Thank you for trying Sticky AMP!!

সম্পাদকীয়

কেন ডিসেম্বরেও পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত হবে না

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বই পাঠানোয় প্রায় প্রতিবছরই বিপত্তি দেখা দেয়। সময়মতো বই পৌঁছানো হয় না বলে অভিযোগ আছে। এর পেছনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তাদের গাফিলতি বেশি, না কার্যাদেশ পাওয়া মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোর গড়িমসি, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। প্রতিবারই তারা একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় এড়াতে চায়।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, এবার প্রাথমিকের ৯ কোটি ৩৮ লাখের বেশি ও মাধ্যমিক স্তরে ২১ কোটি ৩২ লাখ বই ছাপা হওয়ার কথা। জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে এনসিটিবি আগেভাগেই বই ছাপার কাজ শুরুও করেছিল। প্রাথমিক স্তরের বইগুলো ইতিমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মাধ্যমিকের, বিশেষ করে অষ্টম ও নবম শ্রেণির বই ছাপার কাজ পিছিয়ে পড়ে।

এর মধ্যে অতিশয় হতাশাজনক খবর হলো অষ্টম শ্রেণির তিনটি ও নবম শ্রেণির তিনটি বইয়ের পাণ্ডুলিপিও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। যেখানে নভেম্বরের মধ্যে বই ছাপার কাজ শেষ হওয়ার কথা, সেখানে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেও পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত না হওয়া কেবল দুর্ভাগ্যজনক নয়, অমার্জনীয়ও। এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন করে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে চালু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক আছে। সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু বছরের শুরুতে শিক্ষার্থীদের কাছে বই পৌঁছানো যাবে না কেন? বই ছাপা হলেও ১ জানুয়ারি উৎসব করে শিক্ষার্থীদের বই পৌঁছানো নিয়ে সংশয় আছে। প্রথমত, ছয়টি বইয়ের পাণ্ডুলিপি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত হওয়ার পর মুদ্রণে ও বাঁধাইয়েও সময় লাগবে।

দ্বিতীয়ত আগামী বছর ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হবে। সে ক্ষেত্রে ১ জানুয়ারি সারা দেশে উৎসব করে বই দেওয়ার পরিবেশ না-ও থাকতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত ২৬ নভেম্বর এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘উৎসবটা ১ তারিখ করব, না নির্বাচনের পর ১০-১১ তারিখ করব, এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

১ জানুয়ারি উৎসব হোক বা না হোক, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি এসেও পাঠ্যবই ছাপার কাজ শেষ হবে না কেন? বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান যথার্থই বলেছেন, ‘বই লেখার কাজটি আগেই শেষ করা উচিত ছিল। বই লেখার কাজ শেষ হলেই শিক্ষার্থীদের কাছে তা তাৎক্ষণিকভাবে পৌঁছানো যায় না। বই মুদ্রণ ও বাঁধাইয়েরও ব্যাপার আছে।’

প্রতিবছর পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে যে বিলম্ব ঘটে, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মূলত শিক্ষার্থীরাই। তড়িঘড়ি বই ছাপা হলে এর মানও খারাপ হয়। খারাপ কাগজ ও খারাপ ছাপার বই শিক্ষার্থীরা এক বছরও ব্যবহার করতে পারে না। প্রতিবছর পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে এই তুঘলকি কাণ্ড চলতে পারে না। এবার যাঁদের কারণে বইয়ের পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত করতে দেরি হলো, তঁাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। বিলম্বে হলেও কর্তৃপক্ষের চৈতন্যোদয় ঘটুক।