মুনতাসির মারাই
মুনতাসির মারাই

বিশেষ সাক্ষাৎকার

সাংবাদিকতা ক্ষমতাকেন্দ্রের মুখপাত্র নয়, জনগণের কণ্ঠস্বর

মুনতাসির মারাই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার ম্যানেজার অব মিডিয়া ইনিশিয়েটিভস। ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত এই সাংবাদিক মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করেছেন। খুব কাছ থেকে দেখেছেন আরব বসন্তের পরিবর্তনগুলো। কিছুদিন আগে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনজুরুল ইসলামগালিব আশরাফ

প্রশ্ন

গত দুই দশকে বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিবর্তন হয়েছে। প্রিন্ট পত্রিকা এবং টেলিভিশনের চেয়ে বেশি মনোযোগ এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দিকে। অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইউটিউব এমনকি টিকটকও তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই পরিবর্তন সাংবাদিকতার মান এবং গণমাধ্যমের ওপর জনসাধারণের আস্থাকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে?

মুনতাসির মারাই: আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এ প্রশ্নটির উত্তর দিতে চাই। সব বড় বড় সংবাদমাধ্যমের মতো আল–জাজিরাকেও এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আল–জাজিরা আমাদের প্রজন্ম বা আগের প্রজন্মের কাছে একেবারে ভিন্ন কিছু উপস্থাপন করেছিল। একটি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল হিসেবে এটি সব সীমা ভেঙে কর্তৃপক্ষ, একনায়ক ও শাসকদের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল এবং প্রথমবারের মতো বিরোধী কণ্ঠস্বরকে সামনে এনেছিল। আরব বিশ্বে আমরা প্রথমবার নিজেদের দেশে বিরোধীদের কথা শুনতে পেয়েছিলাম, যা স্থানীয় কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের অনুমতি ছিল না। আল–জাজিরার মাধ্যমে তারা সে সুযোগ পেয়েছিল।

কিন্তু এখন ডিজিটাল যুগে এসে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা (আল–জাজিরা) জানি না ভবিষ্যতে নিজেদের অবস্থান কীভাবে নির্ধারণ করব। এটা কেন? কারণ, ডিজিটাল পরিসর অত্যন্ত খণ্ডিত। আগে পুরো আরব অঞ্চলের দর্শকেরা একসঙ্গে প্রাইম টাইমে একটি টিভি চ্যানেলে খবর শুনতে বসতেন। উদাহরণস্বরূপ, তখন আমরা ফিলিস্তিনকে প্রধান শিরোনাম করতে পারতাম, আর সবাই একসঙ্গে একই—অনুষ্ঠান দেখতেন।

কিন্তু এখন দর্শক/পাঠক খণ্ডিত। প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা বেড়েছে আর মানুষ স্থানীয় প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকছেন। স্থানীয় রেডিও, অনলাইন রেডিও, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, পডকাস্ট—সবই প্রসারিত হচ্ছে। ফলে আমরা কীভাবে এই বিচ্ছিন্ন দর্শকদের সঙ্গে কথা বলব, কীভাবে অগ্রাধিকার ঠিক করব, কীভাবে ভবিষ্যতে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করব—সেটিই বড় চ্যালেঞ্জ।

তরুণ প্রজন্মের যাঁরা, তাঁরা এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে, এক প্ল্যাটফর্ম থেকে আরেক প্ল্যাটফর্মে লাফিয়ে বেড়ায়—আজ ফেসবুকে, কাল টিকটকে। ক্রমাগত ডিজিটাল অভিবাসন ঘটছে। আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে এই দর্শকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলব। প্রতিযোগিতাও বেড়েছে। কারণ, এখন আর স্যাটেলাইট টিভি চালু করতে লাখ লাখ টাকা লাগে না। ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে কেউ ছাদে বসে নিজের ডিজিটাল নিউজ প্ল্যাটফর্ম চালু করতে পারেন।

কিন্তু প্রশ্ন হলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যা হচ্ছে, সেটির সবকিছুকেই কি সাংবাদিকতা বলা যায়? এখন তো দর্শকদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে অনেক বড় মূল্যবোধ বিসর্জন দিতে হচ্ছে; সংক্ষিপ্ত এবং দ্রুত করার চেষ্টা বা ঘটনার গভীরে যাওয়ার সময় নেই। মূল প্রশ্ন, ‘সাংবাদিকতা কি জনস্বার্থে কাজ করছে?’ অনেকেই সেটি বিবেচনা করছেন না। ফলে অনেক সময়েই কেউ কেউ ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে। সাংবাদিক না হয়ে তাঁরা ইনফ্লুয়েন্সার হয়ে যাচ্ছেন।

প্রশ্ন

তার মানে শুধু দ্রুত সংবাদ প্রকাশ করাই মূল বিষয় নয়; বরং মানুষ সংবাদমাধ্যমের ওপর কতটা বিশ্বাস করছে, সেটিই কি গুরুত্বপূর্ণ?

