Thank you for trying Sticky AMP!!

উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না: কাদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনসহ অন্যান্য ভবনে ভাঙচুর পরিদর্শন করার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ১০ এপ্রিল। ছবি: প্রথম আলো

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলায় যারা জড়িত, তাদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে জন্য এর বিচার করতেই হবে।

আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের এ মন্তব্য করেন। এ হামলার জড়িত ব্যক্তিদের ইতিমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে বলেও জানান কাদের।

ওবায়দুল কাদের বলেন, একাত্তরের অপারেশন সার্চলাইটের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক হত্যাযজ্ঞ ঘটেছে। অনেক শিক্ষক-ছাত্র-কর্মচারীর রক্তে ভেসে গেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বর। কিন্তু সেদিনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবন আক্রান্ত হয়নি। আজ স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর যে ঘটনা ঘটেছে। এটা একাত্তরের বর্বরতাকেও হার মানায়। কাদের বলেন, ‘শোয়ার কক্ষও রক্ষা পায়নি। সব তছনছ হয়ে গেছে। বাথরুমের কমোড পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভিসি সাহেবের পরিবারের সোনার গয়না লুট হয়েছে। বাড়ির আসবাবপত্র বাড়ির বাইরে নিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’

উপাচার্যের বাসভবনে হামলাকারীরা অনেকেই ইতিমধ্যে শনাক্ত হয়েছে বলেও জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে তদন্তের স্বার্থে কিছু বলা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা কেমন বর্বরতা! এই নারকীয় বর্বরতার সঙ্গে যারা জড়িত, কোনো অবস্থাতেই তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে অপরাধীরা চিহ্নিত হয়েছে, বাকিরাও চিহ্নিত হবে। এই বিচার করতেই হবে, যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে না পারে।

এ পর্যন্ত কতজন চিহ্নিত হয়েছেন এবং এরা কারা, জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘সেটা তো বলা যাবে না। তদন্তের স্বার্থে তা বলা যাবে না।’ তিনি বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে দেখে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং পরিকল্পিতভাবে যে হামলা চালানো হয়েছে তার প্রমাণ হলো, এখানে যে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ছিল, সেটা কিন্তু আগেভাগে বিকল করে দেওয়া হয়েছে। এটা কিন্তু পরিকল্পিত একটা হামলা, মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা বলেছি, কোটার সঙ্গে ভিসির সম্পর্ক কী? বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে কোটা সংস্কারের সঙ্গে কেন যুক্ত করা হলো। কারা যুক্ত করল, এই প্রশ্নের জবাব তাদের দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একজন নিরীহ মানুষ। তাঁর বাড়িতে তাঁর পরিবারের লোকজন এখন ট্রমার মধ্যে আছেন। তাঁরা বাগানে গিয়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেছেন। আল্লার অশেষ রহমত যে তাঁরা বেঁচে আছেন।

সমঝোতার পরও যারা আন্দোলনে থাকবে, তারা বিদ্বেষপ্রসূত রাজনীতি ঢোকাতে আন্দোলনে থাকবে বলেও দাবি করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের। তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলনে বেশির ভাগ ভূমিকা যাঁরা নিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু ইতিমধ্যে আমাদের সঙ্গে বসেছেন। তাঁরা বলেছেন, ৭ মে পর্যন্ত এই আন্দোলন স্থগিত রাখবেন। এর মধ্যে দেশের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন।’

সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, ‘আমি মনে করি, যারা সত্যিকার অর্থে কোটা সংস্কার করতে চান, এই সমঝোতার পর তাঁরা এখানে থাকবেন না। যাঁরা থাকবেন, তাঁরা এই আন্দোলনের সঙ্গে বিদ্বেষপ্রসূত রাজনীতি এখানে ঢোকাতে চান। যে রাজনীতির অন্ধ আক্রোশের স্বীকার হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এঁদের খতিয়ে দেখতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, তাঁরা কোটা চান, না এখানে দেশের রাজনীতিতে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান, ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চান, এটা খতিয়ে দেখতে হবে।

এ সময় ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

এক প্রশ্নের জবাবে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘তদন্ত একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আমরা ইতিমধ্যে অনেক প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। প্রমাণ সংগ্রহের কাজ অব্যাহত রয়েছে।’ ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ঘটনা ঘটার পরে চাক্ষুষ সাক্ষীর জবানবন্দি আমরা নিয়েছি। এটাতে শুধু সিসি টিভি খুলে নেয়নি, এখানে হার্ডডিস্কটাও খুলে নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও সিসি টিভি আছে, মিডিয়ার ফুটেজ আছে। আমরা অনেক প্রমাণ পেয়েছি।’

আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘এর আগেও ফেসবুকে যারা উসকানি দিয়েছে, এটা নিয়েও আমরা কাজ করছি।’

উপাচার্যের বাসভবন পরিদর্শনের সময় আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল হক শামীম, অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।