রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে

সংসদের উচ্চকক্ষ: মতৈক্য না হওয়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার এখন কমিশনের ওপর

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়। দীর্ঘ এ আলোচনায় দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ থাকার বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও এর নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে মতৈক্য হয়নি। ফলে রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার কমিশনের ওপর অর্পণ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের ১৪তম দিনের আলোচনা শেষে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ এ কথা জানান।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের আলোচনায় উচ্চকক্ষের বিষয়ে আগেও বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ও জোট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনে সমর্থন জানিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনাতেও সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছ থেকে একই মতামত পাওয়া যায়।

আজকের আলোচনায় দুইভাবে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, কেউ কেউ বলছেন, ভোটের সংখ্যানুপাতে যেন উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করা হয়। অন্যদিকে নিম্নকক্ষে পাওয়া আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবও আছে। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দল ও জোটগুলো এ বিষয়ে কোনো ঐকমত্যে আসতে পারছে না। তাই একাধিক দিন ধরে উচ্চকক্ষের বিষয়ে আলোচনার পর আজ রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার কমিশনের ওপর অর্পণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে আগামী দিনগুলোতে ঐকমত্য কমিশন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে বলে জানান অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে অনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখব। কমিশন জোর দিয়ে মনে করে, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তে আমাদের আসতে হবে। আমরা দ্রুত আলাপ-আলোচনা করে আগামী সপ্তাহের গোড়ার দিকে আমাদের অবস্থান বলতে পারব বলে মনে করি।’

তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা পরিবর্তনে লাগবে গণভোট

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আজ তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। তিনটি বিষয়ের মধ্যে ছিল দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, সংবিধান সংশোধন এবং সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব। প্রথম দুটি বিষয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে।

সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, যদি উচ্চকক্ষ গঠিত না হয় বা উচ্চকক্ষ হওয়া পর্যন্ত সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হবে। তবে সুনির্দিষ্ট কিছু অনুচ্ছেদ যেমন প্রস্তাবনা, রাষ্ট্রের মূলনীতি, অনুচ্ছেদ ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ৫৮খ, ৫৮গ, ৫৮ঘ এবং ৫৮ঙ অনুচ্ছেদের ধারা সংবিধানে যুক্ত হলে তা সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের প্রয়োজন হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, বিদ্যমান সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অন্তর্ভুক্তির পর ভবিষ্যতে এ ব্যবস্থা বাতিল বা সংশোধনের প্রয়োজন হলে গণভোটের প্রয়োজন হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনোরকম মতভিন্নতা নেই বলে এ ব্যবস্থা পরিবর্তনে গণভোটের কথা বলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামী সপ্তাহে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান কীভাবে নিয়োগ করা হবে, সেটার নিষ্পত্তি করতে পারব।’

আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।