মোবাশ্বের মোনেম
মোবাশ্বের মোনেম

বিশেষ সাক্ষাৎকার: মোবাশ্বের মোনেম

স্বাধীনতা পেলে এক বছরে একটি বিসিএস

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র পরিচালনায় নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। সরকারি চাকরিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও দ্রুত নিয়োগের দাবি এখন তরুণদের সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান। কমিশনের বর্তমান চ্যালেঞ্জ ও সংস্কার সম্ভাবনা নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন পিএসসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন গোলাম রব্বানী

প্রশ্ন

দীর্ঘদিন ধরে বিসিএসের নিয়োগ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি, পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে। এই বিলম্বের কারণ কী?

মোবাশ্বের মোনেম: আগে আমাদের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের দীর্ঘসূত্রতা। সময় কমানোর লক্ষ্যে আমরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ‘সার্কুলার সিস্টেম’ চালু করেছি। এখন থেকে পরীক্ষকেরা পিএসসিতে এসে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন। একটি উত্তরপত্র একাধিক পরীক্ষক মূল্যায়ন করবেন। প্রতিজন পরীক্ষক কেবল একটি নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দেখবেন। যেমন প্রথম পরীক্ষক শুধু প্রথম প্রশ্ন, দ্বিতীয় পরীক্ষক শুধু দ্বিতীয় প্রশ্ন। এভাবে একাধিক পরীক্ষক একসঙ্গে মূল্যায়ন করলে রিলেটিভ জাজমেন্ট নিশ্চিত হবে, ন্যায্যতাও প্রতিষ্ঠিত হবে। এতে সময় বাঁচবে, গুণগত মানও বাড়বে। এই পদ্ধতি ছাড়া এক বছরের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করা সম্ভব নয়। আমাদের লক্ষ্য হলো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে নিয়োগ পর্যন্ত বিসিএসের পুরো প্রক্রিয়া এক বছরের মধ্যে শেষ করা।

প্রশ্ন

বর্তমানে কতটি বিসিএসের কার্যক্রম চলমান?

মোবাশ্বের মোনেম: বর্তমানে ছয়টি বিসিএসের কার্যক্রম চলছে। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করেছি। ৪৫তম সাধারণ বিসিএস ও ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা চলছে। ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ৪৭তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর শুরু হবে। এ ছাড়া ৪৯তম বিশেষ বিসিএসের আবেদনপ্রক্রিয়া শেষ হয়েছে, এখন প্রশ্ন প্রণয়নের কাজ চলছে।

প্রশ্ন

আপনারা বলছেন, এক বছরে একটি বিসিএস শেষ করা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে তো ছয়টি বিসিএসের কাজ একসঙ্গে চলছে। এ অবস্থায় এক বছরে একটি বিসিএস শেষ করা কতটা বাস্তবসম্মত?

মোবাশ্বের মোনেম: আমরা মনে করি, সরকারি কর্ম কমিশন যদি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পূর্ণ স্বাধীনতা পায়, তাহলে এক বছরে একটি বিসিএস শেষ করা সম্ভব। ইতিমধ্যে আমরা একটি রোডম্যাপ করেছি। প্রতিবছরের নভেম্বরে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে এবং পরের বছরের ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে। বর্তমান যে বিসিএস–জট রয়েছে, তা কোনো সমস্যা নয়। তবে এ জন্য আমাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে।

আমরা সব সময়ই বলে আসছি, পিএসসি যেন মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরের মতো কাজ না করে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে শীর্ষ মেধাবী প্রার্থীরা সরকারি চাকরিতে যুক্ত হতে পারবেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল বৈষম্যের অবসান
প্রশ্ন

একটি বিসিএসে কত শতাংশ যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যায়?

মোবাশ্বের মোনেম: সংখ্যাটা নির্দিষ্ট নয়, কমবেশি হয়। সাধারণত একটি বিসিএসে শূন্য দশমিক ৪৫ থেকে শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রার্থীকে আমরা সুপারিশ করি। যেমন ৩৭তম বিসিএসে সুপারিশের হার ছিল শূন্য দশমিক ৫৪, ৩৮তম বিসিএসে শূন্য দশমিক ৬৪, ৪০তম বিসিএসে শূন্য দশমিক ৪৮, ৪১তম বিসিএসে শূন্য দশমিক ৬২, ৪৩তম বিসিএসে শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ ও ৪৪তম বিসিএসে শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশ।

প্রশ্ন

প্রকৌশলী ও চিকিৎসকদের অনেকেই এখন বিসিএসে তাঁদের জন্য নির্ধারিত কারিগরি পেশার ক্যাডার ছেড়ে প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র ক্যাডারের দিকে ঝুঁকছেন। সর্বশেষ পাঁচটি বিসিএসে এই তিন ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া ১ হাজার ৯৮০ জনের মধ্যে ৩৮৭ জনই প্রকৌশলী ও চিকিৎসক। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

মোবাশ্বের মোনেম: এ বিষয়ে আমাদের কমিশন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেনি। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীনভাবে পেশা বেছে নেওয়ার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যায় না। তবে বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনা হওয়া দরকার।

প্রশ্ন

বিসিএস নন-ক্যাডারে পদ বৃদ্ধি করে অধিকসংখ্যক প্রার্থীকে সুপারিশের দাবিতে চাকরিপ্রার্থীরা আন্দোলন করছেন। কমিশন কি নন-ক্যাডার থেকে বেশি প্রার্থীকে সুপারিশ করবে?

