দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া উচিত। সেটি যখন গৌণ হয়ে যায়, সেখানে নদী মরে যায়, ধ্বংস হয় পাহাড়, হুমকির মুখে পড়ে জীববৈচিত্র্য। এসবেরই ওপর যখন আঘাত আসে, তখন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবনও।
আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে বিষয়গুলোকে আদৌ কি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়? বরং অনেক উন্নয়ন বাস্তবায়নই করা হয় পরিবেশের ক্ষতি করে। প্রকল্প পরিকল্পনার শুরু থেকেই সেটি গুরুত্বহীন থাকে। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি গাজীপুরে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের উড়ালসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে।
তুরাগ নদের ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে উড়ালসড়কটি। সেটি করতে গিয়ে নদটিই মেরে ফেলার আয়োজন করা হয়েছে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, পানিপ্রবাহ কমে যাওয়া ও দখল-দূষণে তুরাগ নদ এমনিতেই হুমকির মুখে। সেখানে উড়ালসড়ক নির্মাণ করতে নদের দুই পাশে আড়াআড়িভাবে দেওয়া হয়েছে মাটির বাঁধ। এতে প্রশস্ততা কমে সরু খালে পরিণত হয়েছে নদটি। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌ চলাচল। বর্ষাকালে ভারী বৃষ্টিপাত হলে ওই এলাকা প্লাবিত হয়ে অসংখ্য মানুষ দুর্ভোগের মুখে পড়ে। ইতিমধ্যে এ মৌসুমে ঝড়–বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃষ্টির পানি নেমে যাওয়ার সুযোগ না থাকলে এ বছর আরও আগে থেকে দুর্ভোগের শিকার হবে মানুষ।
বিআরটি প্রকল্পের বক্তব্য হচ্ছে, কাজের জন্য সাময়িকভাবে নদটির কিছু অংশে ভরাট করা হয়েছে। কাজ শেষ হয়ে গেলে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে। এ ব্যাপারে সব ধরনের অনুমতিও নেওয়া আছে। নদটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ–ও এ বক্তব্যে সায় দিয়েছে। তবে কাজ শেষে অবশ্যই নদীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে, সেটিও তারা বলেছে।
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, শুধু সেতু নির্মাণের জন্য কোনো নদ বা নদীর বুকে এভাবে বাঁধ নির্মাণ করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, একটা সময় বাঁধ কেটে দেওয়া হলেও নিচে ভরাটের কারণে আগের পানিপ্রবাহ ফেরে না। এ ছাড়া কাজ শেষ করার পর সাধারণত বাঁধ সরানো হয় না।
সরালেও তা পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরে আসে না। বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেছেন, তুরাগের ওপর যেভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে, তা দেখলেই গা শিউরে ওঠে। এটি নদের টুঁটি চেপে ধরার মতো, নদ হত্যার শামিল।
দেশের সড়কপথে অন্যতম আলোচিত বিআরটি প্রকল্প। এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এখন লাখ লাখ মানুষের গলার কাঁটা হয়ে আছে। নির্মাণকাজ চলাকালে গার্ডার ছিটকে পড়ে কয়েকজন মানুষও নিহত হন। এখন প্রকল্পটির কারণে একটি নদ পুরোপুরি হুমকির মুখে পড়ল। এ ব্যাপারে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
আরও পড়ুন
-
চাল, আলু, বিদ্যুৎ হবে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য, বাদ সিগারেট, স্বীকৃতি নেই পানির
-
রাশিয়ায় গ্রেপ্তার মার্কিন সেনাকে প্রেমিকার সঙ্গে মারামারি করতে দেখেছিলেন স্ত্রী
-
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড
-
বেসিক ব্যাংকে টাকা তোলার হিড়িক, একীভূত করার সিদ্ধান্তের প্রভাব
-
প্রবীণ রাজনীতিক হায়দার আকবর খান রনো শেষ শয্যায় শায়িত