ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলন। ৬ আগস্ট
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলন। ৬ আগস্ট

এই ঝুঁকিতে কেন নির্বাচনে যাব, প্রশ্ন রেজাউল করীমের

এখনো ভোটের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি বলে মন্তব্য করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম। তিনি বলেন ‘আমাদের নির্বাচনে যাওয়া কঠিন হবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসন যথাযথ ফাংশন করছে না এবং বর্তমান সরকার প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সেখানে এই অবস্থায় নির্বাচন করতে গেলে প্রার্থীদের নিরাপত্তার ঝুঁকি থেকে যায়, এই ঝুঁকিতে কেন নির্বাচনে যাব, সেই প্রশ্ন আপনাদের কাছে রাখলাম।’

আজ বুধবার রাজধানীর পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ এবং প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে দলটির অবস্থান-প্রতিক্রিয়া জানাতে এক সংবাদ সম্মেলন করে দলটি। সেখানে সৈয়দ রেজাউল করীম এ কথা বলেন।

সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচন না হলে, ইসলামী আন্দোলন নির্বাচন অংশগ্রহণ করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘পিআর আমাদের দাবি। এর মাধ্যমে কালোটাকার দৌরাত্ম্য কমবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হবে। কিন্তু বিএনপি এককভাবে ক্ষমতায় যেতে চায় বলে, পিআর নিয়ে শিষ্টাচারবহির্ভূত কথাবার্তা বলে।’

নির্বাচনের আগে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা দলগুলোর সঙ্গে দৃশ্যমান কোনো ঐক্য হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘যারা ইসলামপ্রেমী বা দেশপ্রেমী তাদের সাথে নির্বাচনী জোট বা সমঝোতা হওয়ার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে।’

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ‘এই ঘোষণাপত্রের বিষয়বস্তু আমাদের আগে জানানো হয়নি। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল ঘোষণার আগে আমাদের মতামত না নিয়ে উপস্থিত রেখে সমর্থন নেওয়া হয়েছে, যা ছিল আমাদের জন্য বিব্রতকর। তারপরও প্রত্যাশিত দিনে ঘোষণাপত্র পঠিত হয়েছে, এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধন্যবাদ জানাই। তবে এ ঘোষণাপত্রে ১৯৭১, ১৯৭৫ এবং ১৯৯০ সালের আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হলেও স্বাধীনতার প্রথম অধ্যায় ১৯৪৭, শাপলা চত্বরের ঘটনা, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও আলেম-ওলামাদের ওপর নির্যাতনের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এতে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় বাদ পড়েছে। একই সঙ্গে ঘোষণাপত্রে ফ্যাসিবাদের দোসর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শক্তির কথাও উপেক্ষা করা হয়েছে, যা ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিতে পারে।’

প্রধান উপদেষ্টার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ প্রসঙ্গে মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম বলেন, ভাষণটি আবেগময় ও সুলিখিত হলেও বাস্তব সমস্যাগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সাফল্যের কথা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বাস্তবতা, জনগণের উদ্বেগ কিংবা নির্বাচনের উপযোগী পরিবেশ নিয়ে কোনো সুস্পষ্ট বার্তা নেই।

মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম আরও বলেন, ‘জুলাই সনদ এখনো আইনি ভিত্তি পায়নি। সংস্কারের রূপরেখা নির্ধারিত হয়নি। এই সংস্কারকে পরবর্তী সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়ে গোটা প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করে রাখা হয়েছে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, অধ্যাদেশ জারি বা গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি তৈরি করতে হবে এবং ওই সনদের ভিত্তিতেই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।’

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে অনেক সাফল্যের কথা থাকলেও পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই বলে মনে করেন মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে কর্মসংস্থান তৈরি এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আশাব্যঞ্জক কোনো কথা ছিল না। এসব বিষয়ে সরকারকে আরও মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করীম, মহাসচিব ইউনূস আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকনসহ প্রমুখ।