মোবাশ্বের মোনেম: আমাদের কমিশন মনে করে নন-ক্যাডার থেকে যত বেশি প্রার্থীকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া যায়, তত ভালো। এতে সময় ও খরচ দুটিই কমবে, মেধাবীরা সরকারি চাকরিতে সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি নিয়োগে দুর্নীতিও কমবে। তবে এ জন্য সরকারের আন্তমন্ত্রণালয়ে সমন্বয় খুব জরুরি। সরকার থেকে যদি সঠিকভাবে চাহিদাপত্র দেওয়া হয়, পিএসসিও নন-ক্যাডার থেকে বেশিসংখ্যক প্রার্থীকে সুপারিশ করতে পারবে।

প্রশ্ন

সম্প্রতি ছাত্র আন্দোলনের পটভূমিতে পিএসসি নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে যে সংস্কারের দাবি উঠেছে, আপনি এটিকে কীভাবে দেখছেন?

মোবাশ্বের মোনেম: দাবি ওঠার আগেই নতুন কমিশন প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়গুলো শনাক্ত করে পদক্ষেপ নিয়েছে। আমি মনে করি, দাবিগুলো যৌক্তিক। তবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই যে সুপারিশ দিয়েছে, তা হতাশাজনক। ওই কমিশনের প্রতিবেদনে পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিল। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তারা যে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে, সেগুলো আমরা আগেই বাস্তবায়ন শুরু করেছি। উদাহরণস্বরূপ, এক বছরের মধ্যে বিসিএস শেষ করার ক্যালেন্ডার নির্ধারণ, আবেদন ফি ৭০০ থেকে ২০০ টাকায় নামানো (বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তদের জন্য মাত্র ৫০ টাকা), প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সরকারি বিজি প্রেসের পরিবর্তে নিজস্ব মুদ্রণব্যবস্থা চালু করা। গত এক বছরে কোনো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। এগুলো প্রমাণ করে, সংস্কারের ব্যাপারে পিএসসি আন্তরিক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় যেকোনো সংস্কার কার্যক্রম আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি থেকে নিয়োগ পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট ক্যালেন্ডারের প্রস্তাব দিয়েছে। এটি বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব?

দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আমরা একটি রোডম্যাপ প্রণয়নের কাজ শুরু করেছি। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আসার আগেই আমরা এক বছরের ক্যালেন্ডার তৈরি করেছি এবং সে অনুযায়ী কাজ করছি। অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের আগেই ফলাফল প্রকাশ করেছি। তবে এটিকে স্থায়ী করতে হলে পিএসসিকে প্রকৃত স্বাধীনতা দিতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী আমরা স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও বাস্তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরের মতো কাজ করি, যা মোটেই কাম্য নয়। বিধি সংশোধনের জটিলতার কারণে তাদের অনুমোদন ছাড়া দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তাই রুলস অব বিজনেস সংশোধন করে পিএসসির প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। নিয়োগবিধি সংশোধন বা আর্থিক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও আমাদের মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের মুখাপেক্ষী হতে হয়।

প্রশ্ন

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, দেশে প্রায় ২৭ লাখ বেকার রয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাকরির নিয়োগপ্রক্রিয়া কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখছে বলে আপনি মনে করেন?

মোবাশ্বের মোনেম: শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা সত্যিই উদ্বেগজনক। সরকারি চাকরির সুযোগ সীমিত, শুধু এটির মাধ্যমে বেকার সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। সরকারকে উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা করতে হবে এবং জাতীয় পরিকল্পনায় এটি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বেসরকারি খাতকেও সমৃদ্ধ করতে হবে। পিএসসির কাজ হলো যোগ্য প্রার্থীদের সরকারি সেবায় নিয়ে আসা। তবে জাতীয়ভাবে আমাদের দৃষ্টি রাখতে হবে, কীভাবে তরুণেরা উদ্যোক্তা হয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারেন।

প্রশ্ন

দেশে দক্ষ মানবসম্পদের ঘাটতি তৈরি হওয়ার পেছনে মূল কাঠামোগত কারণ কী—শিক্ষাব্যবস্থা, প্রশিক্ষণের অভাব, নাকি রাষ্ট্রীয় নীতি-পরিকল্পনার দুর্বলতা?

মোবাশ্বের মোনেম: আমি বলব প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুর্বলতা আছে। শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। যুগোপযোগী কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে, প্রায়োগিক বিষয়গুলোর প্রতি বেশি জোর দিতে হবে। শিক্ষার প্রতিটি স্তরের মধ্যে সাযুজ্য আনা জরুরি। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি, রিফ্রেশার প্রশিক্ষণও প্রয়োজন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ নীতিমালা অনুসরণ করা দরকার। জাতীয় প্রশিক্ষণ নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড, তাই যুগোপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়ন ছাড়া বিকল্প নেই। সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো, সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে মানুষ সচেতন হলেও এ বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

প্রশ্ন

পিএসসি নিয়োগপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন রয়েছে। স্বচ্ছ ও জবাবদিহি বাড়াতে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন?

