তর্কবিতর্ক কখন বন্ধ হবে, জানালেন আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
ফাইল ছবি।

বিএনপি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে গ্রহণ না করা পর্যন্ত তর্কবিতর্ক বন্ধ হবে না বলে সংসদে উল্লেখ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে তিনি বলেছেন, বিএনপি গ্রহণ করুক বা না করুক, তাতে কিছু যায়–আসে না। কারণ, বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা, বাঙালি জাতি সেটা জানে।

শনিবার জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নের আলোচনায় বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদের একটি বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিকে পাকিস্তানীকরণের যে উদ্দেশ্য বিএনপির ছিল সেটা ধুয়ে মুছে শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই বিতর্ক চলবেই।

সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে বিলের ওপর আলোচনায় সামরিক আমলের জারি করা আইনগুলো নতুন করে প্রণয়নের কারণ ও ইতিহাস (সামরিক শাসনের) তুলে ধরায় আপত্তি জানান হারুন। পরে আরেকটি বিলের আলোচনায়ও একই ধরনের মন্তব্য করেন তিনি। এ নিয়ে কয়েক দফা বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মধ্যে বিতর্ক হয়।

সংসদে গান্ধী আশ্রম (ট্রাস্টি বোর্ড) বিল ২০২১ আইনের আলোচনায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং এ হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি নিয়ে তর্কবিতর্ক বন্ধ করার দাবি জানান হারুন। তাঁর বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, যদি জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা হতেন, তাহলে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করলেন না কেন? তিনি বলেন, কোনো হত্যাকাণ্ড বা অপরাধ সংঘটিত হলে থানায় এজাহার দায়ের করা ব্যক্তির অধিকার। সে অধিকারটুকুও হরণ করা হয়েছিল।

এর আগে হারুনুর রশীদ বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীও প্রশ্ন রেখেছেন ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা কোথায় ছিলেন? তিনি বলেন, সে সময় সংসদ ছিল আওয়ামী লীগের, ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। একটি মারাত্মক ট্র্যাজেডি হলো। বঙ্গবন্ধুর মরদেহ দাফন না করে সংসদ বজায় রেখে তাঁরা শপথ নিয়েছিলেন। এটা নিয়ে তিনি আর কথা বাড়াতে চান না। প্রধানমন্ত্রী পরিবার হারিয়েছেন, তাঁর বেদনা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সেদিন কোথাও কেউ বিদ্রোহ করেনি।

হারুন বলেন, সত্যের মুখোমুখি হওয়ার সাহস তাঁদের আছে। তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করতে চান। কিন্তু ৪০–৫০ বছরের আগের ইতিহাস নিয়ে জাতিকে বিভক্ত করা ঠিক হবে না। যাঁর যাঁর প্রাপ্য সম্মান দেওয়া উচিত।

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তো এই সৎসাহস দেখিয়েছেন যে তিনি এটা প্রশ্ন করেছেন এবং তার মানে তিনি এটা কগনিজেন্সে (বিবেচনায়) নিয়েছেন। হারুনুর রশীদ বিএনপির ব্যাপারে যেটা বলছেন, সেটা যদি সত্য হতো, তাহলে তিনি খুশি হতেন।

আইন প্রণয়নের আলোচনার একপর্যায়ে হারুন বলেন, ‘সামরিক আমলের কিছু আইন রাখা, আর কিছু বাদ দেওয়াটা আইনের একটি অসংগতি। আওয়ামী মার্কা বিচারকেরা আপনাদের সন্তুষ্ট করার জন্য, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সন্তুষ্ট করার জন্য এ ধরনের রায় প্রদান করেছেন। আর পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করেছে।’

হারুন বলেন, তিনি সামরিক আইনের পক্ষে নন। সামরিক আইনের বিরোধিতা করে তিন জেল খেটেছেন। অবশ্যই সামরিক আইন সংবিধানসম্মত নয়।

হারুনের বক্তব্যের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল বলেন, হারুনুর রশীদ তাঁর আসল রূপ আজ বের করে দিয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে নির্মম হত্যাকাণ্ড তাঁরা ঘটিয়েছিলেন, ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ যে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স তাঁরা বানিয়েছিলেন, এটা নিয়ে তখন ওনারা কিছু বলেননি। সুপ্রিম কোর্টের ব্যাপারে এভাবে উক্তি করা দুঃখজনক। তিনি আদালত নিয়ে হারুনের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার জন্য স্পিকারের প্রতি অনুরোধ জানান। পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদকে জানান, হারুনুর রশীদের বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করা হবে।

এর আগে জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণ আইনের আলোচনায়ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে হারুনের বিতর্ক হয়। ওই বিলের আলোচনায় হারুন বলেন, আইনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনর্থক শব্দ বিভিন্ন সময়ে উত্থাপন করা হয়। তিনি প্রশ্ন রাখেন, সামরিক আইনের সময় যেসব আইন পাস হয়েছে, তার সবগুলো কি বিলুপ্ত করা হয়েছে? কিছু রাখছেন, কিছু বাতিল করছেন, আদালত থেকে কিন্তু রায় এভাবে দেয়নি।

জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘তিনি (হারুন) খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। উনি আমার কাছ থেকে বিনা পয়সার লিগ্যাল অ্যাডভাইস (আইনি পরামর্শ) নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কিছু কিছু আইনের ব্যাখ্যা দিতে গেলে ওনাকে লিগ্যাল অ্যাডভাইস দেওয়া হবে। আর এটা এই সংসদে ওনাকে ফ্রি দিয়ে দেব।’

আইনমন্ত্রী বলেন, এই আইন (সংসদীয় আসনের সীমানা) ৫০০ বছর পরও আইনের বইয়ে থেকে যাবে। ৫০০ বছর পরের প্রজন্ম এই আইন করার পরিপ্রেক্ষিত জানতে চাইবে। সে জন্য তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিহাসের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

বিল পাস

মহামারি, দৈব–দুর্বিপাক অথবা অন্য কোনো অনিবার্য কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বার কাউন্সিলের নির্বাচন করা না গেলে ১৫ সদস্যের অ্যাডহক কমিটির সুযোগ রেখে ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল প্রাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২১’ গতকাল সংসদে পাস হয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

এ ছাড়া নোয়াখালীতে স্থাপিত গান্ধী আশ্রমের পরিচালনায় পুরোনো আইন বাতিল করতে নতুন আইন করতে জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়েছে।