Thank you for trying Sticky AMP!!

সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছেই

সম্পাদকীয়

করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারের ঊর্ধ্বগতি কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৩৭ জনের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৩৩ জন। আগের দিন মারা যান ৩৪ জন। এ পর্যন্ত দেশে মোট ৫ লাখ ৮৮ হাজার ১৩২ জনের করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। এ তথ্য যেকোনো বিচারে উদ্বেগজনক।

ইতিমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার স্ট্রেইন বা ধরনের করোনাভাইরাস বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, যার ক্ষেত্রে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কার্যকর নয় বলে বলা হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন বিজ্ঞানী ডেইলি স্টার-এ সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, এটি অসত্য প্রচারণা। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা অবশ্যই কার্যকর। এ ক্ষেত্রে যাতে কোনো রকম বিভ্রান্তি তৈরি না হয়, সে জন্য সরকারের উচিত পুরো বিষয়টি জনগণের কাছে পরিষ্কার করা। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এ টিকার তেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার বা প্রশাসনের উদ্যোগের বেশ ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে। পরীক্ষা ও টিকা দুই ক্ষেত্রেই। পরীক্ষায় গ্রামের মানুষের যেমন আগ্রহ কম, তেমনি অবকাঠামোগত সুবিধাও অপ্রতুল। টিকাদান কর্মসূচিও এখন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ মূলত শিক্ষিত, শহুরে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যে। সত্যিকার অর্থে গণটিকাদান কার্যক্রম এখন পর্যন্ত শুরু হতে পারেনি। পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগেই আমাদের কয়েকটি বিষয়ের ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে। প্রথমত, টিকা গ্রহণের জন্য সর্বসাধারণকে উৎসাহিত করার ব্যাপক উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে টিকা গ্রহণের পক্ষে প্রচার বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে যে শিথিলতা চলছে, তা অবশ্যই দূর করতে হবে। এ জন্য এখন কঠোর পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে।

এ প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে ২৩ মে থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শ্রেণিকক্ষে
পাঠদান শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবসম্মত বলে মনে করি। এর আগে সরকার ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে অতি সম্প্রতি চলমান কোভিড–১৯ মহামারিতে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হওয়ায় স্কুল খোলার নির্ধারিত তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২৩ মে থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরুর কথা রয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কেবল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে হাটবাজার, গণপরিবহন, পর্যটন—সবকিছু খোলা আছে। সরকারের পক্ষ থেকে শুরুতেই বলা হয়েছিল, টিকা পাওয়া মানেই করোনা থেকে মুক্তি নয়। টিকার সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধিও সবাইকে মানতে হবে। ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের যেমন উদাসীনতা আছে, তেমনি প্রশাসনও অনেকটা উদাসীনতা দেখাচ্ছে। মাঝেমধ্যে লোকদেখানো অভিযান চালিয়ে দু–চারজনকে জরিমানা করলেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। করোনাকে মোকাবিলা করতে সর্বাত্মক ও সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ পদ্ধতি কঠোরভাবে প্রয়োগ হোক।