এত অকালমৃত্যুর কারণ জানতে তদন্ত হোক

প্রবাসীদের লাশ হওয়া

প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জন প্রবাসী বাংলাদেশির লাশ হয়ে ফেরার ঘটনাকে একটি জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে দেখা সমীচীন বলেই প্রতীয়মান হয়। এই বিয়োগান্ত ঘটনাকে একটা মামুলি দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার মানসিকতা পরিত্যাগ করা উচিত। এই মৃত্যু অত্যন্ত অস্বাভাবিক, যা কোনো বিচারেই গ্রহণযোগ্য নয়।
যারা বিদেশে কাজ করতে যান, তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যথেষ্ট গুরুত্ব লাভ করেছে। বিদেশি শ্রমিক নিয়োগে নিয়োগকারী সংস্থাগুলো সংগত কারণেই শ্রমিকদের ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী থাকার বিষয়টিকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আর এটা অপ্রিয় সত্য যে প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের একটি বড় অংশই আধা দক্ষ, কাজ পেতে যাঁদের মূল যোগ্যতা শারীরিকভাবে পুরোপুরি সক্ষম হওয়া। গত নয় বছরে কায়িক শ্রমনির্ভর দুটো বৃহৎ শ্রমবাজার সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া থেকেই সবচেয়ে বেশি লাশ এসেছে। সার্বিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেই ৬১ শতাংশ শ্রমিকের লাশ ফিরে আসা উদ্বেগজনক এই কারণেও যে এই অঞ্চল এখনো পর্যন্ত আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহের মুখ্য উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গত চার বছরে যত মানুষের লাশ এসেছে, তাঁদের ৮০ শতাংশেরই মৃত্যুর কারণ আকস্মিক। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে ২৭ থেকে ৩৯ বছর বয়সী চার প্রবাসীর মরদেহ দেশের মাটি স্পর্শ করল গত মাসেই। বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি যেহেতু বিদেশে থাকেন, তাই তাঁদের একটি অংশ স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু কম বয়সী প্রবাসী শ্রমিকেরা যে ব্যাপকতায় স্ট্রোক, দুর্ঘটনা ও হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশই যে বিদেশে কাজের ভালো পরিবেশ পান না এবং স্বচ্ছন্দ জীবনযাপনের মতো যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করেন না, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু আমাদের নীতিনির্ধারকেরা এ বিষয়ে খুব উদ্বিগ্ন বলে মনে হয় না। বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির বাজার বাড়ানো এবং সেই সব উৎস থেকে অর্জিত রেমিট্যান্সের স্ফীতি নিয়ে তাঁরা অহরহ গর্বও প্রকাশ করেন। কিন্তু তিন বছরের ব্যবধানে প্রকাশিত প্রথম আলোর প্রতিবেদন নিশ্চিত করছে যে প্রবাসী শ্রমিকদের অকালমৃত্যুর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে।
এ ঘটনা আমাদের স্তম্ভিত ও বিচলিত করছে। বিষয়টি গভীর উদ্বেগজনক, অনতিবিলম্বে যার তদন্ত করে সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।