
ইসাবেল এর্গেরা একজন স্প্যানিশ শিল্পী ও পরিচালক। ২০২৩ সালে তিনি রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ‘সুলতানার স্বপ্ন’ অবলম্বনে স্প্যানিশ ভাষায় নির্মাণ করেন অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র এল সুয়েনো দে লা সুলতানা। ইসাবেল এর্গেরা সম্প্রতি বাংলাদেশে এসেছিলেন। এটা ছিল তাঁর প্রথম বাংলাদেশ সফর। গত ১৩ ডিসেম্বর ঢাকায় তাঁর সঙ্গে সুলতানার স্বপ্ন, রোকেয়ার জীবনদর্শন, পশ্চিমা নারীবাদ ও সমসাময়িক বিষয়ে কথা বলেছে প্রথম আলো। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক নাজনীন আখতার
প্রথম আলো: নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনকে আপনি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বৈশ্বিক দর্শকের সামনে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশি হিসেবে এটা আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি। বাংলাদেশে অনেক নারী রোকেয়ার লেখা, সাহস ও সমতার দর্শন থেকে অনুপ্রেরণা পান। রোকেয়ার কোন দিকটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে?
ইসাবেল এর্গেরা: ইংরেজি ভাষায় অনূদিত ‘সুলতানার স্বপ্ন’ গল্পটি পড়তে গিয়ে দেখলাম, এটি ১৯০৫ সালে লেখা। রোকেয়া ১০০ বছর আগে নারী–পুরুষের প্রচলিত ভূমিকার বাইরে উল্টো ভূমিকার (রিভার্স রোল) গল্প কল্পনা করেছিলেন। গল্পে নারীরা কাজ করেন বাইরে, পুরুষেরা ঘরের কাজ সামলান। আজকের দিনে বিষয়টি হয়তো সহজ মনে হতে পারে, কিন্তু সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি ছিল ভীষণ বিপ্লবী। এক নারী, যিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাননি, এমন কল্পনা করতে পারতেন—এটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে। আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয়েছে। ওই সময়ে আমার নানির কথা মনে পড়ে।
১৯০০ সালের দিকে তাঁর জন্ম। তিনি রোকেয়ার চেয়ে বয়সে কিছুটা ছোট হলেও সমসাময়িক বলা যায়। নানির জীবনে অনেক স্বপ্ন পূরণ হয়নি, অনেক সুযোগ তাঁর হাতছাড়া হয়েছে; কিন্তু তিনি কখনো ভেঙে পড়েননি। আমার নানির জীবন ও রোকেয়ার জীবনের বেশ কিছু দিকে আমি মিল খুঁজে পেয়েছি। আমি যৌথ পরিবারে নানির কাছে বড় হয়েছি। ফলে রোকেয়ার লেখার সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবে সংযোগ বোধ করেছি। আবেগপ্রবণ হয়েছি। আমি ভাবলাম, ১০০ বছর পেরিয়ে গেছে। আমরা নারীরা এখন কোথায় দাঁড়িয়ে আছি? আজ আমাদের অধিকার, আমাদের ক্ষমতায়নের অবস্থা কী? আইনিভাবে অনেক অগ্রগতি হয়েছে, অনেক আইন হয়েছে; কিন্তু এখনো প্রতিদিন নারীর প্রতি অসংখ্য সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
আপনার নানির সঙ্গে রোকেয়ার ঠিক কোথায় মিল পেয়েছেন?
ইসাবেল এর্গেরা: আমার নানি ফার্মেসিতে পড়তে চেয়েছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন ফার্মাসিস্ট। নানি ফার্মেসি পড়ার সুযোগও পেয়েছিলেন; কিন্তু পড়তে পারেননি। ১৯২০ দশকে নানির তরুণী সময়ে পশ্চিমা বিশ্বে তখন এমন একটি সময় চলছে, যখন নারীদের জন্য অনেক আশা ছিল, অনেক ক্ষমতায়নের সুযোগ ছিল; কিন্তু হঠাৎ পারিবারিক পরিস্থিতির কারণে ১৯৩৬ সালের যুদ্ধের সময় নানিকে দুই সন্তান, তাঁর মা ও বোনদের দায়িত্ব নিতে হয়। সেই সময় থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন ভীষণ শক্ত, দৃঢ় একজন নারী। নানি পরে শিক্ষকতা করেন এবং দীর্ঘদিন পারিবারিক ব্যবসার হিসাবরক্ষক হিসেবে কাজ করেন। তিনি ছিলেন পুরোপুরি একজন কর্মজীবী নারী। আমার মা–ও ছিলেন কর্মজীবী নারী। আমার নানি আর মা সব সময় বলতেন, নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে।
আমার নানির চেয়ে রোকেয়ার পরিস্থিতি আলাদা হলেও কোথাও একটা মিল ছিল। রোকেয়ার মধ্যেও সেই দৃঢ়তা আছে, যা আমার নানির মধ্যে ছিল। পরিস্থিতি আলাদা হলেও তাঁদের শক্ত হয়ে ওঠার অভিজ্ঞতা ছিল একরকম। নারীবাদ ও ধর্মবিশ্বাস যে পরস্পরবিরোধী নয়, সেই মিলটাও আমি পাই রোকেয়া ও আমার নানির মধ্যে। তাঁরা দুজনই ছিলেন একই সঙ্গে ধর্মবিশ্বাসী ও নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। এই মিল আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছে।
‘সুলতানার স্বপ্ন’ নিয়ে চলচ্চিত্র বানানোর ভাবনা যেভাবে এল, সেটি যদি একটু বলতেন!
