Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

বাজার অস্থিতিশীল করার পেছনে কারা

স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা দিয়ে এক কেজি গরুর মাংস কিংবা ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে খাসির মাংস কেনা এখন অনেকটা বিলাসিতা। সে ক্ষেত্রে আমিষের চাহিদা পূরণের বিকল্প উপায় ছিল ডিম ও ব্রয়লারের মুরগি।

এর দাম তুলনামূলকভাবে কম। মাস কয়েক আগেও ১০০ থেকে ১১০ টাকায় এক ডজন ডিম পাওয়া যেত। ১৫০ টাকার মধ্যে এক কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৭০ টাকা এবং ব্রয়লারের মুরগি প্রতি কেজি ২৫০ টাকায়।

বাজার-বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের ভুল নীতি ও দুর্বল বাজার তদারকির কারণে কেবল ডিম ও মুরগি নয়, সব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। অন্যান্য খাতের মতো পোলট্রিশিল্পও কয়েকটি বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করে। ডিম ও মুরগির দাম বাড়া-কমার বিষয়টিও অনেকটা তাদের মর্জির ওপর নির্ভর করছে।

পোলট্রিশিল্পের মালিকদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে মুরগির ফিডসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু সেটা কী পরিমাণ? আন্তর্জাতিক বাজারে যে হারে দাম বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি হারে ডিম ও মুরগির দাম বৃদ্ধির কোনো যুক্তি নেই।

সরকারি হিসাবে দেশে গত ১০ অর্থবছরে ডিম ও দুধ উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আর মাংস উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণের কাছাকাছি। চাহিদা ও সরবরাহের নিরিখে পণ্যের দাম নির্ধারিত হয়। এখানে তার ব্যত্যয় ঘটেছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার।

প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, উৎপাদন খরচের সঙ্গে ডিম-মুরগির দাম যৌক্তিক হারে সমন্বয় হতে হবে। সে ক্ষেত্রে খামারিরা উৎপাদন বন্ধ করবেন না। তাতে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে। করপোরেট সিন্ডিকেটের কারণে ডিম ও মুরগির দাম বাড়ছে বলেও দাবি করেন ছোট খামারিদের এই নেতা।

অন্যান্য খাতের মতো ডিম ও মুরগির দাম বাড়ানোর পেছনে কোনো শক্তিশালী পক্ষের কারসাজি আছে কি না, সেটা সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে। প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গত শনিবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মুরগির ডিমের দাম তদারকির লক্ষ্যে রাজধানী ঢাকার একাধিক এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে ৩২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। কিন্তু এভাবে বিক্ষিপ্ত ও বিচ্ছিন্ন অভিযান চালিয়ে বাজারে স্থিতিশীলতা আনা যাবে না। এ জন্য সমন্বিত ও সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে।

দেশে বর্তমানে ৯ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি চলছে। তার প্রভাব ডিম ও মুরগির বাজারেও পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু তাতে প্রতি মাসে ডিমের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার কথা নয়।

এ ক্ষেত্রে খুদে খামারিদের সমস্যাও আমলে নেওয়া প্রয়োজন। সরকার খুদে খামারিদের প্রয়োজনীয় ঋণের ব্যবস্থা করলে বড় প্রতিষ্ঠানের ‘ঋণচক্র’ থেকে তাঁরা বেরিয়ে আসতে পারেন।

বাজারেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে আশা করা যায়। পোলট্রি শিল্পের মালিকেরা আমদানি পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়ে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে। সরকার তো অনেক আমদানি পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক কমিয়েছে। এ ক্ষেত্রেও সেটি অনুসরণ করা হলে ক্রেতাসাধারণই লাভবান হবেন।