Thank you for trying Sticky AMP!!

বরিশালের একটি পুকুর

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের ছোট–বড় প্রায় সব শহরে দিঘি, পুকুর, খাল ও অন্যান্য জলাশয় ভরাট করে ঘরবাড়ি, দালানকোঠা, রাস্তাঘাট ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের যে প্রবণতা দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসছে, তা যারপরনাই দুঃখজনক। কারণ, এই প্রবণতা প্রধানত সেই সব মহলেই বেশি দেখা যায়, রাষ্ট্র ও সমাজে যাঁদের প্রভাব রয়েছে। জলাশয় রক্ষার জন্য যেসব আইন–বিধান করা হয়েছে, সেগুলো লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে এই প্রভাবশালীরা এগিয়ে থাকেন। ফলে ছোট–বড় সব শহরের দিঘি–পুকুর ভরাট হয়ে যাচ্ছে; এই প্রক্রিয়া কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না।

সে রকমই একটি খবর এসেছে বরিশাল থেকে। ওই বিভাগীয় ঐতিহ্যবাহী একটি পুকুর আছে সরকারি বরিশাল কলেজের সামনে। উনিশ শতকের শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিক অশ্বিনীকুমার দত্তের স্মৃতিবিজড়িত ওই পুকুর খোদ কলেজ কর্তৃপক্ষই বিভিন্ন কৌশলে ভরাট করে চলেছে—এমন অভিযোগ উঠেছে। এই প্রক্রিয়া চলে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরে। প্রথমে পুকুরটির দক্ষিণ পাড়ের প্রায় অর্ধেক অংশ ভরাট করে প্রথমে টিনের এবং পরে পাকা মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সময় পুকুরটির উত্তর দিকের একাংশও ভরাট করা হয়েছে। পুকুর ভরাট করার এই সুদূরপ্রসারী কৌশল লোকচক্ষুর অন্তরালে সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছে উঁচু প্রাচীর। যাতায়াতের জন্য রাস্তা নির্মাণ করতে গিয়ে আরও কিছু অংশ ভরাট করা হয়। বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় খবর বেরিয়েছে, পুকুরটির পশ্চিম পাড়ে নতুন করে সুরকি ফেলে আরও ভরাটের অভিযোগ উঠেছে।

সরকারি বরিশাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরা পুকুরটি ভরাট করার কোনো উদ্যোগ নেননি। আর বরিশালের জেলা প্রশাসক বলেছেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন, কিন্তু এ বিষয়ে কেউ লিখিতভাবে তাঁর কাছে অভিযোগ করেনি বলে তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে তাঁরা বিষয়টি অবশ্যই দেখবেন। আমাদের জিজ্ঞাসা, কলেজের অধ্যক্ষ মহাশয়ের যদি পুকুরটির ইতিহাস জানা না–ও থাকে, তিনি কি সেটির বর্তমান সংকুচিত দশা দেখে বুঝতে পারেন না ভরাটের তৎপরতা চলেছে কি না? আর জেলা প্রশাসকের কাছে আমাদের প্রশ্ন, কাদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগের প্রত্যাশায় তাঁরা আছেন? দেশে পুকুর–দিঘি–জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে আইন আছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জলাশয় ভরাট না করার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরে জেলা প্রশাসনকে কার পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগের অপেক্ষা করতে হবে? বরিশালের নাগরিক সমাজ পুকুরটি ভরাটের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, জেলা প্রশাসন কি সেই সূত্র ধরে সরেজমিন পুকুরটির অবস্থা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে না?

পুকুরটির যেটুকু অংশ এখনো অবশিষ্ট আছে, সেটা যেন কোনোভাবেই ভরাট করা না হয়, তা নিশ্চিত করা হোক।