মুনতাসির মারাই: সোশ্যাল মিডিয়া ও পুরো ডিজিটাল পরিসরে এখন একটি বড় সমস্যা তৈরি হয়েছে। সাংবাদিকদের বিশ্বাসযোগ্যতা বিশ্বব্যাপী অনেকটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। এর পেছনে নানা কারণ আছে। কিছু কারণ সাংবাদিকদের নিজেদের বা সংবাদমাধ্যমগুলোরও। কারণ, দীর্ঘ সময় ধরে তারা সত্যকে পুরোপুরি প্রকাশ করেনি।

উদাহরণস্বরূপ গাজা যুদ্ধের দিকে তাকান। গণহত্যায় কারা জড়িত? ভুল তথ্য ছড়ানোর সঙ্গে কারা যুক্ত? এটা শুধু ইসরায়েলি দখলদারদের কাজ নয়; বরং বড় বড় সংবাদমাধ্যমও ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে বা পক্ষপাতদুষ্টভাবে তথ্য দিচ্ছে। কারণ, তারা শুধু এক পক্ষের বয়ান প্রচার করছে, অন্য পক্ষের বয়ান উপেক্ষা করছে; কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে মানুষ এখন অনেক কিছু জানতে পারছেন। ফলে অনেক সাংবাদিক এক্সপোজ হয়ে পড়েছেন। আমরা সাংবাদিকেরা ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোকে নজরদারি করি, প্রশ্ন করি, দুর্নীতি, অপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো প্রকাশ করি, তেমনি মানুষও এখন আমাদের নজরে রাখছে।

প্রশ্ন

পশ্চিমা মূলধারার সংবাদমাধ্যমের বিপরীতে আল–জাজিরা বা মিডল ইস্ট আইয়ের মতো সংবাদমাধ্যমগুলো বিকল্প বয়ান তৈরির চেষ্টা করছে; কিন্তু এ ধরনের সংবাদমাধ্যমগুলো কি আন্তর্জাতিক জনমত বা নীতিকে প্রভাবিত করতে পারছে?

মুনতাসির মারাই: আমি নিশ্চিত নই যে আন্তর্জাতিক জনমত বা নীতিনির্ধারকদের মতামত গঠনে আমরা কতটা ভূমিকা রাখতে পেরেছি। তবে আমি মনে করি, কিছুটা হলেও আমরা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি।

আপনি যদি বড় সংবাদমাধ্যমগুলোর দিকে তাকান, বিশেষ করে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার সংবাদমাধ্যমের দিকে—তারা শত বছরের বেশি সময় ধরে সংবাদপরিসরকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করছে। এখন তাদের সহায়তা করছে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদম। এসব ক্ষেত্রে আমরা সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হচ্ছি। তবু এসব নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য, মিডিয়া হেজিমনি বা ডিজিটাল হেজিমনির ভেতর দিয়েই আমরা অগ্রসর হচ্ছি। পশ্চিমা দেশগুলোর দর্শকদের মধ্যে আমরা প্রবলভাবেই প্রবেশ করতে পেরেছি। তাঁরা ফিলিস্তিন, মধ্যপ্রাচ্য বা আরব বসন্ত সম্পর্কে মূলধারার পশ্চিমা গণমাধ্যমের ওপর ভরসা করতে পারছেন না। আমি মনে করি, আল–জাজিরা এখানে বড় ভূমিকা রেখেছে।

আমার মনে হয় অনেক পশ্চিমা মূলধারার সংবাদমাধ্যম তাদের পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। ইরাক ও আফগানিস্তান যুদ্ধ এবং আরব বসন্তের সময় এটি স্পষ্ট বোঝা গেছে। অন্যদিকে আমাদের এজেন্ডা হলো জনগণের এজেন্ডা। এর ফলে আমি আশা করি, মানবাধিকার বা মানুষের জীবন রক্ষার মতো ইস্যুতে আমরা জনমতকে প্রভাবিত করতে পারব।

প্রশ্ন

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আসি। গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত?

