Thank you for trying Sticky AMP!!

'ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা উচিত'

জামিলুর রেজা চৌধুরী, আইনুন নিশাত, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

পিটিয়ে আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে হত্যার পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) সাংগঠনিক রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই দৃষ্টান্ত দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হলে শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ ধীরে ধীরে ফিরে আসবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদেরা। তাঁরা বলছেন, বুয়েট কর্তৃপক্ষের নেওয়া সিদ্ধান্তটি পর্যালোচনা করে কিছুদিনের জন্য হলেও সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা উচিত।

শিক্ষাবিদেরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্ররাজনীতি মোটেও ভালো কিছু দিচ্ছে না। নৃশংসতা, বর্বরতা, হানাহানি চলছে। অসুস্থ ছাত্ররাজনীতি শিক্ষাঙ্গনকে গ্রাস করে ফেলেছে। ছাত্ররাজনীতির নামে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্ম হচ্ছে। ভিন্নমতের ওপর অত্যাচার চালানো হচ্ছে। দেশের মানুষ হানাহানির ছাত্ররাজনীতি আর দেখতে চায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুক্তচিন্তার চর্চা হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে রাজনীতির নামে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে। এই অবস্থা দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ও বড় কলেজগুলোতে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা পরিণত হয়েছেন প্রতিপক্ষ দমনের পেটোয়া বাহিনীতে। শুধু প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাই নন, সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাঁদের প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন। রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলে বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরারকে পিটিয়ে হত্যার সাহস কেউ পেত না।
ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি না থাকলে শিক্ষার্থীরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারবেন না, এটা ভাবার অবকাশ নেই। সাম্প্রতিক সময়ে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষাবিদেরা বলছেন, ছাত্রনেতৃত্বের বিকাশ এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে ছাত্র সংসদ। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে এবং সেই নির্বাচনে দলীয় রাজনীতির প্রভাব না থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠবে।

জামিলুর রেজা চৌধুরী, জাতীয় অধ্যাপক
বুয়েটে শিক্ষক ও ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন জাতীয় অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী। গতকাল শুক্রবার রাতে মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় বুয়েটে শিক্ষার পরিবেশের উন্নতি হবে। এই সিদ্ধান্ত বুয়েটের সার্বিক উন্নয়নে সহায়তা করবে।
বুয়েটের মতো দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র ও শিক্ষকরাজনীতি না থাকাই ভালো বলে মনে করেন জামিলুর রেজা চৌধুরী। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গসংগঠন হিসেবে ছাত্ররাজনীতি ভালো কিছু বয়ে আনেনি। ভিন্নমতের কেউ কিছু বললেই অত্যাচার চালানো হয়, যার একটা উদাহরণ দেশের মানুষ পাঁচ দিন আগে আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেখেছে। তিনি বলেন, ছাত্রদের ওপর এমন অত্যাচারের ঘটনা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই ঘটছে। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গসংগঠন হিসেবে ছাত্র ও শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় একটা সার্বিক শিক্ষার পরিবেশের উন্নতি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন শিক্ষাকার্যক্রম আরও মজবুতভাবে পরিচালনা করা যাবে। তবে এই সবকিছুই আসলে নির্ভর করে রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলেই কেবল কার্যকর প্রতিফলনগুলো দেখা যাবে।

আইনুন নিশাত, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক
ছাত্রসংগঠনগুলো এখন যেসব কাজ করেছে, তা মোটেও ছাত্রসুলভ কোনো কাজ নয় বলে মনে করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, ছাত্রসংগঠনগুলোকে মূল দলের রাজনৈতিক নেতারা নিয়ন্ত্রণ করেন। ছাত্ররাজনীতির নামে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি চলে। এটি বন্ধ করতে হলে রাষ্ট্রের সক্রিয় সহযোগিতা দরকার।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে অস্থিরতা চলছে, তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়ী করেন অধ্যাপক আইনুন নিশাত। তিনি বলেন, ক্ষমতার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে শিক্ষকেরা শিক্ষকসুলভ আচরণ করছেন না। নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ছাত্রদের ব্যবহার করছেন। ছাত্ররাও সেখান থেকে বিভিন্ন ধরনের লাভের আশায় কাজগুলো করছেন। এর ফলে শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে।
আইনুন নিশাত বলেন, সাধারণভাবে শিক্ষার সব ক্ষেত্রে আগের অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে রাষ্ট্রের সম্মতি থাকতে হবে। আশা থাকবে, সরকারি দলসহ সব দল বিষয়টি ভালোভাবে পর্যালোচনা করে কিছুদিনের জন্য হলেও ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করবে। ছাত্ররাজনীতিতে সুস্থ পরিচালনা পদ্ধতি চালু হলে তখন ভেবে দেখা যেতে পারে। এ মুহূর্তে শুধু বুয়েট নয়, সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এটি বন্ধ করা উচিত। রাজনীতিবিদদের সহযোগিতা ছাড়া এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংগঠনের ক্ষমতা প্রদর্শনের রাজনীতি আর দেখতে চান না শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের রাজনীতিতে যে ধারা চলছে, তাতে ছাত্রসংগঠনগুলোকে মূল দলের অনুগত হতে হয়। এই ধারার ছাত্ররাজনীতিতে অব্যবস্থাপনা, দুর্বৃত্তায়ন, টেন্ডারবাজি, ক্ষমতাকে উপভোগ করার সব বিষয় চলে আসে। ক্ষমতা প্রদর্শন ছাত্ররাজনীতিকে নষ্ট করে দিয়েছে। এই ছাত্ররাজনীতিতে জনসেবার আদর্শ নেই। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকরাজনীতিও নিষিদ্ধ করতে হবে। শিক্ষকদের রাজনৈতিক অধিকার থাকবে। কিন্তু তাঁরা কোনো দলের অনুগামী হবেন না। জনমানুষের পক্ষে, শিক্ষাসহায়ক আদর্শিক রাজনীতি শিক্ষকেরা করবেন—এমনটাই সাধারণ মানুষের চাওয়া। যোগ্য মানুষকে উপাচার্য হতে হবে। শিক্ষকদের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকবে না। শিক্ষকরাজনীতি হতে হবে মতাদর্শভিত্তিক, আদর্শের—এটাই প্রত্যাশা করে জাতি।

আরও পড়ুন:
আবরার হত্যার বর্ণনা বন্ধুদের মুখে
এক আসামির ভয়ংকর বর্ণনা
আবরারকে হত্যার আগে-পরে মেসেঞ্জারে আসামিদের গোপন কথোপকথন
আবরার হত্যা: ভিডিও ফুটেজে যা দেখা গেল
আবরার হত্যার ১৯ আসামি বহিষ্কার, বুয়েটে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ
আবরার হত্যার ১৯ আসামি যাঁরা...
আবরার হত্যায় এজাহারভুক্ত আসামি মোয়াজ গ্রেপ্তার