Thank you for trying Sticky AMP!!

রিমান্ডের যথেচ্ছ ব্যবহার

মডেল মরিয়ম আক্তার ওরফে মৌ-এর বিরুদ্ধে আনা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে নিম্ন আদালতে বারবার রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনায় উচ্চ আদালত যে মন্তব্য করেছেন, তা সংশ্লিষ্ট সবার জন্য অবশ্যপালনীয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। গত ১ আগস্ট মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ মরিয়ম আক্তারকে আটক এবং মদ, ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে। নিম্ন আদালতে একাধিকবার জামিনের আবেদন নাকচ হওয়ার প্রেক্ষাপটে মরিয়ম আক্তার উচ্চ আদালতে রিট করলে ২২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি মোস্তাফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের বেঞ্চ অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেন।

ডেইলি স্টার-এর খবর অনুযায়ী, হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণ বিবরণ পাওয়া গেছে, যাতে বলা হয়, নিম্ন আদালতের বিচারকেরা রিমান্ড মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে প্রচলিত আইন ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অগ্রাহ্য করেছেন। তাঁদের মতে, বিচারকদের (নিম্ন আদালত) কাজ স্বাভাবিক ছিল না এবং ফৌজদারি বিচার ও সুষ্ঠু তদন্তের পরিপন্থী। অভিযুক্তকে রিমান্ডে নেওয়ার নামে বিচারিক সময় ও অর্থের অপচয় কাম্য নয়। এ বিষয়ে বিচারকদের আরও সতর্ক হতে হবে। আদালতের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, অপরাধের ধরন ও মাত্রা দেখে মনে হয়, অভিযুক্তকে তিন দফায় ৯ দিন রিমান্ডে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না।

এর আগে চিত্রনায়িকা পরীমনির মামলায়ও উচ্চ আদালত মন্তব্য করেছিলেন, ‘সভ্য সমাজ এভাবে চলতে পারে না’। পরীমনির তিন দফা রিমান্ডের বিষয়ে উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতের দুই বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন। বিচারকদ্বয় প্রথম দফায় যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তা–ও উচ্চ আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।

কেবল এই দুটি ঘটনা নয়, ফৌজদারি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের নামে একের পর এক রিমান্ডে নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তির ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার ঢের উদাহরণ আছে। গ্রেপ্তার ও রিমান্ডের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের ১৫ দফা নির্দেশনায় বলা আছে, আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার করতে পারবে না, গ্রেপ্তারের তিন ঘণ্টার মধ্যে কারণ জানাতে হবে, আটক ব্যক্তিকে তাঁর পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে, জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের কাচনির্মিত বিশেষ কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তাঁর আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন, কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া না গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে সর্বোচ্চ তিন দিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন; জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করতে হবে।

খুব কম ক্ষেত্রেই এসব নির্দেশনা মানা হয়। কেন মানা হয় না, সেই প্রশ্নই প্রতিধ্বনিত হয়েছে হাইকোর্টের রায়ে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় সরকারের আমলে রিমান্ডের যথেচ্ছ ব্যবহার হয়েছে ও এখনো হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয়ে উৎসাহ দেখাতে পারে। কিন্তু বিচারকেরা কেন রিমান্ডের আবেদন এলেই বাছবিচারহীনভাবে তা অনুমোদন করে যাবেন? আইন ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা তাঁরা অগ্রাহ্য করতে পারেন না।

আমরা আশা করব, উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনার পর রিমান্ডের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ হবে। আইনের শাসন ও নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় এর বিকল্প নেই।