মোবাশ্বের মোনেম: স্বচ্ছতা আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো, খাতা মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি, আবেদন ফি কমানো—সবই প্রার্থীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য। আমরা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে প্রক্রিয়াটি আরও স্বচ্ছ করতে চাই। অটোমেশনের দিকেও যাচ্ছি। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কমিশন বদ্ধপরিকর।

প্রশ্ন

নিয়োগপ্রক্রিয়ায় দুর্নীতি বা রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ এড়াতে কী ধরনের সংস্কার জরুরি বলে মনে করেন?

মোবাশ্বের মোনেম: সবচেয়ে জরুরি হলো প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন। যতক্ষণ না পিএসসি নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারবে, ততক্ষণ রাজনৈতিক প্রভাব এড়ানো কঠিন হবে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলেই সৎ ও যোগ্য প্রার্থীরা সুযোগ পাবেন।

প্রশ্ন

অন্তর্বর্তী সরকারের পর নতুন প্রজন্ম রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশ নিতে চায়। পিএসসি কীভাবে এই প্রজন্মের আস্থা পুনরুদ্ধার করবে?

মোবাশ্বের মোনেম: তরুণ প্রজন্ম ন্যায্যতা চায়। তারা কোনো বৈষম্য ও পক্ষপাতিত্ব দেখতে চায় না সরকারি নিয়োগপ্রক্রিয়ায়। এ জন্য আমরা দ্রুত, স্বচ্ছ ও প্রযুক্তিনির্ভর প্রক্রিয়া চালু করেছি। তরুণদের আস্থা ফিরিয়ে আনা ছাড়া পিএসসি সফল হতে পারবে না। তরুণদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মৌখিক পরীক্ষার নম্বর ২০০ থেকে কমিয়ে ১০০ নম্বর করা হয়েছে এবং এই মৌখিক পরীক্ষার নম্বর আরও কমিয়ে ৫০ নম্বর করার বিষয়টি কমিশনের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। এর পাশাপাশি সিভিল সার্ভিসের কম্পিট্যান্সির কথা মাথায় রেখে সাইকোমেট্রিক অ্যানালাইসিসসহ অ্যাসেসমেন্ট সেন্টার স্থাপন করার জন্য কমিশন কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। এই অ্যাসেসমেন্ট সেন্টার স্থাপন করা গেলে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের কাজটি আরও সহজতর হবে এবং এতে নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ হয়ে উঠবে। নিয়োগপ্রক্রিয়ার সব স্তরে পক্ষপাতিত্ব দূর করার জন্য নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছি।

প্রশ্ন

আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোয় কী ধরনের মানবসম্পদ প্রয়োজন হবে বলে আপনি মনে করেন?

আগামী দশকে প্রযুক্তিনির্ভর, পরিবেশসচেতন, সৎ, দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসনমুখী মানবসম্পদই হবে মূল শক্তি। তবে এটিও মনে রাখতে হবে, যাঁরা প্রযুক্তিজ্ঞানের সঙ্গে তাল মেলাতে পারবেন না, তাঁরা চাকরির প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বেন। তাই এখন থেকেই দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে।

প্রশ্ন

সংবিধান অনুযায়ী, সরকারি কর্ম কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখাপেক্ষী থাকতে হয়, এটি কি পিএসসির সাংবিধানিক মর্যাদাকে খর্ব করছে না?

মোবাশ্বের মোনেম: এটি বলার অপেক্ষা রাখে না, আমরা স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হয়েও বিধি সংশোধন বা আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। ক্ষুদ্র কোনো বিধি সংশোধনের জন্যও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। আর্থিক সিদ্ধান্তের জন্য বারবার অর্থ বিভাগের অনুমোদন চাইতে হয়। এতে আমাদের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, কার্যক্রমেও প্রভাব পড়ে।

প্রশ্ন

পিএসসি কি কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের কাছে দাবি তুলেছে যে কমিশনের সাংবিধানিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে?

মোবাশ্বের মোনেম: অবশ্যই। আমরা সব সময়ই বলে আসছি, পিএসসি যেন মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরের মতো কাজ না করে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে শীর্ষ মেধাবী প্রার্থীরা সরকারি চাকরিতে যুক্ত হতে পারবেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল বৈষম্যের অবসান। সেই দাবি পূরণে পিএসসিকে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করতে দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

প্রশ্ন

আপনারা বলছেন, সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন হলেও বাস্তবে মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভরশীল পিএসসি। এই সীমাবদ্ধতার কথা কি প্রধান উপদেষ্টাকে ব্যক্তিগতভাবে জানানো হয়েছে?

মোবাশ্বের মোনেম: মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে ব্যক্তিগতভাবে জানানো হয়নি।

প্রশ্ন

আপনাকে ধন্যবাদ।

মোবাশ্বের মোনেম: আপনাকেও ধন্যবাদ।