বিতর্কিত প্রার্থী চান না বড় দুই দলের নেতা-কর্মীরা

শামীম ওসমান, কাউসার আহম্মেদ, শাহ্ আলম, মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন
শামীম ওসমান, কাউসার আহম্মেদ, শাহ্ আলম, মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন

নারায়ণগঞ্জ জেলার ৫টি আসনের মধ্যে জনসংখ্যা ও ভোটার বেশি নারায়ণগঞ্জ–৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে। নানা কারণে আলোচিত আসনটি। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা–কর্মীর বক্তব্য, এই আসনে দলের নয়, রাজনীতির চর্চা হয় ওসমান পরিবারকেন্দ্রিক। এ কারণে দলের ক্ষতি হচ্ছে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে কোনো বিতর্কিত প্রার্থীকে মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি তাঁদের। অন্যদিকে বিএনপির নেতা–কর্মীরাও বির্তকিত কোনো ব্যক্তিকে মনোনয়ন না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন ৪ জন আর বিএনপির নিয়েছেন ৮ জন। তবে মাঠে সরব আছেন আওয়ামী লীগের ৩ জন ও বিএনপির ২ জন।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন (কুতুবপুর, ফতুল্লা, এনায়েতনগর, কাশিপুর ও বক্তাবলী) ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ১০ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে নারায়ণগঞ্জ–৪ আসন। মোট ভোটার ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৬৩৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৩ লাখ ৩০ হাজার ৬২১ জন, নারী ভোটার ৩ লাখ ২৩ হাজার ১৮। দুটি থানা এলাকা নিয়ে এই আসন হলেও কেবল ফতুল্লা অঞ্চলে ভোটার সংখ্যা সাড়ে ৪ লাখ। বিগত নির্বাচনগুলোতে এই থানায় বিএনপি বেশি ভোট পেয়েছে। ১৯৯১ ও ২০০১ সালে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হন। ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সারাহ বেগম কবরী ১ লাখ ৪১ হাজার ৭৫ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী শাহ্ আলম পান ১ লাখ ৩৮ হাজার ৬৮৬ ভোট। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়এ আসনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে এম শামীম ওসমান।

আওয়ামী লীগ

বর্তমান সাংসদ শামীম ওসমান এবারের নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কাউসার আহম্মেদ পলাশ, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হালিম সিকদার ও দলের নেতা কামাল মৃধা।

দলীয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শ্রমিক লীগের নেতা কাউসার আহম্মেদ পলাশের বাড়িতে যান। তাঁর বাড়িতে দলের সাধারণ সম্পাদকের আগমনকে তাঁর (কাউসার) জন্য ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখছেন ওসমান পরিবারবিরোধীরা।

দলীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা, সংসদীয় এলাকার রাস্তাঘাট বেহাল, ডিএনডির জলাবদ্ধতা, সন্ত্রাস ও বির্তকিত কর্মকাণ্ড, হকার
ইস্যুতে মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর হামলাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে শামীম ওসমান চাপে আছেন। তিনি মনোনয়ন পেলে এসব ইস্যু বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এ ছাড়া পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতির কারণে দলের নেতা-কর্মীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এখানে যাঁরা সুস্থ ধারার রাজনীতি করেন, তাঁদের কোণঠাসা করে রাখেন ওসমান পরিবারের বলয়ের লোকজন। তাই আগামী নির্বাচনে ওসমান পরিবারের বলয়ের বাইরের স্বচ্ছ ও যোগ্য ব্যক্তিকে প্রার্থী করার দাবি তাঁদের।

কাউসার আহম্মেদ বলেন, এখানে দলের সাংগঠনিক কাঠামো খুবই দুর্বল, দলের স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতির বেশি চর্চা হয়। এ ছাড়া এ আসনটি নিয়ে বিগত দিনে নানা আলোচনা–সমালোচনা আছে। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে বারবার বলা হয়েছে, বিতর্কিতরা এবার মনোনয়ন পাবে না। দলের উচ্চপর্যায় থেকে এবার বর্তমান সাংসদ ও মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

হালিম শিকদার বলেন, ‘অসুস্থ ধারা থেকে পরিবর্তনের জন্য, নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের জন্য, এলাকার মানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়নের জন্য, আমি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। সারা দেশে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও এ আসনের মানুষ অবহেলিত।’

বক্তব্য জানতে সাংসদ শামীম ওসমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

বিএনপি

এ আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোহাম্মদ শাহ্ আলম ও সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। শাহ্ আলম নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদ শাহ্‌ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বিএনপির তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। দলের তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা আমাকে ভালোবাসেন। আমি নেতা হিসেবে নয়, দলের নেতা-কর্মীদের পাশে থেকেছি পরিবারের সদস্যের মতো। দলের নেতা–কর্মীরা আমাকে চান। আমার বিশ্বাস, দল আমাকে মনোনয়ন দেবে এবং এ আসনের জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।’

এদিকে দলের অনেক নেতা-কর্মী বলেন, সাংসদ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে। জানতে চাইলে মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দল আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করব। না দিলে যাকে দেবে তার পক্ষে আমি ও আমার সহকর্মীরা কাজ করব।’

এ ছাড়া এ আসনে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ, জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল হাই, জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক রহুল আমিন সিকদার, জেলা বিএনপির সহসভাপতি পারভেজ আহমেদ, ফতুল্লা থানা বিএনপির সহসভাপতি মনিরুল আলম ও জেলা যুবদলের সভাপতি শহীদুল ইসলাম।