Thank you for trying Sticky AMP!!

অচিরেই ধাক্কা খাবে সরকার: রিজভী

রুহুল কবির রিজভী। প্রথম আলো ফাইল ছবি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বিরোধী দল, মত ও বিশ্বাসের মানুষেরা সরকারি সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত। সরকার মনে হচ্ছে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগের দিন অন্ধকার রাতে ভোট ডাকাতি ও ভোট হরিলুটের মতো অপকর্মটির জন্য অচিরেই সরকারকে বিশাল রাজনৈতিক ধাক্কা খেতে হবে।

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, ৩০ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাজানো ডিজাইনে ভোট লোপাটের মহাধুমধাম এখন চলছে এই বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে। মহাভোজ উৎসবের মহাসমারোহ চলছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে থানার পুলিশ স্টেশনগুলোয়। এভাবে অন্যান্য বাহিনীর ইউনিটেও চলছে ভোজের মচ্ছব। যে দল ভোটে বিজয়ী হয়, সাধারণত তাদের কর্মীরাই উৎসব, ভোজ ইত্যাদিতে মেতে থাকে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একটি রাজনৈতিক দলের তথাকথিত বিজয়ে উৎসব উদ্‌যাপন করে, এটা শুধু নজিরবিহীন ও হাস্যকরই নয়, হতবাক করা বিস্ময়ও বটে। এটি গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে তামাশার বিকৃত প্রকাশ।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকার তথাকথিত হিংসা ও মহাজালিয়াতির নির্বাচনের বিনিময়ে দেশের মানুষের নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব করেছে। এখন সরকার দমননীতির উত্থান প্রবল থেকে প্রবলতর করছে। সারা দেশে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মীর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নেতা-কর্মীদের নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে শারীরিকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে, তাঁদের দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে এসে নিজ এলাকায় সমাজসেবা করতে গেলেও আক্রমণ চালানো হচ্ছে।

রিজভী বলেন, সারা দেশে বিরোধী দল, মত ও বিশ্বাসের মানুষেরা সরকারি সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত। সরকার মনে হচ্ছে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ৩০ ডিসেম্বরের আগের দিন অন্ধকার রাতে ভোট ডাকাতি ও ভোট হরিলুট সরকারের জন্য শুভবার্তা নয়। বরং এই অপকর্মের জন্য অচিরেই বিশাল রাজনৈতিক ধাক্কা খেতে হবে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারকে। জোর করে ক্ষমতায় থাকাটা এই ম্যান্ডেটহীন সরকারের জন্য হবে বিবিধ অমঙ্গলের উৎস।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কথার প্রসঙ্গ টেনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংলাপ ও পুনর্নির্বাচন প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্টের দাবি হাস্যকর। তাহলে আমি বলতে চাই, শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনটা কি খুবই সম্মানজনক হয়েছে? রাষ্ট্রের সব শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের দমন করে এ রকম ভোট–সন্ত্রাসের একতরফা নির্বাচনের পরেও কি এটা প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার? অথচ এত বড় নজিরবিহীন ভুয়া ভোটের নির্বাচনের পরেও আত্মমর্যাদাহীন আওয়ামী নেতারা নির্বাচন নিয়ে নির্লজ্জ গলাবাজি করছেন।’

একাদশ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশব্যাপী নারী-পুরুষ ভোটাররা ধিক্কার জানাচ্ছেন ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে। কারণ, তাঁরা কেন্দ্রে গিয়ে দেখেছেন তাঁদের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। আগের রাতে যেখানে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোট দিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাকে কি ভোট বলে? মহা ভোট ডাকাতির যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ সবার কাছে আছে। দেশ-বিদেশের গণমাধ্যম ও দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও ইতিমধ্যে ভোট ডাকাতির তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরছে। ভোটের আগের দিন রাত ও ভোটের দিনেই ভোট লুটের দৃশ্য দেখাতে পারতেন, কিন্তু গণমাধ্যম ছিল প্রচণ্ড হুমকির মুখে। তারপরও দেশ-বিদেশের বেশ কিছু গণমাধ্যমে ভোট ডাকাতির দৃশ্য দেখিয়েছে, ভোটের ডাকাতির কিছু দৃশ্য দেখাতে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে যমুনা টিভির প্রচার কেবল অপারেটর দিয়ে বন্ধ করা হয়েছিল। সুতরাং কেউই এই নির্বাচন মেনে নেয়নি। এ জন্য ওবায়দুল কাদের সাহেবরা কোনো সদুত্তর দিতে পারবেন না বলেই সংলাপে রাজি নয়। মহাডাকাতির ভোটের জবাব তাঁদের কাছে নেই।

বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, বিশ্বের দেশগুলোর গণতন্ত্রের তালিকায় নেই বাংলাদেশ। এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ)। বর্তমানে বাংলাদেশ পূর্ণ গণতন্ত্র বা ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের অবস্থানেও নেই। বাংলাদেশের অবস্থান স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলোর সমপর্যায়ে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্বাচনে বেশ অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে, যা নির্বাচনে সুষ্ঠুতা ও নিরপেক্ষতায় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে, বিরোধী দল ও প্রার্থীর ওপর সরকারি চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতি ত্রুটিপূর্ণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকেও বেশি খারাপ, বাংলাদেশে বর্তমানে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে, আইনের শাসন খুবই দুর্বল, সাংবাদিকেরা সব সময় হয়রানি ও চাপের মুখে থাকে এবং বিচারব্যবস্থাও স্বাধীন নয়।