বিআইডব্লিউটিএকে তৎপর হতে হবে

নৌপথে নাব্যতা-সংকট

শুষ্ক মৌসুম এসেছে অথচ গণমাধ্যমে দেশের নদ-নদীগুলোর নাব্যতা-সংকটের খবর আসেনি, এমনটা খুব কমই দেখা গেছে। প্রতিবছরই শুষ্ক মৌসুম আসতে না আসতেই নদ-নদীতে নাব্যতা-সংকটের খবর প্রকাশিত হয়। মূলত খনন না করার কারণে নদ-নদীতে এই নাব্যতা-সংকট দেখা দেয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি একটু সচেতন থাকে তাহলে আর এ সংকটের সৃষ্টি হয় না।

গত সপ্তাহে প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৮৮টি নৌপথে এবার নাব্যতা-সংকট দেখা দিয়েছে। শীত মৌসুমে পানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য ডুবোচরের কারণে এসব নৌপথ ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। এর মধ্যে ৫৭টি নৌপথে ঝুঁকি নিয়ে দোতলা লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচল করছে। বাকি ২৭টি নৌপথ চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

নদীতে পলি জমে নাব্যতা-সংকট সৃষ্টি হয় মূলত প্রাকৃতিক কারণে। আর শুষ্ক মৌসুমে নৌপথে চর ও ডুবোচর জেগে ওঠা নতুন কিছু নয়। কিন্তু নিয়মিত খনন না করার কারণে বাংলাদেশে শত শত নদ-নদী ও সেগুলোর নৌপথের নাব্যতা-সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। খনন করে গুরুত্বপূর্ণ নৌপথগুলো সচল রাখার একটা চেষ্টা থাকে বটে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা সীমিত পরিসরেই দেখা যায়। এটা মোটেই কাম্য নয়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত ৪০ বছরে ১৮ হাজার কিলোমিটার নৌপথ হারিয়ে গেছে। দূষণ-দখল ছাড়াও নিয়মিত নদী খনন না করাকে এ জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই দায়সারা গোছের কাজ না করে সমন্বিত ও পরিকল্পিত উপায়ে খনন তথা বৃহৎ বা গভীর খনন করতে হবে।

নদীমাতৃক দেশ হয়েও সব সময় নিজেদের নৌপথ নির্বিঘ্ন রাখতে না পারা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। যে করেই হোক নৌপথগুলোকে সচল রাখতে হবে। কেননা, কম খরচে, নিরাপদ ও সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছার জন্য নৌপথের কোনো বিকল্প নেই। বিশেষত, পণ্য আনা-নেওয়ার জন্য নৌপথ বিশ্বজুড়েই আদর্শ মাধ্যম। কিন্তু অবহেলা, অনিয়ম ও অদূরদর্শিতার কারণে আমাদের নদ-নদী ও নৌপথগুলোকে সেভাবে কাজে লাগানো যায়নি।

এ ক্ষেত্রে বিআইডব্লিউটিএকে অনেক বেশি তৎপর হতে হবে। কারণ, নদী খনন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব মূলত তাদেরই। তাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে নদ-নদীগুলো নিয়মিত খনন করতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অপসারিত পলি পরবর্তী সময় আবার নদীতেই ফিরে আসে। অপসারিত পলি যেন আর কখনোই নদীতে ফিরে না আসে, সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।