
ব্যবসায়ীদের নেতা হিসেবে আবদুল আউয়াল মিন্টু বেশি পরিচিত। দুই মেয়াদে ছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি। তাঁর আরেকটি পরিচয়, তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। তিনি পড়াশোনা করেছেন নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটিতে, নৌবিজ্ঞান ও পরিবহন ব্যবস্থাপনায়। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে কৃষি অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক আইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও আছে তাঁর। তিনি মাল্টিমোড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী। ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিস্থিতি, ব্যবসার রাজনীতিকরণ, নির্বাচন, ব্যাংক খাত, সংস্কার ইত্যাদি বিষয়ে আবদুল আউয়াল মিন্টু কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহমেদ।
একটা গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সাড়ে চার মাসের মতো হলো। ব্যবসা-বাণিজ্য এখন কেমন যাচ্ছে?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: সত্যি কথা বলতে কি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের জন্য যে ধরনের পরিবেশ দরকার, তা এখনো সৃষ্টি হয়নি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালোভাবে ব্যবসা করার উপযোগী নয়। পত্রিকায় দেখলাম, গতকালও (২১ ডিসেম্বর) এক ব্যবসায়ীকে মেরে ফেলা হয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ হচ্ছে। ব্যবসার প্রসারের জন্য সামাজিক পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। সামাজিক পরিবেশ যখন বলি, সেটাকে আমি সামাজিক মূলধনও বলি। সবাই মনে করে, আর্থিক মূলধন হলেই ব্যবসা হয়, কথাটি ঠিক নয়।
সামাজিক মূলধনের প্রথম দিক হলো মানুষে মানুষে একতা; সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, সেটা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হতে পারে, সামাজিক সংগঠনগুলোর মধ্যে হতে পারে। সবার মধ্যে সমঝোতা ও সহযোগিতার মনোভাব যদি না থাকে, তাহলে কোনো সমাজে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার হয় না।
দ্বিতীয় দিক হলো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। ব্যবসায়ীরা যদি অনুমান করতে না পারেন যে ভবিষ্যতে কী হতে যাচ্ছে, সরকারের মনোভাব কী, নীতি কী হতে যাচ্ছে, তাহলে বিনিয়োগ হবে না।
তৃতীয় দিক হলো আর্থিক মূলধন। এখন ব্যাংক খাতের যে অবস্থা, যে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে, তাতে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের সুযোগ কম। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনি যদি কঠোরভাবে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করেন, তাহলে ব্যাংক মানুষের প্রয়োজন অনুযায়ী টাকা দিতে পারবে না।
চতুর্থ দিক হলো মানুষের উদ্যোগ ও উদ্যম। ব্যবসার প্রসার বা বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নেই। মানুষ এখন নিজেকে নিয়েই চিন্তিত—নিজের জীবন ও ধনসম্পদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। সব মিলিয়ে ভালো ব্যবসার জন্য পরিবেশ এখন নেই, শিগগির ভালো হবে, সে আশাও করতে পারছি না।
ব্যবসা-বাণিজ্য পরিস্থিতির ভালো না থাকার পেছনে সরকারেরও যুক্তি থাকতে পারে। সরকার বলতে পারে, আওয়ামী লীগ সরকার অর্থনীতির যে পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। আপনি কী বলবেন?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: আশির দশকে যখন আমি বাংলাদেশে এসেছি, তখন থেকে দেখছি একটা চিরাচরিত নিয়ম, সেটা হলো আগের সরকারকে ব্লেইম (দায়ী) করা। আওয়ামী লীগ সরকারকে ব্লেইম করার জায়গা নেই, তা নয়। কিন্তু আপনি আগের সরকারকে যতই ব্লেইম করেন, তাতে আমার পেট ভরবে না। আপনাকে ইতিবাচক প্রভাব ফেলার মতো কাজ করতে হবে। অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে দিয়ে আপনি বলতে পারবেন না যে ‘আমি পারলাম না’। তাহলে প্রশ্ন উঠবে, সরকারের কাজ কী?
