ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব

প্রধানমন্ত্রীর দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা হওয়া উচিত নয়: এনসিপি

একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান ও সংসদ নেতা থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। তিনি বলেছেন, ‘একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা (লিডার অব দ্য হাউস) হওয়ায় দেশে বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না—আমরা এই প্রথার অবসান চাই।’

আজ শনিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের ১৫তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন আরিফুল ইসলাম।

এনসিপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে না ওঠার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে এক ব্যক্তি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ অলংকৃত করে থাকেন। এতে দলীয় আদর্শ রাষ্ট্রের কাঠামোতেও প্রভাব ফেলে এবং দলীয় আনুগত্য বিচার বিভাগসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানেও প্রবেশ করে। একই ব্যক্তি যখন দলের প্রধান, সরকারের প্রধান এবং সংসদের নেতা হন, তখন দলে আর কাউকে নেতৃত্বের সুযোগ দেওয়া হয় না।’

দলগুলোর মধ্যে এই চর্চা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আরিফুল বলেন, ‘এই প্রবণতা বন্ধ না হলে বিকল্প নেতৃত্ব গঠিত হবে না। আমাদের প্রস্তাব, প্রধানমন্ত্রী, দলীয় প্রধান এবং সংসদ নেতা—এই তিনটি পদে আলাদা ব্যক্তি থাকা উচিত। যদি কেউ প্রধানমন্ত্রী হন, তবে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব অন্য কাউকে দিতে হবে।’

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের উদাহরণ টেনে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘সেখানে প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তন হয় নিয়মিত, বিকল্প তৈরি হয়। কিন্তু আমাদের দেশে বলা হয়, শেখ হাসিনার বিকল্প নেই, খালেদা জিয়ার বিকল্প নেই, কিংবা এখন বলা হয়, ‘তারেক রহমান ছাড়া চলবে না। এ সংস্কৃতি ভাঙতেই আমাদের এই প্রস্তাব।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে প্রস্তাব

আলোচনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয় নিয়েও বিস্তারিত মতামত দেন নাগরিক পার্টির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রায় দুই মাস আগেই শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি রূপরেখা জমা দিয়েছিলাম। সেখানে বলা হয়েছিল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বাছাইয়ের জন্য একটি ৫-৭ সদস্য বা ১১ সদস্যের কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটি সরকারি দল, বিরোধী দল এবং সংসদে তৃতীয় অবস্থানে থাকা দলের কাছ থেকে নাম সংগ্রহ করবে।’ পরবর্তী সময়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিও অনুরূপ প্রস্তাব দেয়। ঐকমত্য কমিশন চার দলের প্রস্তাব মিলিয়ে একটি সম্মিলিত খসড়া প্রণয়ন করেছে বলে জানান তিনি।

প্রস্তাবিত খসড়া অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি মিলে পাঁচ সদস্যের বাছাই কমিটি গঠিত হবে। সরকার ও বিরোধী দল তিনজন করে এবং তৃতীয় দল দুজনের নাম প্রস্তাব করবে। এই আটজনের মধ্য থেকে ভোটিংয়ের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা চূড়ান্ত করা হবে।

আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বিচার বিভাগকে এই প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণ বাইরে রাখার পক্ষে। অতীতে বিচার বিভাগ রাজনীতিকরণ হয়েছে, তাই অধিকাংশ দলই চায় না এই প্রক্রিয়ায় বিচারক বা বিচার বিভাগীয় ব্যক্তিদের যুক্ত করা হোক।’

বিচারপতি নিয়োগে দলীয়করণ নিয়ে উদ্বেগ

বিচারপতি নিয়োগ প্রসঙ্গে এনসিপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, অতীতে যাঁরা আওয়ামী লীগপন্থী ফ্যাসিস্ট আইনজীবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন, তাঁদের হাইকোর্টে নিয়োগ দেওয়ার যে আলোচনা চলছে, তা বন্ধ করা উচিত। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পরও যেন দলীয়করণ অব্যাহত না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।’

আরিফুল দাবি করেন, ‘নিরপেক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিদেরই যেন হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়—এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করা দরকার, যেখানে রাজনৈতিক পক্ষপাতের সুযোগ থাকবে না।...আশা করি, রাজনৈতিক দলগুলো ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে।’

আজকের আলোচনায় ছিল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।