হাদিকে গুলির নিন্দা–প্রতিবাদ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় উদ্বেগ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। তারা বলছে, ওসমান হাদির ওপর সশস্ত্র হামলা গণতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা ও নাগরিক নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত।

আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে ও নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এসব মন্তব্য করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা। এ ছাড়া নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কয়েকটি দলের নেতারা।

এর আগে দুপুরে রাজধানীর বিজয় নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় ওসমান হাদিকে গুলি করে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হাদিকে ‘লাইফ সাপোর্ট’ দেওয়া হয়েছে।

সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লন্ডন থেকে ঢাকায় একটি অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, দেশ এখন অত্যন্ত সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী প্রতিটি দল ও ব্যক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামীকাল শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।

ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা মতভিন্নতার কারণে এ ধরনের সহিংসতা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।’ এ ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেন শফিকুর রহমান।

এদিকে বিকেল পাঁচটার দিকে ওসমান হাদিকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান শফিকুর রহমান। সেখানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কেউ যদি আবার বাংলাদেশে নতুন করে ফ্যাসিজম বা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চান, তাহলে খুব দেরি হবে না যথাযথ জবাব পেতে। জনগণ সব ষড়যন্ত্র রুখে দেবে।

ওসমান হাদির ওপর গুলি চালানোর তীব্র প্রতিবাদ, হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। এক বিবৃতিতে দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনা অত্যন্ত আতঙ্কজনক।

অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে গণসংহতি আন্দোলনের নেতারা বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যেখানে সরকারের সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার কথা, সেখানে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো সম্ভব হচ্ছে। সরকার ও পুলিশ প্রশাসনকে এর জন্য জবাব দিতে হবে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এনসিপি বলেছে, ‘এ হামলা শুধু একজন প্রার্থীর ওপর নয়, গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার হওয়া গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার ওপরও সরাসরি আঘাত।’

ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ওসমান হাদির ওপর হামলার আগে প্রকাশ্যে হুমকি দিলেও সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি বলেও অভিযোগ করেছে এনসিপি। দলটি বলেছে, দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়েছে, সশস্ত্র গোষ্ঠী গড়ে তুলেছে। তাদের অবশিষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনী এখনো সক্রিয়ভাবে দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনা নির্বাচনের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলটি গুলিবর্ষণকারী ও হুকুমদাতাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে।

এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান। ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং তাঁর চিকিৎসার বিষয়ে খোঁজখবর রাখছেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ কারা হয়।

ওসমান হাদির ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালানোর ঘটনাকে সন্ত্রাসী অপতৎপরতার নগ্ন দৃষ্টান্ত আখ্যা দিয়ে কঠোর ভাষায় এর নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ জাসদ। এক যৌথ বিবৃতিতে দলটির সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া ও সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর একজন প্রার্থীকে লক্ষ্য করে এমন সশস্ত্র হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটি নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করার জন্য পরিকল্পিত ও সুসংগঠিত ষড়যন্ত্রের অংশ।’ তারা বলেন, নির্বাচনকে আতঙ্কিত ও নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে নেওয়ার জন্যই এই হামলা চালানো হয়েছে—এটি স্পষ্ট।

ওসমান হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি। এক বিবৃতিতে দলটির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, রাজনৈতিক ভিন্নমত দমনে গুলি, হামলা ও সন্ত্রাস কোনো সভ্য দেশে বরদাশতযোগ্য নয়। ওসমান হাদির ওপর সশস্ত্র হামলা গণতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা ও নাগরিক নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত।

নেতৃদ্বয় ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনা করে আরও বলেন, এই হামলা প্রমাণ করে দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি চরমভাবে নাজুক। নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারবে কি না, তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন থেকে যায়।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনা নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া এবং প্রার্থীদের নিরাপত্তা প্রশ্নে আশঙ্কার সৃষ্টি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম। এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।

ফ্যাসিস্টদের দেশি-বিদেশি দোসররাও আগামী নির্বাচন হতে দিতে চায় না মন্তব্য করে সাদিক কায়েম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, অতিসত্বর এই গুলিকারীকে চিহ্নিত করতে হবে। একই সঙ্গে এ ঘটনার পেছনের রাজনৈতিক মোটিভ উদ্ঘাটন করে জাতিকে জানাতে হবে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এক বিবৃতিতে সিপিবির সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন বলেছেন, ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার কোনো চক্রান্তের অংশ কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে।

ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে আলী আহমেদ চুনকা পৌর মিলনায়তনে এক কর্মী সমাবেশে তিনি বলেন, এ গুলিবর্ষণের ঘটনা গুরুতর অশনিসংকেত। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ও গণভোটকে ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না।

অনতিবিলম্বে হাদির ওপর হামলাকারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানান সাইফুল হক। তিনি এসব সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলারও আহ্বান জানিয়েছেন।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল। এক বিবৃতিতে দলটির সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, এ হামলা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির গভীর চক্রান্তের অংশ।

ওসমান হাদির ওপর প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। একই সঙ্গে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ দাবি করেছে সংগঠনটি।

ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা ও সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভ বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই একজন প্রার্থীর ওপর হামলা দেশের ভঙ্গুর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।’ তাঁরা বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে “আলু-মাংসের অনুপাত নির্ণয়” করতে ব্যস্ত। এমন অথর্ব স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অবিলম্বে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করতে হবে।’

ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল। এক বিবৃতিতে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. মোর্শেদ হাসান খান এবং যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুস সালাম ও অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার বলেন, এর পেছনে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের কোনো চক্রান্ত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দাবি রাখে।

এ ছাড়া ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী। পৃথক বিবৃতিতে এ হামলার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সংগঠন দুটি।