রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে আজ শনিবার জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে আজ শনিবার জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, মানুষ বিশ্বাস করছে না: আনিসুল ইসলাম

অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বললেও তা মানুষ বিশ্বাস করছে না বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির (একাংশ) চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

আনিসুল ইসলাম বলেছেন, ‘সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টারা বারবার বলছেন ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হবে। তাঁরা দাবি করছেন, এই নির্বাচন হবে স্মরণকালের সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু। কিন্তু বাস্তবে দেশের সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাস করছে না।’

শনিবার রাজধানীর গুলশানের হাওলাদার টাওয়ারে জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

বিভিন্ন বৈঠকে গিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কথা শুনতে পাওয়ার কথা জানিয়ে আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘সেখানে রাজনীতিবিদসহ সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা প্রশ্ন করেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে কি না? আমি বলি, আপনাদের প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর আছে। এই প্রশ্নের মধ্য দিয়েই বোঝা যায়, আপনারা নিজেরাও সংশয়ে আছেন। শুধু আপনারা নন, দেশের সাধারণ মানুষও আজ একই প্রশ্ন করছে। অর্থাৎ তারাও বিশ্বাস করে না ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে।’

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বারবার বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতেই হবে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন এবং তা হবে ইতিহাসের ‘সেরা ভোট’।

তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করে আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে সরকারের উপদেষ্টারা একদিকে বলছেন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, অন্যদিকে সরকারের তথ্য উপদেষ্টা (মাহফুজ আলম) বলছেন প্রশাসনের সব পদ বিএনপি-জামায়াত ভাগাভাগি করে নিয়েছে। তাহলে এমন প্রশাসন দিয়ে কীভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। এটা একজন শিশুও বিশ্বাস করবে না।’

দেশে এখন ‘মব সন্ত্রাস’ চলছে দাবি করে আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকে মব সন্ত্রাসের ভয়ে সত্য কথা বলছে না। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও হত্যাকাণ্ড ঘটছে। পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় লাশ উদ্ধার করছে, মানুষকে জবাই করে হত্যা করা হচ্ছে, প্রকাশ্যে গুলি চালানো হচ্ছে। এই ভয়াবহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলা হাস্যকর।’

সংবিধানসহ প্রাতিষ্ঠানিক নানা সংস্কারে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় ডাক না পাওয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘গায়ের জোরে সংবিধান পরিবর্তনের চিন্তা করবেন না। আগামী ১০ বছর পর হয়তো বলা হবে, যারা সংবিধান পরিবর্তন করেছিল, তারা অপরাধী, তাদের বিচার করতে হবে। সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে নির্বাচিত পার্লামেন্ট দরকার। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পরও সংবিধান পরিবর্তন করা যেত, কিন্তু সেটা করা হয়নি। সাংবিধানিকভাবে শপথ নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হচ্ছে—তাই এখন সংবিধান পরিবর্তনের কথা ভাবা ঠিক হবে না।’

সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখেছিল। অসংখ্য মানুষ জীবন দিয়েছে। কিন্তু ১৪ মাস পরও সেই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন এসেছে কি না, তা এখন সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন হয়ে ঘুরছে।’

জাতীয় যুব সংহতির আহ্বায়ক ফখরুল আহসান শাহজাদার সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক এম এম আল জুবায়েরের পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, নির্বাহী চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন, সাহিদুর রহমান, লিয়াকত হোসেন, জহিরুল ইসলাম, মোস্তফা আল মাহমুদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান, নাজমা আকতার, আরিফুর রহমান খান, জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া, নূরুল ইসলাম মিলন ও বেলাল হোসেন।