আরেকটা কথা এখানে বলতে হয়, সরকারের ভেতরে একটা ‘কোহেসিভ’ (সমন্বিত) চিন্তাধারা, ‘চেইন অব কমান্ড’ থাকতে হয়। সেটা বর্তমান সরকারের মধ্যে দেখতে পাচ্ছি না। উপদেষ্টাদের সততা নিয়ে আমার প্রশ্ন নেই। কিন্তু ব্যবসার প্রসারের জন্য একটা ‘কোহেসিভ’ চিন্তাধারা থাকা দরকার।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অনেকেই উদ্বেগের কথা বলছেন। আমরা দেখলাম, ব্যাংকেও ডাকাত দল ঢুকে গেছে। ঢাকায় একের পর এক ছিনতাই হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা কীভাবে ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলে?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: যেকোনো লোক বিনিয়োগ করলে প্রথম চিন্তা করেন, তাঁর জান ও মালের নিরাপত্তা আছে কি না, চাঁদাবাজি থেকে মুক্ত কি না। এটা না হলে কোনো সমাজে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে না।
সাড়ে চার মাসে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সরকারের ভালো পদক্ষেপ কী কী দেখেন?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: কথা তো খুব সুন্দর বলছে, উদ্যোগ দেখছি না—এটাই আমাদের সমস্যা।
আমরা দেখলাম, সরকারের তিন মাসের মাথায় ব্যবসায়ী শেখ বশিরউদ্দীনকে বাণিজ্য উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারপর কি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ বেড়েছে? সমস্যা সমাধান হচ্ছে?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: শুধু একজন ব্যবসায়ীকে নিয়োগ দেওয়া হলেই সমাধান হয়ে যায় না। যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁরা প্রতিদিন শত শত মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। প্রত্যেক লোকের দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। রাজনীতিবিদেরা তাঁদের কাছ থেকে সমস্যাগুলো জানতে ও বুঝতে চেষ্টা করেন। মানুষের সমস্যা সমাধান রাজনীতিবিদদের কাজ, এটা একজন বশির সাহেব, একজন মিন্টু সাহেবকে দিয়ে সম্ভব নয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণে বলেছেন, ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। সেই নির্বাচনে বিএনপি জয়ের ব্যাপারে জোরালোভাবে আশাবাদী। আপনাকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হলে কোন মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে আগ্রহী হবেন?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য হওয়ার শখ আমার কোনোকালেই জাগেনি। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার একটা চেষ্টা করেছিলাম। রাজনীতিতে জড়িত আছি বলতে পারেন। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে রাজনীতি, সেটা থেকে আমি দূরেই থাকি।
কৃষি খাত নিয়ে একটি প্রশ্ন করে নিই। আপনার ব্যবসার একটা বড় খাত কৃষি। আপনার কি মনে হয়, খাতটি যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে? আগে কি পেত?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষের কর্মসংস্থান কৃষিতে। তাই বলা যায়, এটিই প্রধান খাত। এখন যে বাজেট, সেটা গত সরকারের দিয়ে যাওয়া। এই সরকার সেটা সংশোধন করেনি। বাজেট সংশোধন করলে বোঝা যেত সরকার কৃষিকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। তার আগে মন্তব্য করা মুশকিল।
কৃষি ব্যাহত হলে কি পুরো অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে না? ধরেন, খাদ্য উৎপাদন কমে গেল। তখন আমদানি করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে গেল।
আবদুল আউয়াল মিন্টু: খাদ্য সরবরাহ সব সময় রাজনৈতিক দিক দিয়ে একটি সংবেদনশীল বিষয়। আপনি যদি টিসিবির ট্রাকের (ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রি) পেছনে মানুষের সারির ছবি দেখেন, তাহলে দেখবেন, এক মাস আগের তুলনায় লাইন বড় হয়েছে। এর মানে, মানুষ সংকটে আছে। জীবনমানের সংকট থেকে সমাজ অস্থিতিশীল হয়। তাই মূল খাদ্যপণ্যগুলোর সরবরাহ সব সময় ঠিক রাখতে হয়, নইলে সবাই সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়, সামাজিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। আপনি কয়েক দিন আগে একটি প্রতিবেদন দেখেছেন কি না—সেখানে