রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েটে) এক বছর ধরে উপাচার্য নেই। সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশে এটিও খবর বটে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী আছে, শিক্ষক আছেন, প্রশাসন আছে; কিন্তু তঁাদের যে অভিভাবক—উপাচার্য; সেই পদটাই সরকারের নীতিনির্ধারকেরা দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রেখে দিয়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমে একজন শিক্ষককে দৈনন্দিন প্রশাসনিক কাজ চালানোর নির্দেশনা দিয়েই দায়িত্ব শেষ করল। এরপর সেই দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকও যখন পদত্যাগ করলেন, তখন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে বাধ্য।
‘উপাচার্য নেই এক বছর: রুয়েটে অচলাবস্থা’ শিরোনামে প্রথম আলোয় খবর বের হয়েছে বৃহস্পতিবার। এতে দেখা যায়, আটকে আছে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা, শিক্ষকদের পদোন্নতি। এমনকি উচ্চশিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে যে ছাড়পত্র প্রয়োজন, তা–ও মিলছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কর্মকর্তারা কি বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন?
শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা পিছিয়ে যাওয়ায় সেশনজটের আশঙ্কা আছে। করোনাকালে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো রুয়েটের শিক্ষার্থীদের
পরীক্ষা-ক্লাস পিছিয়ে যায়। সেটা হয়েছিল মহামারির প্রকোপের কারণে, যার ওপর কারও হাত ছিল না। কিন্তু এক বছর ধরে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদ খালি রাখার বিষয়টি সরকার তথা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বহীনতারই পরিচয়।
শিক্ষার্থীরা আবেদন–নিবেদন করেও যখন দেখছেন কাজ হচ্ছে না, তখন তাঁরা আন্দোলনে নেমেছেন। গত বৃহস্পতিবার পরীক্ষা গ্রহণ ও উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে রুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থীরা বুধবার ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেন। উপাচার্য না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রমের পাশাপাশি থমকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজও।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. সেলিম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, উপাচার্য না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে একরকম অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাঁরা গত ১৮ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবগত করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাইয়ের শেষে নিয়মিত উপাচার্য রফিকুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হয়। পরে ৩ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে রুয়েটের জ্যেষ্ঠতম অধ্যাপক ও অ্যাপ্লায়েড সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ অনুষদের ডিন মো. সাজ্জাদ হোসেনকে উপাচার্যের দৈনন্দিন কার্য সম্পাদনের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়। তবে গত ২৮ মে পদোন্নতির দাবিতে শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন তিনি। এর পর থেকে একাডেমিক পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮টি বিভাগে ৫ হাজার ৬৫০ জন শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নিয়ে এ রকম স্বেচ্ছাচারিতা চলতে পারে না। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য নিয়োগের জন্য তিনবার নাম পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সরকার এখনো কাউকে নিয়োগ দেয়নি। সরকার তো তাদের পছন্দসই ব্যক্তিকেই এ পদে নিয়োগ দিয়ে থাকে। তাহলে কি সে রকম ব্যক্তি আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না?
সরকার নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করছে। কিন্তু পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঠিকমতো চলছে কি না, সে ব্যাপারে কোনো মনোযোগ নেই। রুয়েটের ঘটনায় উচ্চশিক্ষা তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের প্রতি সরকারের উপেক্ষা ও অমনোযোগই প্রকাশিত হয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে সরকার উন্নয়নের বাধা হিসেবে বিরোধী দল ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দায় চাপিয়ে থাকে। কিন্তু রুয়েটের অচলাবস্থার ক্ষেত্রে তো সেই যুক্তি খাটে না। এই সমস্যা তাদের নিজেদেরই সৃষ্টি। অবিলম্বে উপাচার্য নিয়োগ দিয়ে রুয়েটের অচলাবস্থার অবসান করা হোক।