিচলিত করেছে যে তাঁরা দুর্গোৎসবের কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করেছেন, বিভিন্ন স্থানে প্রতীকী কর্মসূচি পালন করেছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার দায় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের। তাঁরা সেই দায়িত্ব পালনে কতটা আন্তরিক, সেই প্রশ্নও না উঠে পারে না।

সংখ্যালঘুদের ওপর যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যে বলেছেন অপরাধীরা ছাড় পাবে না, সরকারের কাজেও তার প্রতিফলন দেখতে চাই। আর যেসব বক্তব্য হিংসা ও বিদ্বেষকে উসকানি দেয়, ধর্মে ধর্মে মানুষকে বিভক্ত ও বিদ্বিষ্ট করে, সেসব প্রচারও অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। হিংসা ও বিদ্বেষের বদলে মানুষের ভেতরে সম্প্রীতি ও শুভবোধ জাগ্রত হোক।