বলা হয়েছে, ৭৯ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে (২০২২ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর সময়ে)। আরও ৯৮ লাখ মানুষ দরিদ্র হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। যদি খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি হয়, তাহলে বিশৃঙ্খলা অবধারিত। দরিদ্র মানুষের জন্য সহায়তা বাড়াতে হবে। আওয়ামী লীগ আমলে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোর রাজনীতিকরণ করা হয়েছিল। যারা আওয়ামী লীগ করত, তারা সহায়তা পেত। এটা উচিত নয়। যে গরিব, তার রাজনৈতিক বা ধর্মপরিচয় দেখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আপনি ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘দরবেশ’ হতে আপনার আগ্রহ নেই। কী প্রসঙ্গে, কেন বললেন?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: ‘দরবেশ’ শব্দটি ব্যঙ্গাত্মক অর্থে ব্যবহার করা হয়। সালমান এফ রহমানকে বোঝানো হয়। বিষয়টি নিয়ে একজন প্রশ্ন করেছিল, সেটার উত্তরে প্রসঙ্গটি এসেছে। আমি বলেছি, আমি সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করি না। আমাদের ‘দরবেশ’ হতে যাওয়ার কী দরকার।
সালমান এফ রহমানের যে ভূমিকা ছিল, সম্মেলনে ব্যবসায়ীদের নিয়ে যাওয়া এবং সরকারের প্রতি সমর্থন জানানো, সেটা কতটুকু গ্রহণযোগ্য? সরকারকে সমর্থন জানানোর ভূমিকায় ব্যবসায়ীদের অবতীর্ণ হওয়া ঠিক কি, আপনি কী বলবেন?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: মোটেই ঠিক নয়। এটা ব্যবসায়ীদের কাজ নয়। ব্যবসায়ী সংগঠনের কাজ হলো ব্যবসা সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সরকারের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করা। আর আমি সালমান সাহেবের বিরুদ্ধে যা বলি, যে যা বলুক, আমার আপত্তি নেই। সালমান সাহেব অন্যায় করলে তাঁর বিচার হওয়া উচিত। কিন্তু বেক্সিমকো গ্রুপের কারখানা বন্ধের উপক্রম হলে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে। এ কথা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ব্যবসায়ী অপরাধ করলে বিচার হবে, কিন্তু কারখানা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ, নতুন বিনিয়োগ তো হচ্ছে না।
ব্যবসার রাজনীতিকরণ, রাজনীতির ব্যবসায়ীকরণ—এ দুই বিষয়ে আপনার মতামত কী?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: প্রথম কথা, এ দুটোকে আপনি আলাদা করতে পারবেন না। তবে রাজনীতির অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। ভালো রাজনীতি ছাড়া কোনো দেশের ভালো অর্থনীতি হয় না। আবার অর্থনীতি ভালো, এমন দেশের রাজনীতিও খুব একটা খারাপ হয় না। আমাদের দেশের সমস্যা হলো, দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদ, চোর আমলা ও স্বার্থান্বেষী ব্যবসায়ীর অসাধু জোট তৈরি হয়েছিল। তারা নতুন ধরনের সম্পদ অর্জনকারী গোষ্ঠী তৈরি করেছিল। তারা সম্পদ দেশে রাখা নিরাপদ মনে করেনি, অর্থ পাচার করেছে।
তাহলে আপনি বলছেন, ব্যবসার রাজনীতিকরণ, রাজনীতির ব্যবসায়ীকরণে সমস্যা নয়, সমস্যা হলো দুর্বৃত্তের সঙ্গে দুর্বৃত্তের সম্পর্ক তৈরি হওয়া।
আবদুল আউয়াল মিন্টু: জি, সেটাই।
আমরা দেখছি, জুলাই-আগস্টে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, চাঁদাবাজির জন্য এসব মামলা করা হয়েছে। অভিযোগের তির আপনি যে দলের রাজনীতি করেন, সেই দলের নেতাদের বিরুদ্ধে। আপনার কাছে কি অভিযোগ আসে?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: হ্যাঁ, অনেক অভিযোগ পেয়েছি। এখন কম। তবে সেটা যে শুধু বিএনপির নেতারা করছেন, তা নয়। অনেকে এ কাজ করে বিএনপির ওপর দোষ চাপায়। বিএনপি বরং অনেক নেতাকে বহিষ্কার করেছে। আরও অনেক বহিষ্কৃত হতে পারেন।