ইসাবেল এর্গেরা: ২০১২ সালের দিকে হবে। আমি ভারতের নয়াদিল্লিতে ছিলাম। কয়েক মাস ভারতে কাটিয়ে তখন স্পেনে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। একদিন বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করতে করতে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। আশ্রয়ের জন্য আমি একটি শিল্প গ্যালারিতে ঢুকি। গ্যালারিটি ছিল গনড্ শিল্পকলা (আদিবাসীদের) নিয়ে। গ্যালারিতে ঘোরার সময় হঠাৎ চোখে পড়ে টেবিলে রাখা একটি বইয়ের দিকে। দূর থেকে ভালো বুঝতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল যেন বইটির প্রচ্ছদে গনড্ শিল্পশৈলীতে আঁকা একটি নারীর ছবি, মহাকাশযানের মতো কিছু চালাচ্ছেন। কাছে গিয়ে পড়ি—সুলতানা’স ড্রিম, রোকেয়া হোসেন, ১৯০৫। সঙ্গে লেখা ছিল ‘এ ফেমিনিস্ট ইউটোপিয়া’ (আদর্শ ও ন্যায়ভিত্তিক কল্পিত সমাজ)। আমি ভাবলাম, ‘ওয়াও, এটা তো অসাধারণ!’ ১৯০৫ সালের লেখায় লেডিল্যান্ডের (নারীস্থান) কথা ভাবা হচ্ছে।
কী দারুণ ভাবনা! এরপর রোকেয়াকে নিয়ে পড়লাম। আমি জানলাম, রোকেয়া রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাননি। ভাইয়ের কাছে পড়াশোনা শিখেছেন। কী অসাধারণ জীবনকাহিনি! আমি গ্যালারি থেকে বের হতে পারছিলাম না। আমার তাৎক্ষণিকভাবে মনে হচ্ছিল, এই গল্প নিয়ে কাজ করা দরকার। কর্মশালা করা দরকার। বিভিন্ন জায়গায় মানুষের কাছে এই গল্পের তাৎপর্য পৌঁছে দেওয়া দরকার। সেই মুহূর্ত থেকে সুলতানার স্বপ্ন আমার মাথা থেকে আর বের হয়নি। গ্যালারি থেকে বের হওয়ার আগে আমি বইটি কিনতে চাই। আমাকে বলা হয়, এটা তাদের শেষ কপি, বিক্রি করা যাবে না। তখন আমি বইটির ছবি তুলে রাখি। স্পেনে ফিরে অনলাইনে বইটি অর্ডার করি।
বইটি কি ভারত থেকে নাকি বাংলাদেশ থেকে কিনেছিলেন?
ইসাবেল এর্গেরা: ভারত থেকে কিনেছিলাম। ভারতের তারা প্রকাশনের বই। অ্যামাজনে অর্ডার করছিলাম সম্ভবত। এরপর চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য ক্রাউডফান্ডিং (গণতহবিল) করি। ভারতে আসি, কর্মশালার আয়োজন করি।
এ অঞ্চলে অগ্রদূত হওয়া সত্ত্বেও রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন পশ্চিমা নারীবাদী আলোচনায় তেমনভাবে উপস্থিত নন। পশ্চিমা নারীবাদ কি তাঁর অবদানকে উপেক্ষা করেছে?
