Thank you for trying Sticky AMP!!

পুলিশ কেন যথাসময়ে পদক্ষেপ নিল না

গত সোমবার রাত ও মঙ্গলবার দিনভর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যকার দফায় দফায় সংঘর্ষে বিপুলসংখ্যক দোকানপাট, একটি অ্যাম্বুলেন্সসহ বহু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাংবাদিক, পুলিশ, ছাত্র, ব্যবসায়ীসহ ৪০ জন আহত হয়েছেন। দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নাহিদ হোসেন নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। একটি কুরিয়ার সেবা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাহিদ কামরাঙ্গীরচর থেকে তাঁর কর্মস্থল এলিফ্যান্ট রোডে যাচ্ছিলেন। এ মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

এ সংঘর্ষের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আগের রাতের সংঘর্ষ বন্ধে পুলিশ হস্তক্ষেপ করলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের নিষ্ক্রিয়তা রহস্যজনক। এ এলাকায় নিউমার্কেট থানা ছাড়াও নীলক্ষেত ও সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে দুটি পুলিশ বক্স আছে। কিন্তু সকাল সাড়ে নয়টায় ছাত্রদের অবরোধকে কেন্দ্র করে নতুন করে সংঘাত শুরু হলেও বেলা একটা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এর কারণ কী? তারা কি সংঘাত মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে পরে এসে ‘শান্তি’ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার কৌশল নিয়েছিল?

নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের বিরোধ-সংঘাত নতুন কিছু নয়। কিন্তু একটি বিরোধ এ পর্যায়ে চলে যাওয়ার ঘটনাটি সত্যিই বিস্ময়কর। ঘটনার সূচনা নিউমার্কেটের বিপণিবিতানের দুই ফাস্ট ফুডের দোকানের কর্মচারী বাপ্পী ও কাওসারের মধ্যে বিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে। একপর্যায়ে বাপ্পীর সমর্থনে টি-শার্টধারী একদল তরুণ কাওসারকে শাসাতে এলে তাঁর সমর্থকেরা তাঁদের ধাওয়া দেন। এরপর ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির নেতারা এসে বিপণিবিতানের গেট ভেঙে দোকান ভাঙচুর করেন। ক্যাপিটাল ফাস্ট ফুডের কর্মচারী বাপ্পীর সঙ্গে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কতিপয় সদস্যের সখ্য ও নিউমার্কেটকেন্দ্রিক ‘লেনদেন’ থাকারও অভিযোগ আছে।

আগে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘাত হতো চাঁদাবাজি, ফাউ খাওয়া কিংবা দোকান কর্মচারীদের দুর্ব্যবহারের কারণে। এবার ঘটনা ঘটল দুই কর্মচারীর পক্ষ-বিপক্ষে কিছু ছাত্রের অবস্থান নেওয়া নিয়ে। ঢাকা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এ টি এম মইনুল হোসেন প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ছাত্ররা জড়িত ছিল না, জড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কারা এবং কী স্বার্থে ছাত্রদের এর সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছে?

অন্যদিকে ব্যবসায়ী নেতারা দাবি করেছেন, তাঁরা ছাত্রদের সঙ্গে সংঘাতে জড়াননি। তাহলে কারা সংঘাতে জড়াল, তা খুঁজে বের করা জরুরি। সংঘর্ষের সময় হেলমেট পরা এক গোষ্ঠীকে তৎপর দেখা গেছে। তারা কারা? তদন্ত করে দেখতে হবে পুলিশ কেন যথাসময়ে তৎপর হলো না, সংঘাত থামানোর কার্যকর উদ্যোগ নিল না। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে যারা ভাঙচুর করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর গতকাল দুপুরের পর ব্যবসায়ীরা দোকান খোলা শুরু করেছেন। সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা কলেজ বন্ধ ও ছাত্রদের হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ নির্দেশ এসেছে। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা হল ছাড়েনি। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে আবার সংঘাত ও সংঘর্ষের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

কুরিয়ার সার্ভিসের যে কর্মী নিউমার্কেট এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে প্রাণ হারালেন, তাঁর পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা রইল। আশা করি, সরকার তাঁর পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেবে। একই সঙ্গে এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের যথাযথ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।