আপনি একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন, ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকটিতে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির কথা আমরা শুনেছি। আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর কী দেখলেন? কী কী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: ৮ থেকে ১০টি ব্যাংক সমস্যায় আছে। ন্যাশনাল ব্যাংকের সমস্যাটি বহুমাত্রিক। এ ব্যাংকের বড় বড় ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে, কেনাকাটায় দুর্নীতি হয়েছে, ব্যবস্থাপনা দুর্বল। আমরা সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করেছে। আগে যে পরিমাণ টাকা তুলে নেওয়া হতো, জমা হতো তার অনেক কম। এখন তুলে নেওয়ার প্রবণতা কমেছে, জমার প্রবণতা বেড়েছে। তবে ঘাটতি রয়ে গেছে। আশা করছি, আমরা সমস্যা কাটিয়ে উঠব। ব্যাংকটিকে দুর্দশায় ফেলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দুদকের (দুর্নীতি দমন কমিশন) সঙ্গে কাজ করছি।
বিএনপি ৩১ দফার মধ্যে নানা ধরনের সংস্কারের কথা বলেছে। অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যও তাতে আছে। কোনগুলোকে আপনার গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: প্রথমে আমি বলব, জাতীয় সমন্বয় (রিকনসিলিয়েশন) কমিশন গঠন। আমি আগেই বলেছি, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সামাজিক মূলধন দরকার, সমাজের গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সহযোগিতা দরকার। বিএনপির ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশনের উদ্যোগটি ব্যবসা–বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসারে ভূমিকা রাখবে। বিএনপি দুর্নীতি প্রতিরোধে দৃশ্যমান কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ ও ন্যায়পাল নিয়োগের কথা বলেছে। এটাও ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ভূমিকা রাখবে।
বিএনপি প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ এবং নবায়নযোগ্য ও মিশ্র জ্বালানি ব্যবহারে অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাত আধুনিকায়নের কথা বলেছে। সর্বোপরি বিএনপি গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা বলেছে। এটা হলে তা বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করবে। আর সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সব সংস্কারই ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে।
মানুষ কেন আস্থা রাখবে?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: আস্থা রাখবে। কারণ, ছয় থেকে সাত বছর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রূপকল্প-২০২৩ ঘোষণা করেছিলেন। বিএনপি প্রথমে ২৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল। পরে মিত্রদলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তা ৩১ দফায় উন্নীত করেছে। এই যে রাজনৈতিক ঐকমত্য, জনগণের কাছে অঙ্গীকার, এটাই আস্থা তৈরিতে ভূমিকা রাখবে। কে ক্ষমতায় আসবে, সেটা আমার আগ্রহের বিষয় নয়। বিএনপি আন্দোলন করছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের কথা বলছে। সেই আন্দোলন এখনো চলমান। আমার ব্যক্তিগত মত, মানুষ যাকে ভোট দেবে, তাকেই আমি মেনে নেব। তবে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
আমি জানি, আপনি প্রচুর বই পড়েন। এখন কী নিয়ে পড়ছেন?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: আমি এখন এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) নিয়ে পড়ছি। এটা আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে, সেটা বোঝার চেষ্টা করছি। আরও পড়ছি ন্যানো টেকনোলজি, ক্রিপটোকারেন্সি ইত্যাদি নিয়ে।
শেষ জিজ্ঞাসা। এমন কোনো প্রশ্ন কি আছে, যা আমি করিনি, কিন্তু আপনি উত্তর দিতে চান?
আবদুল আউয়াল মিন্টু: আমি দুর্বৃত্তদের অসাধু জোটের বিষয়ে আরেকটু বলতে চাই। দেখুন, আওয়ামী লীগ আমলে দেশের জন্য সম্পদ সৃষ্টিকারীরা অসহায় ও ক্ষমতাহীন হয়ে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে অবৈধ সম্পদের মালিকেরা বনে যান ব্যাপক ক্ষমতাবান। ক্ষমতার এই মালিকানাবদল আর্থিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক, অর্থাৎ সমাজের সর্বক্ষেত্রে হয়েছে। ফলে রাজনীতিবিহীন, আইনের শাসনের পরিবর্তে আইন দ্বারা শাসিত সমাজে এমন এক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, যার মূল্য হয়তো সাধারণ মানুষকে দীর্ঘদিন দিতে হবে।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
আবদুল আউয়াল মিন্টু: আপনাকেও ধন্যবাদ।