Thank you for trying Sticky AMP!!

বাধাগ্রস্ত নৌপথ

সম্পাদকীয়

অকেজো হয়ে যাওয়ায় বেশ কিছু সরকারি জাহাজ, ট্যাংকার ও ড্রেজার শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে রাখা হয়েছে। সেগুলো সংস্কার বা মেরামত করে আবারও কাজে লাগানো হবে, স্বাভাবিকভাবে এমনটাই মনে হতে পারে যে কারও। কিন্তু না, সেগুলো পড়েই আছে। তা–ও এক–দুই সপ্তাহ বা মাস ধরে নয়, শুনতে অবাক লাগতে পারে, ১০ থেকে ৩০ বছর ধরে। এভাবে নষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পদ। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে নদীর নাব্যতা, হচ্ছে পরিবেশদূষণও। নদীপথ সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ায় অন্যান্য নৌযান চলাচলও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। অথচ বিষয়টি নিয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো আন্তরিক প্রচেষ্টা এত বছরেও দেখা গেল না। সরকারি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর উদাসীনতা, অবহেলা ও দায়হীনতার এর চেয়ে বড় নমুনা আর কী হতে পারে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ শহরের হাজীগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে পড়ে আছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) ৯টি অকেজো জাহাজ। পানিতে ডুবে আছে আরও কয়েকটি। একই সঙ্গে পড়ে আছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১২টি ড্রেজার। বছরের পর বছর পড়ে থাকায় জাহাজগুলোয় মরিচা ধরেছে। যন্ত্রাংশ, মালামাল নষ্ট ও চুরি হয়ে যাচ্ছে। নদী দখল করে জাহাজগুলো দেশের গুরুত্বপূর্ণ নৌ চ্যানেলটিকেও সংকীর্ণ করে ফেলেছে। যাত্রীবাহী কোনো নৌযান চলাচল না করলেও পণ্য ও মালবাহী জাহাজ চলাচল করে থাকে এ চ্যানেল দিয়ে। ডুবন্ত জাহাজের ধাক্কায় কোরবানির গরুবাহী এক ট্রলারডুবিতে ৪০টি গরুর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এমন আরও দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। নদী রক্ষা কমিটির সভায় জাহাজগুলো সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও দেড় বছরেও সেগুলো সরিয়ে নেয়নি বিআইডব্লিউটিসি ও পাউবো।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জাহাজগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য পাউবো ও বিআইডব্লিউটিসিকে কয়েক দফা চিঠি দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সংস্কার বা মেরামত করে পাউবোর কয়েকটি ড্রেজারকে আবার চলাচল উপযোগী করার সুযোগ থাকলেও এর কোনো অগ্রগতি নেই। সরকারি সম্পদ নষ্ট হলে কার কী, এটিই যদি হয় ভাবনা, তাহলে দায়িত্বশীলেরা কেন সেখানে আছেন? আবার অমেরামতযোগ্য জাহাজগুলো সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে করোনা পরিস্থিতির দোহাই দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এত বছর তঁারা কী করেছিলেন? কেন এত দিনে সেগুলো বিক্রি করা গেল না? বিক্রির দরপত্র দিতে কেন এত গড়িমসি?

বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক শেখ মাসুদ কামাল বলেন, ‘জাহাজগুলো সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে প্রতিষ্ঠান দুটির উদাসীনতা বিস্ময়কর। আগামী ঈদুল আজহার আগে সেগুলো সরিয়ে নিতে হবে। না হলে আইনানুসারে জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে অকেজো জাহাজগুলো অপসারণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ আমরাও চাই দ্রুত এ ব্যাপারে একটা বিহিত হোক।