মুনতাসির মারাই: আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর সাংবাদিকদের আমি পরামর্শ দেব, তাঁরা যখন বাংলাদেশ বা ফিলিস্তিনের মতো কোনো দেশে আসেন, তখন তাঁরা যেন ‘প্যারাস্যুট জার্নালিজম’ না করেন। কারণ, তাঁরা সাধারণত নির্দিষ্ট সেই দেশের রাজনীতি সম্পর্কে গভীর ধারণা রাখেন না, তেমনি সংস্কৃতিও খুব ভালো বোঝেন না। অবশ্যই তাঁদের যেকোনো দেশে যাওয়ার এবং রিপোর্ট করারও অধিকার আছে; কিন্তু জরুরি হলো স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতা নেওয়া, যাতে হোটেলের ভেতর থেকে বসে নয়; বরং গভীরভাবে বিষয়গুলো বুঝে রিপোর্ট করতে পারেন।

প্রশ্ন

বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানের পর বেশ কিছু মূলধারার ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ, এমনকি ভুয়া খবর প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়টিকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

মুনতাসির মারাই: ভারতীয় সংবাদমাধ্যম কীভাবে বাংলাদেশের গণ–অভ্যুত্থানকে উপস্থাপন করেছে, সে সম্পর্কে আমার খুব বেশি ধারণা নেই। প্রতিবেশী দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তন নিয়ে প্রতিটি দেশেরই কোনো না কোনো অবস্থান থাকে। তারা হয়তো তাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার জন্য এমনটা করেছে। একটি বিষয় মনে রাখবেন, যদি ভালো সাংবাদিকতা থাকে, তাহলে অনেক প্রোপাগান্ডা ভেঙে দেওয়া সম্ভব। তবে এটিও ঠিক, সবকিছুর বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় না। কারণ, সোশ্যাল মিডিয়ার ‘তথ্যবন্যা’র বিরুদ্ধে লড়াই করা আমাদের অনেকেরই সামর্থ্যের বাইরে।

অনেক পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমে ফিলিস্তিন নিয়েও অনেক নেতিবাচক বা ভুয়া খবর প্রকাশ করা হয়েছে; ফিলিস্তিনি বয়ানকে দুর্বল বা অবমূল্যায়ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি যেসব মানুষ নিহত হয়েছেন, তাঁদেরও মানবিক মর্যাদা নষ্ট করার চেষ্টা হয়েছে। এগুলোর অংশ হিসেবে সাংবাদিকদের ওপর ক্রমাগত আক্রমণ করা হয়েছে।

গত দুই বছরে ২০০ জনের বেশি, প্রায় ২৫০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এরপরও আমরা দর্শক–শ্রোতা–পাঠকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। আমরা ফিলিস্তিনিদের ভিকটিম হিসেবে নয়, মানবিক মানুষ হিসেবে তুলে ধরতে চাই। আমরা দেখাতে চাই, সেখানে একটি গণহত্যা চলছে; কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সেই গণহত্যার স্বীকৃতি পাওয়া যাচ্ছে না, গণহত্যা ঠেকানোর জন্য যথেষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

প্রশ্ন

রাজনৈতিকভাবে অস্থির, সংঘাতপূর্ণ অঞ্চল কিংবা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা সব সময় হুমকির মুখে থাকে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর সাংবাদিকেরা তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি সুরক্ষা পান; কিন্তু স্থানীয় সাংবাদিকদের অনেক বেশি ঝুঁকির মধ্যে কাজ করতে হয়। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

মুনতাসির মারাই: এ ক্ষেত্রেও আমি ফিলিস্তিনের উদাহরণ দিতে চাই। গাজায় কর্মরত ফিলিস্তিনি সাংবাদিকেরা নিজেদের পরিত্যক্ত মনে করেছেন। তাঁরা মনে করেছেন যে তাঁরা একা; তাঁরা মনে করেছেন শুধু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নয়, তাঁদের সহকর্মীদের কাছ থেকেও তারা বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছেন।

