রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।  রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

জুলাই সনদ চূড়ান্ত হতে আরও সময় লাগবে

সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার কারণে আটকে আছে জুলাই জাতীয় সনদ। এই দুটি বিষয় নিয়ে আগামী সপ্তাহে দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করার পরিকল্পনা আছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের।

এটি হবে দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের তৃতীয় পর্বের আলোচনা। এর মধ্য দিয়ে সনদ চূড়ান্ত রূপ পেতে পারে। তবে এটি চূড়ান্ত হতে আরও সময় লাগবে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। প্রথম ধাপে গঠন করা ছয়টি সংস্কার কমিশনের (সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন) সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সময়ে দুই পর্বের আলোচনায় ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ।

১৬ জুলাই এই সনদ সই করার প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষ না হওয়ায় সে লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হয়নি। এখন আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।

কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার আনা হবে, তাতে ঐকমত্য হলেও সংস্কার প্রস্তাবের বাস্তবায়ন ও জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়ার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা আছে। বিএনপির অবস্থান হলো আইনবিধি-সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে। আর সংবিধানসংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন করতে হবে আগামী জাতীয় সংসদে।

জামায়াতে ইসলামী চায় গণভোট বা রাষ্ট্রপতির প্রোক্লেমেশনের (ঘোষণা) মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন করা হোক। আর গণপরিষদ গঠন করে সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তারা গণপরিষদ ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একই সঙ্গে করার পক্ষে।

এর পাশাপাশি যে ৮৪টি প্রস্তাব নিয়ে জুলাই সনদ তৈরি হচ্ছে, তার কয়েকটিতে বিএনপিসহ কিছু কিছু দলের ভিন্নমত আছে। যেমন প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, উচ্চকক্ষে নির্বাচন পদ্ধতি, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পদ্ধতির মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) আছে। এগুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি কী হবে, সে প্রশ্নও এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

কমিশনের লক্ষ্য ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত করা।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সহসভাপতি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

অবশ্য সংস্কার বাস্তবায়ন পদ্ধতি কী হতে পারে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে একাধিক বৈঠক করেছে ঐকমত্য কমিশন। এখন পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে সংস্কার প্রশ্নে গণভোট দেওয়া, লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক, রাষ্ট্রপতির প্রোক্লেমেশনের মতো কয়েকটি বিকল্প পদ্ধতি আলোচনায় এসেছে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আরও আলোচনা হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনায় আসা মতগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।

অন্যদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদের যে সমন্বিত খসড়া তৈরি করেছে, তার অঙ্গীকারনামা অংশ নিয়েও দলগুলোর মতভিন্নতা আছে। বিশেষ করে বিএনপি জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপর স্থান দেওয়া, জুলাই সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না—এমন বিধান রাখার প্রস্তাবকে অযৌক্তিক বলে মনে করে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী মনে করে এমন বিধান রাখা প্রয়োজন। দলগুলো ইতিমধ্যে তাদের লিখিত মতামত কমিশনকে জমা দিয়েছে।

ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, জুলাই সনদের সমন্বিত খসড়া নিয়ে দলগুলোর মতামত পর্যালোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। আজ বুধবার এ বিষয়ে কমিশনের বৈঠক হওয়ার কথা। দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় পর্বের আলোচনায় সনদের অঙ্গীকারনামা, আইনি ভিত্তি দেওয়া এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হবে। তৃতীয় পর্বের আলোচনা দীর্ঘ সময় নিয়ে করতে চায় না কমিশন। ইতিমধ্যে দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হচ্ছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করা যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন। সনদের সমন্বিত খসড়া নিয়ে দলগুলোর মতামত কমিশন পর্যালোচনা করছে। দলগুলোর মতামত পর্যালোচনা ও সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে যেসব বিশেষজ্ঞ মতামত পাওয়া গেছে, সেটা বিবেচনায় রেখে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য যোগাযোগ করা হবে। কমিশনের লক্ষ্য ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত করা।