ইসাবেল এর্গেরা: এর কারণ হচ্ছে, পশ্চিমা নারীবাদ মূলত পশ্চিমা চিন্তাবিদ, ব্যক্তিত্ব ও তথ্যকেন্দ্রিক। আরেকটি কারণ হলো, রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের কাজ দীর্ঘদিন পশ্চিমে তেমনভাবে পরিচিত ছিল না বা প্রচারিত হয়নি। আমি নিজে যখন ২০১২ সালে রোকেয়ার কাজ সম্পর্কে জানতে শুরু করি, তখন ইন্টারনেটে অনেক খোঁজাখুঁজি করে মতিচূর-এর অনুবাদ, ইংরেজিতে সুলতানা’স ড্রিম ও আরও দু-একটি লেখা পেয়েছিলাম; কিন্তু এর বাইরে খুব বেশি কিছু পাওয়া যায়নি।
১২ বছর পর এখন দেখছি, রোকেয়া সম্পর্কে অনেক তথ্যই সহজলভ্য। ইন্টারনেটের বিস্তার, নতুন গবেষণা, অনুবাদের কারণে সম্ভবত। এখন রোকেয়া পশ্চিমা নারীবাদী আলোচনাতে কিছুটা হলেও উপস্থিত। আমার চলচ্চিত্র নির্মাণের আগে ইতালিতে রোকেয়ার লেখার অনুবাদ হয়েছিল। স্পেনে তাঁর লেখা অনুবাদ হয় সম্ভবত ২০১১–১২ সালে। প্রথমে এটি নারীদের বিজ্ঞান কল্পকাহিনির একটি সংকলনের অংশ হিসেবে প্রকাশিত হয়, পরে আলাদাভাবে তাঁর লেখা হিসেবেও প্রকাশিত হয়। জাপান, মধ্যপ্রাচ্য, লাতিন আমেরিকা, মিসরে অনেক বড় মাপের নারীবাদী ছিলেন, যাঁদের নাম সেভাবে কখনো আলোচনায় আসেনি।
পশ্চিমে রোকেয়াকে আরও বেশি স্বীকৃতি দিতে আমরা কি যথেষ্ট করছি? বহু ভাষায় অনুবাদ না হওয়াটাই কি মূল বাধা?
ইসাবেল এর্গেরা: সম্ভবত তাই। আমি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই। আমি চলচ্চিত্র বানাই। তাই নিশ্চিতভাবে বলতে পারি না। তবে আমার মনে হয়, তাঁকে অবশ্যই আরও বেশি প্রকাশ করা উচিত, আরও বেশি ভাষায় অনুবাদ হওয়া দরকার।
ঔপনিবেশিক সময় এবং যেভাবে ইতিহাস লেখা হয়েছে, সেই ইতিহাস কি ঠিক করে দিচ্ছে নারীবাদে কাদের কণ্ঠ মনে রাখা হবে এবং কাদের কণ্ঠ ভুলে যেতে হবে? এর মধ্যে রোকেয়া ঠিক কোথায় অবস্থান নিতে পারেন?
ইসাবেল এর্গেরা: অবশ্যই। এ রকম ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি তো রয়েছে। ঠিক করে দেওয়া হয়—কোনটা ‘ক্যানন’ (কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে স্বীকৃত, কর্তৃত্বশীল মানদণ্ড), কোনটা নয়। ঠিক যেমন গ্রিক সভ্যতা একসময় সৌন্দর্যের একটি নির্দিষ্ট ধারণা চাপিয়ে দিয়েছিল, যা আজও পশ্চিমা সৌন্দর্যবোধকে প্রভাবিত করে। আমরা ভারতীয় উপমহাদেশ, চীন বা লাতিন আমেরিকার নিজস্ব সৌন্দর্যবোধ বা নারীর চিন্তা সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানি না। আমাদের পাঠ্যবইয়েও দক্ষিণ এশিয়ার সমাজ-সংস্কৃতি গভীরভাবে আসে না। মানচিত্রে শুধু অবস্থান জানা যায়, এর বাইরে নয়। রোকেয়া ঠিক এই ‘ফাঁক’-এর মধ্যে পড়ে যান। এই ফাঁকেই তাঁর কণ্ঠস্বর দীর্ঘদিন চাপা পড়ে ছিল।
‘সুলতানার স্বপ্ন’ দক্ষিণ এশীয়, নাকি সর্বজনীন নারীবাদী লেখা?
ইসাবেল এর্গেরা: দুটিই। এটি একই সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় নারীবাদের অংশ এবং একটি সর্বজনীন নারীবাদী দলিল। এই অঞ্চলের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামোর মধ্যে আমি বড় হইনি বলে বইটির কিছু স্তর পুরোপুরি ধরতে পারিনি; কিন্তু বইটির একটি শক্তিশালী সর্বজনীন বার্তা রয়েছে—এটিই গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। ‘সুলতানার স্বপ্ন’ পৃথিবীর সব নারীর গল্প। গল্পটির মূল ভাব নিরাপত্তার বিষয়টি চলচ্চিত্রে মূল গুরুত্ব পেয়েছে। গল্পের লেডিল্যান্ড মূলত এই দিককে কেন্দ্র করেই দেখানো হয়েছে।
রোকেয়া তাঁর সময়ে রক্ষণশীল মানুষদের সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মৃত্যুর ৯৩ বছর পরও তিনি ওই গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। ওই গোষ্ঠী তাঁকে গালাগাল করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে, তার গ্রাফিতিতে কালি লেপে দেয়, তার ভাস্কর্য ভাঙে। আপনি নিশ্চয়ই এটি অবহিত আছেন। কীভাবে দেখছেন বিষয়গুলো?