কয়েক দিন আগে ইসরায়েলি হামলায় নিহত আমাদের সহকর্মী আনাস শরিফ সম্পর্কে বিবিসি বা নিউইয়র্ক টাইমস কী বলেছিল? তারা যখন আনাসের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করল, তখন বলল যে তাঁকে ইসরায়েলি বাহিনী টার্গেট করেছে। কারণ সে হামাসের সদস্য। এর মানে কী? এটা তো তাঁর হত্যাকে ন্যায্যতা দেওয়ারই শামিল। অনেক পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম এভাবেই ভুল তথ্য দিচ্ছে। তারা ইসরায়েলি বয়ান তুলে ধরেছে। সাংবাদিক হিসেবে আমরা তো জানি এগুলো বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা। ফলে আমাদের সহকর্মীরা দুবার নিহত হচ্ছেন—একবার ইসরায়েলি দখলদারদের হাতে, আরেকবার নিজেদের সহকর্মীদের দ্বারা।

গাজায় ইসরায়েলি হামলার শুরুর দিকে আমরা আমাদের সহকর্মীদের জন্য এমনকি একটি হেলমেট কিংবা সুরক্ষা ভেস্টও পাঠাতে পারিনি। ইসরায়েল আমাদের সহকর্মীদের কাছে সুরক্ষাসামগ্রী পৌঁছাতে দেয়নি। গাজার পরিস্থিতি এমন যে সেখানে শুধু সুরক্ষা দেওয়াই যথেষ্ট নয়, হত্যাকারীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

সাংবাদিকদের সুরক্ষায় অনেক কিছু করার আছে। সাংবাদিকদের টার্গেট করা হলে সবচেয়ে আগে সাংবাদিকদেরই এগিয়ে এসে সহকর্মীদের রক্ষা করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, এসব ক্ষেত্রে যথেষ্ট সংহতি নেই। আমি সব সময় মনে করি, সাংবাদিকেরা সবাই একই সম্প্রদায়ের, হোক তিনি নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, বিবিসি বা আল–জাজিরার।

প্রশ্ন

আল–জাজিরার মতো একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাজ করার ফলে নিশ্চয়ই এমন কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা আপনার সাংবাদিকতার দৃষ্টিভঙ্গিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। এ রকম একটি অভিজ্ঞতা কি আমাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন?

মুনতাসির মারাই: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংবাদমাধ্যম হিসেবে আল–জাজিরার একটি বৈশ্বিক অবস্থান তৈরি হয়েছে। এরপরও সাংবাদমাধ্যম হিসেবে আমরা তুলনামূলকভাবে নতুন। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকতা অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তারা এরই মধ্যে সাংবাদিকতার একটি ধারা তৈরি করেছে। স্পষ্টতই এই ধারা পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রভাবিত।

কিন্তু আমি মনে করি, সাংবাদিকতার ধারণাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছি। কারণ, পৃথিবীর অনেক সংবাদমাধ্যম কিছু ভালো কাজ করলেও একই সময়ে তারা জনগণের স্বার্থ রক্ষা না করে ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোর স্বার্থ রক্ষা করছে; সেটি হোক শাসকগোষ্ঠী, সরকার, ব্যবসায়ী, সেলিব্রিটি বা অন্য কেউ।

সাংবাদিকতা ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোর মুখপাত্র নয়, জনগণের কণ্ঠস্বর। আমি যখন সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলি, তাঁরা বলেন আল–জাজিরা তাঁদের কণ্ঠের কাছাকাছি ছিল। মূলধারার পশ্চিমা গণমাধ্যমের চেয়ে অনেক বেশি সৎ ছিল। এ কথা শুনে আমি গর্ববোধ করি।

আল–জাজিরা বাংলাদেশের গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে দারুণ কভারেজ দিয়েছে। আল–জাজিরা চেষ্টা করছে গ্লোবাল সাউথের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে। আমরা চাই বৈচিত্র্য তৈরি হোক, একে অপরের সঙ্গে কথা বলা বা যোগাযোগ তৈরি হোক। একটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আমাদের সহকর্মীদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে চাই। গ্লোবাল সাউথসহ সারা বিশ্বের সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিকতার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করতে চাই। আমরা চাই সাংবাদিকতা সব সময় জনগণের স্বার্থে কাজ করবে; শক্তিমানের নয়, বরং অবহেলিতদের কণ্ঠস্বর হবে।

প্রশ্ন

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

মুনতাসির মারাই: আপনাকেও ধন্যবাদ।