Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে এক নারীর বিরুদ্ধে কথিত অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে তাঁকে বেত্রাঘাত ও পাথর ছুড়ে মারার যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক ও নিন্দনীয়।

প্রথম আলোর খবরে যেসব তথ্য এসেছে, তাতে ঘটনাটি উদ্দেশ্যমূলক বলে মনে হয়। একজন পুরুষ ও একজন নারীর মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে, অথচ সালিসকারীরা অভিযুক্ত নারীকেই শুধু বেত্রাঘাত করে ও পাথর ছোড়ার মতো নিষ্ঠুর শাস্তি দিয়েছেন।

যে পুরুষের সঙ্গে ওই নারীর সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগ এসেছে, তিনি নিজেই ভিডিওর মাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে দিয়েছেন।

মামলার বিবরণে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চুনারুঘাট উপজেলার একটি গ্রামে ওই নারীর বাড়ি। তাঁর স্বামী ওমানপ্রবাসী। স্বামী বিদেশে থাকায় বিভিন্ন প্রয়োজনে ওই নারীর বাসায় আসা-যাওয়া করতেন সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আবুল কালাম। এ সুযোগে ওই গৃহবধূর কিছু ভিডিও মুঠোফোনে ধারণ করেন। ৪ এপ্রিল রাতে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গ্রামে সালিস বসে এবং ওই নারীকে ৮২টি বেত্রাঘাত ও ৮০টি পাথর নিক্ষেপ করা হয়। সালিসে তাঁকে এক মাস ঘর থেকে বের হতে নিষেধ করা হয় এবং বলা হয়, ‘ঘর থেকে বের হলে শাস্তি আরও ভয়াবহ হবে।’

পরে ওই নারী চুনারুঘাট থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত মো. নুরুল ইসলাম বায়েজিদ হোসেন, আতিক উল্লা ও মো. তৈয়ব আলী নামে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার পর থেকে অটোরিকশাচালক গা ঢাকা দিয়েছেন।

এখানে অভিযুক্ত নারীর প্রবাসী স্বামী যে ভূমিকা নিয়েছেন, তাকে প্রশংসনীয় বলতে হবে। স্ত্রীর ওপর নির্যাতনের খবর পেয়ে গত বৃহস্পতিবার তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং নির্যাতনের ঘটনায় আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে গ্রামবাসী বাধা দেন। পরে ওই ভুক্তভোগী নারী নিজেই মামলা করেন।

তাঁর স্বামী যৌক্তিকভাবেই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘অপরাধ যদি হয়, নারী-পুরুষ উভয়ই করেছেন। গ্রামবাসী শুধু নারীর বিচার করেছেন। অথচ যিনি ভিডিও ছড়িয়ে আমার স্ত্রীকে হেয় করেছেন, তাঁর বিচার কে করবে?’

নারী নিগ্রহের ঘটনায় ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক উদ্বেগ জানিয়েছেন। মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ঢাকায় মানববন্ধন করা হয়েছে। তাদের একটি প্রতিনিধিদলও সেখানে গিয়েছে। যাঁরা অনৈতিক সম্পর্কের দোহাই দিয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন এবং একজন নারীর ওপর নিষ্ঠুর আচরণ করেছেন, আমরা তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।