ইসাবেল এর্গেরা: এটা খুব দুঃখজনক। রোকেয়া—যিনি মানবিকতা, দয়া ও সবার জন্য একটি সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে এত সহিংস প্রতিক্রিয়া কেন, আমি বুঝি না। রোকেয়াকে মুছে ফেলা অসম্ভব। তাঁর মুখ কালো করা হলে, স্মৃতি মুছে দিতে চাইলে—আমাদের কাজ হবে তাকে বারবার ফিরিয়ে আনা। রোকেয়াকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানিয়ে, রোকেয়াকে বারবার পড়িয়ে ফিরিয়ে আনতে হবে। যাতে আমরা প্রতিদিন তাঁর প্রজ্ঞা ও উত্তরাধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকি। আমি রোকেয়ার জন্মস্থান পায়রাবন্দ ঘুরে এসেছি। আমার ভালো লাগার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমি ব্যক্তিগতভাবে রোকেয়ার লেখা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছি। ২০১৬ সালে আমি নিজের প্রযোজনা সংস্থা চালু করি। এটার নাম দিয়েছি সুলতানা’স ফিল্ম।
বাংলাদেশের নারীরা এখনো রোকেয়ার লেখা থেকে উদ্ধৃতি দেন। জাতীয়ভাবে উদ্যাপন করা হয় রোকেয়া দিবস। আপনার চলচ্চিত্র কি নতুন প্রজন্মকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করেন?
ইসাবেল এর্গেরা: আমার চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হলে তা হবে আমার জন্য বড় প্রাপ্তি। গল্পটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যেন রোকেয়ার শিক্ষা পূর্ব ও পশ্চিম—দুই দিকেই পৌঁছায়। ১০০ বছর পরও তাঁর স্বপ্ন, তাঁর প্রশ্ন, তাঁর সাহস এখনো আমাদের নাড়া দেয়। আশা করি, চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশে মুক্তি পাবে। কারণ, বাংলাদেশে চলচ্চিত্রটির গ্রহণযোগ্যতা ছিল একেবারেই ভিন্ন রকমের।
ভিন্ন রকম বলতে?
ইসাবেল এর্গেরা: চলচ্চিত্রটি ভারতের মানুষও সাদরে গ্রহণ করেছে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ। ২০১২ সালে ভারতে যখন প্রথম কর্মশালা হয়েছিল, তখন অনেক মানুষই রোকেয়ার নাম জানতেন না। যদিও বইটি সেখানে প্রকাশিত হয়েছিল। কিছু মানুষ জানতেন; কিন্তু সবার কাছে তিনি এতটা পরিচিত ছিলেন না। বাংলাদেশের চিত্র একেবারেই আলাদা। চলচ্চিত্রটি প্রকাশের পর আমি বাংলাদেশ থেকে যা প্রতিক্রিয়া পেলাম, তা ‘সুনামি’।
বাংলাদেশে আসার আগে রোমে একটি ফুলের দোকানে গিয়েছিলাম, সেখানে কয়েকজন বাংলাদেশি কর্মী ছিলেন। আমি বললাম, আমি পরের সপ্তাহে বাংলাদেশে যাচ্ছি। রোকেয়ার গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র বানিয়েছি। দেখলাম, প্রত্যেকে রোকেয়াকে এত বেশি চেনেন! যদিও তাঁরা চলচ্চিত্রটি দেখেননি, আমাকেও চেনেন না; কিন্তু আমি রোকেয়াকে নিয়ে চলচ্চিত্র বানিয়েছি সেটি জেনে তাঁরা যে কী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন! এরপর মুঠোফোনের দোকানে গিয়েও একই চিত্র পেলাম। এ ঘটনাগুলো আমাকে খুব আপ্লুত করেছে। বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা ও আবেগ আমাকে অভিভূত করেছে। আপনাদের প্রতি আমার অসংখ্য কৃতজ্ঞতা।
রোকেয়ার গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য আপনার প্রতিও আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। অনেক ধন্যবাদ।
ইসাবেল এর্গেরা: আপনাকেও ধন্যবাদ।